রাত পেরলেই মাধ্যমিকের রেজাল্ট, গত বছর করোনা মহামারীর প্রকোপ সামলে এবছর অফলাইন মাধ্যমেই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। মানা হয়েছিল যথেষ্ট পরিমাণে সুরক্ষা ব্যবস্থা। তবে এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের দু-বছর শিক্ষাঙ্গনের বাইরেই কেটেছে। তাঁরা বেশিরভাগ সময় ক্লাস করেছে অনলাইন মাধ্যমে। জীবনের বড় পরীক্ষার পড়ে পড়ুয়াদের মধ্যে ভয় লাগা খুব স্বাভাবিক, তবে নিজেকে শান্ত রাখতে হবে। চেষ্টা করতে হবে যেন, মন মানসিক সুস্থ থাকে, কীভাবে?
ছোটরা এমনিতেই বিগত দুই বছরে মানসিক চাপের শিকার। তাঁরা বেশিরভাগই ঘরে আবদ্ধ থাকতে থাকতেই যেন মানসিক ভাবে ত্রস্ত হয়ে পড়েছে, ওদের কথা বলার ক্ষমতা সবথেকে বড় কথা ছোট ছোট জিনিসে ভয় পাওয়ার, ভুল করার প্রবণতার কথা আগেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কালকের দিনটি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এবং পরিবারের সকলের কাছেই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
শিশু মনোবিদ দেবজিতা মজুমদার বলছেন, "যা ঘটার তা তো ঘটেই গেছে। পরীক্ষা অনেকদিন শেষ হয়েছে। সুতরাং আর চিন্তা করে লাভ নেই। হ্যাঁ যেহেতু জীবনের বড় পরীক্ষা তাই সুপ্ত ভয় অবশ্যই কাজ করে। যেটা করতে হবে, শুধু পরীক্ষার্থীদের নয় বরং বাবা মায়ের সাপোর্ট রাখা দরকার। আসলে অভিভাবকের কাছ থেকেই সবথেকে বেশি চাপ আসে। ওনারাই ভীতি সৃষ্টি করেন যে, এটা ভাল না হলে মুশকিল। ওটায় নম্বর কম হলে ভবিষ্যতে কিছু হবে না - এই ধরনের কথাবার্তা বন্ধ করা উচিত। দুটো বছর ওরা স্কুল থেকে দূরে ছিল, এমনিতেও মানসিক ভাবে বিদ্ধস্ত তাই ওদের পাশে থাকতে হবে। ওদের ওপর যেন চাপ না আসে। ওদের আজ থেকেই ভয় পাওয়ানো, ত্রাস সৃষ্টি করা এগুলো চলবে না। যা করতে ভাল লাগে, বই পড়া কিংবা ওদের নিয়ে ঘুরতে যান।তাই এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। সামনে যেহেতু একাদশ-দ্বাদশ আরও কঠিন। তাই কোনও পরোয়া না করে ওরা এগিয়ে গেলেই ভাল"।
আরও পড়ুন < কবে প্রকাশিত হবে মাধ্যমিকের ফল? দিন ঘোষণা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের >
বোর্ড পরীক্ষা আপাতভাবেই একটি আতঙ্ক। অন্তত এমনটাই মনে করেন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ইশান্ত রানা। তাঁর বক্তব্য, "পড়াশোনা ভীষণ হেলদি হওয়া উচিত। অত্যধিক চাপ কিন্তু বাচ্চাদের জন্য খুব খারাপ। ওরা শুধু সাময়িক ভাবে নয়, যদি মানসিক ভাবে আঘাত পেতে শুরু করে, তবে পরবর্তীতেও কাজের কাজ কিছুই হবে না। পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে বেশি ভেবে লাভ নেই। বরং ওদের সঙ্গে থাকুন। ভয় নয় বরং পরিস্থিতি ওভারকাম করতে হবে। আর স্ট্রেস কমাতে ওদের ভালমন্দ রান্না করে দিতে পারেন, এটা কিন্তু একটা সাইকোলজিক্যাল অভ্যাস- চাপ বেশি থাকলেই অনেকে খেতে পছন্দ করে।
তিনি আরও বলেন, "রং ক্যানভাস খুব ভাল স্ট্রেস দূরে করতে পারে। কিছু গেম খেলতে পারে, এবং যেদিন রেজাল্ট সেদিন সকাল থেকে ফ্রি থাকতে হবে। নির্দিষ্ট সেই সময়ে ভয় লাগা খুব স্বাভাবিক, তবে সেটা বেশি মাত্রায় হলেই শরীর ভীষণ খারাপ হবে। খুব মনসংযোগ পূর্ণ খেলা কিংবা অনেকক্ষণ সময় ব্যয় হয় এমন কিছু কাজে আসতে পারে। যদি একান্তই কোনও শিশু টেনশনের রোগী হয়, তবে মেডিটেশন করান"।
তাদের দুজনেরই একমত, যে যা ঘটে গেছে সেই নিয়ে বেশি ভাবনা চিন্তা করলে আরও মুশকিল। সেটিকে বাদ দিয়ে বরং ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য করে এগিয়ে যেতে হবে। সামনের সময় আরও কঠিন, অতীতকে আঁকড়ে ধরলে আরও শরীরের ওপর চাপ।