একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় রাজ্য। এই অবস্থায় আরও এক দুর্নীতির খবর এল প্রকাশ্যে। যা ঘিরে অস্বস্তিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ঘিরে তুঙ্গে চর্চা। মিড ডে মিলের খরচ বাড়িয়ে দেখানোর অভিযোগ উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেশ।
প্রধানমন্ত্রী পোষণ যোজনায় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। ১৬ কোটি মিড ডে মিল কম দিয়ে ১০০ কোটি টাকা বেশি খরচ দেখানো হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় রিপোর্টে। চলতি বছর জানুয়ারিকে জয়েন্ট রিভিউ মিশন গঠন করেছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক। সেই মিশনের রিপোর্টে উল্লেখ, গত বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় প্রশাসন মিড ডে মিল খাতে অত্যাধিক ব্যয় দেখিয়েছে।
এই প্রকল্পে অগ্নিকাণ্ডে আহতদের চিকিৎসা, খাদ্যপণ্য়ের অসম বণ্টন, ভাত-ডাল এবং সবজি রান্নার ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ কম খরচ করা হয়েছে। আর প্রকল্পের টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকী মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানতে পেরেছে, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এই বেনিয়মের জেরে। যে পরিমান খাবার তৈরি করা হয়েছে এবং যা হিসাব দেখানো হয়েছে তার মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। তা নিয়ে রাজ্য সরকারকে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে মন্ত্রক। গত ২৪ মার্চ চিঠি দিয়ে রাজ্যকে বেনিয়মের কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। গত ৩০ মার্চ কেন্দ্রের প্রশ্নের জবাব দিয়েছে রাজ্য। তাতে স্থানীয় পরিচালককে কেন্দ্রের অভিযোগের সরেজমিনে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় মিশনের প্রতিনিধিরা খোঁজখবর করে যান। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন সিলেবাসের আমুল রদবদল! সংঘ, মহাত্মা গান্ধী, গডসে সম্পর্কিত তথ্য স্থান পায়নি NCERT-এর নতুন বইয়ে
রিপোর্টে উল্লেখ, যে সংখ্যক শিশুকে মিড ডে মিল সরবরাহ করা হয়েছে এবং যে সংখ্যা রাজ্যের রিপোর্টে দেখানো হয়েছে তাতে বিস্তর গড়মিল। জেলাস্তরে লগবুকে খতিয়ান সব থাকে। সেগুলি খতিয়ে দেখে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় মিশন। রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৪০.২৫ কোটি মিল প্রধানমন্ত্রী পোষণ যোজনায় বণ্টন করা হয়েছে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে। কিন্তু রাজ্যকে জেলাস্তরে পাঠানো রিপোর্টে সেই সংখ্যা ১২৪.২২ কোটি।
অর্থাৎ ১৬ কোটি মিল বেশি দেখানো হয়েছে কেন্দ্রকে পেশ করা রাজ্যের রিপোর্টে। যার খরচ ১০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং স্কুলশিক্ষা সচিব মণীশ জৈনের কাছে এই অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হয় ফোন এবং মেসেজে। তাঁরা কোনও উত্তর দেননি। এমনকী রাজ্যের প্রতিনিধির স্বাক্ষর ছাড়াই শিক্ষা দফতর এই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২-২৩ সালে কেন্দ্রীয় পোষণ প্রকল্পে প্রি-প্রাইমারি, প্রাইমারি এবং আপার প্রাইমারি মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২,২৫৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে ১,৪৩৪ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র এবং ৮২৪ কোটি দিয়েছে রাজ্য সরকার। ৬০:৪০ অনুপাতে ভাগ হয় খরচ।