Lok Sabha Election 2019: ১৯৯৮ ও ১৯৯৯। পর পর দুবার। ঘোর সিপিএমের রাজত্বে দমদম থেকে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী তপন সিকদার জয়ী হয়েছিলেন দেড় লক্ষের কাছাকাছি ব্যবধানে। দুবারই কিন্তু বিজেপি ভোট পেয়েছিল ৫০ শতাংশের ওপর। এই জয়ের পর তোলপাড় হয়েছিল সিপিএমের অন্দরমহল। সিপিএমের তাবড় নেতৃত্বের নাম নিয়ে আলোচনা, বিস্তর চর্চা হয়েছিল। আজও দমদমে তপন সিকদারের জয় রাজ্য রাজনীতি নিয়ে আলোচনায় স্থান পায়। কিন্তু এবারের নির্বাচনে বিজেপির কৌশল কী? সেটাই আপাতত মূল আলোচ্য বিষয়।
তৃণমূল নেতৃত্বে ভাঙন ধরানোই যে বিজেপির লক্ষ্য, তা বহুদিন ধরেই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। একইসঙ্গে কি এরাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল পেতে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্তর্ঘাত উস্কে দিতে সচেষ্ট বিজেপি? অভিজ্ঞ মহলের মতে, যেভাবে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ পদ্মশিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন অথচ প্রকাশ্য আলোচনায় তৃণমূলেই থাকছেন, তাতে এই ধারণা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আরও পড়ুন: বিজেপির পাল্টা! তৃণমূলে সিং পরিবারের দুই সদস্য
সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিটি সাংগঠনিক সভায় দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলে গেরুয়াপন্থীদের নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, যাঁরা বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তাঁরা দল ছেড়ে দিন। তিনি সব খবর রাখবেন বলেও একাধিকবার জানিয়েছেন। সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের কয়েকজন সাংসদ ও বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিং তো প্রার্থী তালিকা প্রকাশের দিন কালীঘাটে দলনেত্রীর ডানদিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মশিবিরে যোগ দিয়েছেন তাঁরা চিহ্নিত হয়ে গিয়েছেন, কিন্তু যাঁরা দলে থেকেও বিজেপির সঙ্গে বৈঠক করছেন বলে অভিযোগ, তাঁরাই এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন।
বাংলার রাজনীতিতে কান পাতলেই শোনা যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের এক মন্ত্রী বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারপরই গুঞ্জন ওঠে, সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত এক প্রভাবশালী তৃণমূলের সাংগঠনিক নেতা বেশ কয়েকবার দিল্লিতে বৈঠক করেছেন। এমন বহু নাম রাজনীতির বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দলবদল প্রসঙ্গে মুকুল রায় বলেন, ''তৃণমূলের একেবারে নীচের তলা থেকে ওপরতলা অবধি যোগাযোগ রাখছে। এতো শুধু ট্রেলার দেখছেন। পুরো সিনেমা বাকি আছে।''
আরও পড়ুন: বাংলা নিয়ে কেন এত স্পর্শকাতর বিজেপি: মমতা
২০১৯ লোকসভার পর ২০২১ রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন। রাজ্য দখলের ভোট। প্রশ্ন উঠেছে, যাঁরা বিজেপির সঙ্গে বৈঠক করছেন অথচ তৃণমূলেই আছেন, তাঁরা কী চাইছেন? রাজনৈতিক মহলের মতে, যাঁরা জোর গলায় 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ, তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ' বলছেন অথচ তলে তলে গেরুয়া যোগ রাখছেন, তাঁরা চাইছেন এই লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ফল খারাপ হোক। চাপে ফেলতে চাইছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। যাতে লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপিতে যোগ দেওয়া সহজ হয়।
তাহলে বিজেপির রণকৌশল কী? অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, যাঁরা তৃণমূল থেকে এখনি বেরোতে পারছেন না, তাঁরা দলে থেকেই পদ্মশিবিরকে সাহায্য করবেন। এক কথায়, অন্তর্ঘাতের সুবিধা নিতে চাইছে বিজেপি। প্রয়োজনে বিধানসভার আগে অনেকেই বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। কিন্তু রণকৌশল নিয়ে মুকুল রায় বলেন, ''ভোট, রাজনীতি বা যুদ্ধের রণনীতি থাকে, রণকৌশল থাকে। তা যদি প্রকাশই হয়ে যায়, তাহলে আর কী লাভ?''