দেশের ৫৪৩ টি লোকসভা কেন্দ্রে চূড়ান্ত ফলাফলের সময় যত এগিয়ে আসছে, তত বোঝা যাচ্ছে যে দ্বিতীয়বার দেশে ক্ষমতায় আসতে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। দেশের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আসা লিডের পরিসংখ্যান অন্তত তাই বলছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ৩২০টির বেশ আসনে এগিয়ে রয়েছে এনডিএ জোট, এবং বিজেপি একাই ২৭৫টি আসনে এগিয়ে।
দেশ যে সম্ভবত ফের একবার মোদী ঢেউ দেখতে চলেছে, তা সকাল আটটায় ভোটগণনা শুরুর মোটামুটি এক ঘণ্টার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সেই এক ঘন্টায় ২০০টি আসনে এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। দীর্ঘকালের বিজেপি গড় হিন্দি বলয়ে প্রত্যাশিতভাবেই ভালো ফল করছে, কিন্তু পশ্চিম এবং পূর্বেও এবার যথেষ্ট ভালো পারফরম্যান্স। ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ, যেখানে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ দলের পরিকাঠামো গঠনে এবং সদস্য সংখ্যা বাড়াতে প্রচুর সময় ব্যয় করেছেন, সেখানেও ভাল ফল বিজেপির।
রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের অবস্থা এখন পর্যন্ত শোচনীয়। মাত্র চার মাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে যে রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস সরকার, সেই দুই রাজ্যে অবধি ঘোরতর বিপন্ন অবস্থা তাদের। কংগ্রেসের একমাত্র আশার আলো পাঞ্জাব এবং কেরালা, বিশেষ করে দক্ষিণের এই রাজ্যে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউডিএফ-এর জয়জয়কার বলেই বোধ হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাহুল গান্ধীকে ওয়ানাড়ে প্রার্থী করার নেপথ্যে স্থানীয় নেতৃত্ব যে হিসেব কষেছিলেন, তা মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা।
বিজেপি-বিরোধী শিবিরের সবচেয়ে হতাশাজনক পারফরম্যান্স অবশ্যই উত্তরপ্রদেশের মহাগঠবন্ধন, যেখানে আশা ছিল, এসপি-বিএসপি-আরএলডি জোটে কড়া লড়াইয়ের মুখে ফেলতে পারবে বিজেপিকে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে এই রাজ্যে ৮০টির মধ্যে ৭১টি আসন পায় বিজেপি। উত্তরপ্রদেশ যাদের দখলে থাকবে, তারাই ভারত শাসন করবে, এই সামগ্রিক ধারণা মাথায় রাখলে বলা যায়, বিজেপি ২০১৯-এ বিপুল জয়ের পথে। বিহারেও দাপিয়ে জেতার মুখে বিজেপি।
গুজরাট, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, এবং হরিয়ানা ছাড়াও পাহাড়ি রাজ্যে দাপট দেখাচ্ছে বিজেপি, এবং কর্ণাটক, ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্রে বিপুল সংখ্যক আসন জেতার মুখে।
কর্ণাটক বাদে দক্ষিণে আটকে গেছে বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া, এবং কিছুটা হলেও হতাশ করেছে বিজেপি নেতৃত্বকে। তামিল নাড়ুতে বিপুল জয় অর্জন করতে চলেছে ডিএমকে জোট, এবং অন্ধ্র প্রদেশে তেলুগু দেশম পার্টির উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে গেছে ওয়াইএসআরসিপি, এবং টিআরএস ধরে রেখেছে তেলেঙ্গানা।
এপ্রিল-মে জুড়ে সাত দফার এই নির্বাচনে নজর ছিল মোদীর ওপরেই, যেহেতু শক্তিশালী এবং দৃঢ়সঙ্কল্প নেতা হিসেবে তাঁকেই জনসমক্ষে তুলে ধরেছিল বিজেপি। বহু রাজ্যেই 'হিন্দু গৌরব' যেন ভোটদানে প্রতিফলিত হয়, এই মর্মে প্রচার করেছিল বিজেপি।