Advertisment

কোচবিহার-আলিপুরদুয়ার, ভোটের আগেই হিসেব-নিকেশ

শতাংশের হিসাবে পাঁচ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের ভোট বেড়েছে মাত্র ০০.৩২ শতাংশ ভোট। অংকের হিসাবেই আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে এবার কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে রাজ্যের শাসকদল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
5th Phase Election at West Bengal

পঞ্চম দফায় রাজ্যের ৭ কেন্দ্রে ভোট। প্রহর গুনছে দক্ষিণবঙ্গ।

কোচবিহারে শান্তিতে ভোট করানোই আপাতত বড় চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনের কাছে। তৃণমূল থেকে আসা বিজেপি প্রার্থী প্রাক্তন দলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিতে প্রস্তুত। ময়দান ছাড়তে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেসও। নির্বাচন কমিশনের পুলিশ পর্যবেক্ষকেরও কড়া নজর রয়েছে কোচবিহারের ওপর। আলিপুরদুয়ারেও তৃণমূল-বিজেপির লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে।

Advertisment

২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ভবেন্দ্রনাথ বর্মন মাত্র ৫.৮৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। তারপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে পদ্মশিবিরের ভোট বেড়েছে ১০.৫১ শতাংশ। ওই নির্বাচনে বিজেপি তৃতীয় স্থান পেয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের উপনির্বাচনে ফের ১১.৯৮ শতাংশ ভোটবৃদ্ধি হয় বিজেপির। যদিও ওই উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট বেড়েছিল ১৯.৫২ শতাংশ। এবার ওই কেন্দ্রে শেষমুহূর্তে তৃণমূলের যুব নেতা নিশীথ প্রামাণিককে প্রার্থী করে বাজিমাত করতে চাইছে বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেসও ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা পরেশ অধিকারীকে দলে এনেই লোকসভার প্রার্থী করেছে। লড়াই এবার অভিজ্ঞতা বনাম তারুণ্যের। ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী গোবিন্দ রায় তৃতীয় স্থানের জন্য লড়ছেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

publive-image কোচবিহারে বুথের পথে ভোটকর্মী।এক্সপ্রেস ফটো: পার্থ পাল।

কোচবিহারের একটা বড় অংশ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী। তাছাড়া রয়েছে মাথাভাঙা, শীতলকুচি ও দিনহাটার অধুনা ছিটমহল। যা এখন ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই এলাকার মানুষের নাগরিক পরিষেবা নিয়ে নানা ধরনের ক্ষোভ রয়েছে। সেই ক্ষোভকে কাজে লাগাতে তৎপর গেরুয়া শিবির। একইসঙ্গে বিজেপি প্রার্থী তৃণমূল কংগ্রেস থেকে আসায় পুরনো দলের ভোটের আদব-কায়দাও তাঁর অনেকটাই জানা। পঞ্চায়েত ভোটে নিশীথ প্রামাণিকের মদতে দলের একাংশ তখন নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন। তাছাড়া নিশীথ বেশ ডাকাবুকো বলেই কোচবিহারে চর্চা রয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে বিজেপি কর্মীরা বুথে কতটা লড়াই দিতে পারবেন, সেটাই মূল বিষয়।

অন্যদিকে অভিজ্ঞতার দিক থেকে পরেশ অধিকারী অনেকটা এগিয়ে। দীর্ঘদিন ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক ছিলেন। এই কেন্দ্রে জয়ী তৃণমূল সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কে প্রার্থী করেনি তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের মতে, কোচবিহারে তৃণমূলের সবথেকে বড় সমস্যা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। অন্য যে কোনও জেলার তুলনায় এই জেলায় গোষ্ঠীসংঘর্ষ হয়েছে অনেক বেশি। বৃহস্পতিবার ভোট ময়দানে পরেশ অধিকারী সেই সব সমস্যা কতটা সামাল দিতে পারবেন সেটা একটা প্রশ্ন। দলের অন্তর্কলহ রুখতে অন্যদল থেকে এনে তাঁকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল, অভিমত অভিজ্ঞ মহলের।

publive-image শেষ দিনের প্রচারে বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামানিক। এক্সপ্রেস ফটো: পার্থ পাল।

কোচবিহারের সঙ্গে এদিন প্রথম দফার ভোট আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে ভোটারদের প্রায় ৪০ শতাংশই চা-বাগানের সঙ্গে যুক্ত। চা-বাগান বন্ধ, সময়ে বেতন না পাওয়া বা মজুরি কম, এসব নিয়ে অসন্তোষ চলছেই। বিজেপি এখানে প্রার্থী করেছে শ্রমিক নেতা জন বার্লাকে। চা-বাগানের সঙ্গে ভোটাররা এখানে বড় ফ্যাক্টর। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস গতবারের জয়ী দশরথ তিরকেকে প্রার্থী করেছে। এখানেও সেয়ানে সেয়ানে টক্কর হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই কেন্দ্রের মধ্যে বিধানসভা রয়েছে তুফানগঞ্জ, মাদারিহাট, নাগরাকাটা, ফালাকাটা, কুমারগ্রাম, আলিপুরদুয়ার ও কালচিনি।

২০০৯-এ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গা ভোট পেয়েছিলেন ২১.৪০ শতাংশ ভোট। ২০১৪ সালে ভোট বেড়েছে ৫.৯০ শতাংশ ভোট। মোট ২৭.৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিল বিজেপি। অন্যদিকে ২৭.৭২ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিল আরএসপি। এই কেন্দ্রে ২০১৪ সালে প্রথমবার পরাজিত হয় বাম প্রার্থী। তৃণমূল আলিপুরদুয়ারে ২০১৪-তে মাত্র ২৯.৪৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে দ্বিতীয় হলেও তৃণমূল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ২৯.১৪ শতাংশ। অর্থাৎ শতাংশের হিসাবে পাঁচ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের ভোট বেড়েছে মাত্র ০০.৩২ শতাংশ। অঙ্কের হিসাবেই এই কেন্দ্রে এবার কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে রাজ্যের শাসকদল। আরএসপির ভোট যেদিকে টার্ন নেবে সেই দলই বাজিমাত করবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

lok sabha 2019 bjp tmc
Advertisment