'মিশন আমেঠি'-তে প্রাণপাত কংগ্রেসের। গান্ধী পরিবারের কাছে এবারের নির্বাচন এই আসন জয়ের এক অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সালে বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে এই আসনে পরাজিত হন কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী। এবার সম্মানের লড়াইয়ে মাঠে নেমেছে দল।
২৪-এর লোকসভা ভোটে এই আসন থেকে ফের প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন বিজেপির স্মৃতি ইরানি। তবে এই আসনে এবার গান্ধী পরিবারের কোন সদস্য লড়াই করছেন না। বদলে লড়াইয়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে দেওয়া হয়েছে গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ কেএল শর্মাকে। এমন পরিস্থিতিতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আমেঠি আসনে প্রচার জোরদার করেছেন।
উত্তরপ্রদেশের আমেঠি লোকসভা আসনকে একসময় কংগ্রেসের শক্তিশালী দুর্গ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও পাঁচ বছর আগে কংগ্রেসের এই শক্ত ঘাঁটি ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। রাহুল গান্ধীকে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। দীর্ঘ ২৫ বছর পর এই প্রথম গান্ধী পরিবারের কোন 'যোদ্ধা' আমেঠি আসন থেকে লড়ছেন না। রাহুল গান্ধী রায়বেরেলি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং কিশোরী লাল শর্মা আমেঠি থেকে এবারের কংগ্রেস প্রার্থী। প্রতিবারের মতো এবারও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী রায়বেরেলি এবং আমেঠিতে কংগ্রেসকে জয়ী করতে পুরোপুরি ময়দানে নেমে পড়েছেন।
ভাই রাহুল গান্ধীকে রায়বেরেলিতে জয়ী করা এবং আমেঠিতে ২০১৯-এর পরাজয়ের হিসাব বিজেপিকে বুঝিয়ে দিতে মরিয়া তিনি। আর সেই কারণেই প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাই রাহুল গান্ধীর জন্য দু দিন ধরে রায়বেরেলিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রচার করেছেন। এরপর শুক্রবার থেকে আমেঠি আসনের কংগ্রেস প্রার্থী কেএল শর্মার জন্য নির্বাচনী প্রচার শুরু করছেন।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে এল শর্মা নির্বাচনী প্রচার শুরু করার এক দিন আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আমেঠি লোকসভা কেন্দ্রের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি সেই সঙ্গে তিনি নিজেই নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন।
আমেঠির কংগ্রেস কর্মীদের উদ্দেশে প্রিয়াঙ্কা বলেন, 'বিজেপি অর্থ শক্তি দিয়ে লড়াই করুক এবং আমরা আমেঠি অঞ্চলের মানুষের শক্তি নিয়ে লড়ব। আমি আপনাদের মাঝে থেকে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেব। আমিঠির এই পুণ্যভূমিতে সঠিক রাজনীতি, সত্যের রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে লড়াই করব। কেউ আমাদের হারাতে পারবে না। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি'।
আরও পড়ুন- Modi on Hindu-Muslim: ‘যেদিন আমি হিন্দু-মুসলিম করব, সেদিন…,’ ঘৃণা ভাষণ নিয়ে ঢোঁক গিললেন মোদী!
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর জন্য, রায়বেরেলির চেয়ে আমেঠি আসনে জয় ছিনিয়ে আনা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০১৯ সালে রাহুলের পরাজয় কংগ্রেসের জন্য নিঃসন্দেহে এক বড় ধাক্কা। গত ৫ বছরে, স্মৃতি ইরানি আমেঠিতে তার রাজনৈতিক শিকড় মজবুত করেছেন, যার কারণে এবার কংগ্রেসের জন্য রাজনৈতিক পথ সহজ নয়। এই পরিস্থিতিতে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কীভাবে গান্ধী পরিবারের শক্ত ঘাঁটি বিজেপির হাত থেকে ফিরিয়ে আনেন সেটাই এখন দেখার।
আমেঠি থেকে এবারের নির্বাচন স্মৃতি ইরানির তৃতীয় লড়াই। ২০১৪ সালে রাহুল গান্ধীর কাছে প্রায় ১ লাখ ভোটে হেরেছিলেন এবং ২০১৯ সালে প্রায় ৫৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। কংগ্রেসের প্রাক্তন এমএলসি দীপক সিং বলেছেন, “স্মৃতি ইরানি কেবল প্রচারের আমেঠিতে নিয়মিত উপস্থিতির কথা তুলে ধরছেন। যদিও আমেঠির মানুষ তাকে মাঝে মাঝে দেখতে পান। তাছাড়া তার নিজের দলের নেতাদেরও তাঁর বিরুদ্ধে কিছু ক্ষোভ রয়েছে। এমন উদাহরণ রয়েছে যখন তিনি বিজেপি নেতাদের প্রকাশ্যে তিরস্কার করেছেন”।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু ক্ষোভ স্বীকার করে, একজন বিজেপি সমর্থক ভোটারদের "মোদী এবং যোগী" কে দেখে স্মৃতি ইরানিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “কেএল শর্মা নতুন, তার সম্পর্কে মানুষ কিছুই জানে না। গান্ধী পরিবার এবার তাকেই খাঁড়া করেছে। যদিও তিনি ভাল লড়াই করছেন, সবাই জানে কেন্দ্রে কে সরকার গঠন করবে। তাহলে কেন ভোট নষ্ট করবেন?
শিব পেয়ারে, যিনি চা এবং জলখাবারের দোকান চালান, তিনি বলেছেন যে "কংগ্রেসও এবারে ভালো ভোট পাবে"। গান্ধী পরিবারের একজন সদস্য লড়াইয়ে থাকলে কংগ্রেসের লাভই হত। তবে অনেকেই ,"স্থানীয় সাংসদের আচরণে" অখুশি। তারা "তাদের ভোট নষ্ট করবে না শর্মাকে ভোট দেবেন"। তিনি আরও বলেছেন, ভোট প্রার্থীকে দেখে নয়। কংগ্রেস এবং মোদীকে দেখে মানুষ ভোট দেবে"।
প্রিয়াঙ্কা আমেঠি এবং রায়বেরেলিতে কংগ্রেসের প্রচারের দায়িত্বে নিয়েছেন। দলের কর্মীরা বলছেন তার প্রচার দলকে আরও প্রাণবন্ত করেছে, প্রিয়াঙ্কা ইতিমধ্যেই শর্মাকে সঙ্গে নিয়ে আমেঠিতে ১৫টির বেশি সভা করেছেন। প্রিয়াঙ্কা প্রতিনিয়ত আমেঠির সঙ্গে তার পরিবারের পুরনো সম্পর্কের কথা তুলে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। এছাড়াও আমেঠি লড়াইয়ে নেমেছেন রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা অশোক গেহলট৷