গেরুয়া বাহিনীর নজরে বাংলা। যুদ্ধ জয়ে বিজেপির 'চাণক্য' অমিত শাহ। গত দেড় মাস বাংলায় নিয়মিত প্রচারে আসছেন তিনি। তুলোধনা করছেন 'দিদি'কে। বিরোধীদের দাবি, মুখ নেই বিজেপির। তাই ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য কাউকেই তুলে ধরতে পারেনি পদ্ম বাহিনী। যা বিজেপির বড় খামতি। কিন্তু তা মানতে রাজি নন শাহ। উল্টে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, বিজেপি জিতলে কে হবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
প্রশ্ন- ২০১৬ থেকে বাংলায় নজর আপনার। তখন থেকে এখনও পর্যন্ত কী বদল দেখছেন?
উত্তর- ২০১৬-তে বাংলায় বিজেপির সংগঠন প্রায় ছিলই না। সংগঠন পোক্ত করতে আমরা জোর দিয়েছি। সমস্যা সমাধানে বাংলার মানুষ মোদীজির মত নেতৃত্বকে খুঁজছিলেন। ওঁর প্রতি এ রাজ্যের মানুষের আস্থা আমার নজরে এসেছিল। আমি নিশ্চিত যে বাংলায় এবার বিজেপি ঝড় বইতে চলেছে।
প্রশ্ন- গত তিন বছরে বাংলা সমন্ধে কী শিখলেন? সংস্কৃতি?
উত্তর- আমি মনে করি মিথ ধরে বসে থাকার অর্থ বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে সরে যাওয়া। গ্রাউন্ড রিয়েলিটি বুঝেই কৌশল নির্ণয় প্রয়োজন। পৌরাণিক কাহিনী ততক্ষণে দরকার যতক্ষণ মানুষ তা গ্রহণ করছেন।
প্রশ্ন- আপনাকে কী অবাক করেছে?
উত্তর- তেমন কিছুই নয়। ২০১৫ থেকেই আমি ধারণা করতে পেরেছি যে আগামী বিধানসভায় বাংলায় ২০০-র বেশি আসন পাবে বিজেপি। ২০১৭ সালে আমি প্রকাশ্যে ঘোষণা করিছাম যে ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি জিতবে, ২০০-র বেশি আসনে জয় পাবে।
প্রশ্ন- ২রা মে আপনাকে কী অবাক করতে পারে?
উত্তর- বিজেপিই বাংলায় সরকার গড়বে।
প্রশ্ন- ২০১৯-র লোকসভার ফলাফল অনুসারে উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলে বিজেপি ভাল আসন পেয়েছিল। এরপর গত দু'বছরে বিজেপি বাংলার অন্য কোন জেলায় পোক্ত হয়েছে বলে মে করছেন?
উত্তর- হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনায় সংগঠন বেড়েছে। প্রথম চার দফায এইসব জেলায় ভোট ছিল। আশা করছি ভাল ফল হবে। তৃণমূলকে টপকে যাব আমরা। জঙ্গলমহল, উত্তরবঙ্গে গত কয়েক বছরে বিজেপির প্রভাব আরও বেড়েছে।
প্রশ্ন- মমতা ব্যানার্জীর প্রতি মহিলাদের সমর্থন রয়েছে। মহিলাদের জন্য তৃণমূল সরকার একাধিক প্রকল্প চালু করেছে। মহিলাদের মন জয়ে বিজেপির কী প্রতিশ্রুতি
উত্তর- আমি নিশ্চিত বিজেপি যাঁদের ভোট বেশি পাবে তাদের মধ্যে অন্যতম মহিলারা। মমতা সরকার কেন্দ্রীয় কিষাণ সম্মাননিধি, আয়ুষ্মান প্রকল্প বন্ধ করে রেখেছে বাংলায়। রাজ্যের মহিসাদের তা নিয়ে অসন্তুষ্ট। এছাড়া বিজেপি সরকার গড়তে প্রতিটা বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের কল পৌঁছে দেবে। যা মহিলাদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের। রান্নার গ্যাস, বিদ্যুৎ পেয়ে মহিলারা কতটা খুশি তা আমি জানি। এসবের পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারীদর দ্বারা প্রায়ই বাংলার মেয়েরা লাঞ্ছিত হন। দিদির প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করে না। যা থেকে এবার মুক্তি চাইছেন এ রাজ্যের মহিলারা।
প্রশ্ন- বিজেপির তরফে অনেক সময়ই প্রচারে মমতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। যেমন দিলীপ ঘোষই মুখ্যমন্ত্রীকে বারমুডা পরতে বলেছেন। এই বিষয়ে আপনার কী মতামত?
উত্তর- এগুলো উচিত নয়। কিন্তু, কেউ দুঃশাসন, দর্যোধন, গুন্ডা বলবেন সেটাও বন্ধ করা দরকার। কোনও তরফেরই অসৌজন্যমূলক শব্দ প্রয়োগ করা অনুচিত।
প্রশ্ন- আপনি কি দিলীপ ঘোষকে সতর্ক করেছেন?
উত্তর- আমি দিলীপ ঘোষ ও দিদি- উভয়কেই বলব এধরণের কোনও মন্তব্য করা উচিত নয়।
প্রশ্ন- তৃণমূল বিজেপি নেতৃত্ব, বিশেষ করে দিল্লির নেতাদের বহিরাগত বলছেন। প্রচারে বলা হচ্ছে, বাংলার সঙ্গে যে দলের কোনও যোগ নেই তাদের ভোট দিয়ে লাভ নেই…
উত্তর- বাংলার মানুষ সব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। এই নীতি মানলে তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও উত্তরপ্রদেশের বহিরাগত। তেলেঙ্গানা, কর্নাটকে নেতাজি কী বহিরাগত? সবার জানা, বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রীও বাংলারই ভূমিপুত্র হবেন। আমরা সর্বভারতীয় দল, মোদীজি প্রধানমন্ত্রী। উনি প্রচারে বাংলার মানুষের আসতে পারবেন না? আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে বাংলার মানুষের কথা বলতে পারব না? এটা কী ধরণের গণতন্ত্র?
প্রশ্ন- কে হবেন মুখ্যমন্ত্রী এখনও কিছু স্থির করেছে বিজেপি?
উত্তর- সেটা সংসদীয় বোর্ড ঠিক করবে।
প্রশ্ন- ১৯-য়ের লোকসভায় কলকাতায় বিজেপির বিজয় রথ ধাক্কা খেয়েছিল। ফলে আপনার ২২ আসন জয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এখন কী পরিস্থিতি বদলেছে?
উত্তর- ঠিক সেরকম নয়। ২১ আসনে আমাদের ফল ভালো হয়েছিল। কয়েকটি আমরা ৫ হাজারের কম ব্যবধানে হেরেছি। ফলে টার্গেট বিচ্যুত হয়েছি বলে মনে করি না। অনুপ্রবেশ নিয়ে কলকাতার তথাকথিত ভদ্রলোকদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। আমরা কী পারব, প্রশ্ন ছিল কলকাতাবাসীর মনে। তারা বুঝেছেন যে বিজেপিই বদল ঘটাতে পারে, আমরাই বিকল্প। ফলে আমরা তার ফায়দা পাব।
প্রশ্ন- সমালোচকরা বলছেন বাংলায় জাতি-ধর্মে-র রাজনীতি বিজেপি এনেছে…
উত্তর- ফলাফল বেরলেই বুঝবেন সব শ্রেণি-জাতির ভোট হারাবেন দিদি। নির্দিষ্ট কোনও জাতি নয়, বাংলায় সবার আস্থা হারিয়েছে তৃণমূল।
প্রশ্ন- বিজেপির প্রার্থী তালিকায় তৃণমূল ত্যাগীরা অনেকে স্থান পেয়েছেন। আপনারা বলছেন তৃণমূল জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। এটা কতটা বাস্তবসম্মত?
উত্তর- যাঁরা দিদির নীতি মানতে রাজি ছিলেন না তাঁরাই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। হ্যাঁ, যাদের ক্ষমতা রয়েছে তাঁদের প্রার্থী করা হয়েছে। বাকি প্রার্থীরা সবাই বিজেপি করেন। এতে দলে কোনও প্রবাব পড়বে না বলেই মনে করছি। কারণ, নীতি দল ঠিক করে, সরকার শুধু তা রূপায়ণ করে থাকে।
প্রশ্ন- আসামের পরিণতি দেখেই কী সিএএ লাগুতে দেরি হচ্ছে?
উত্তর- সিএএ এখন আইনে পরিণত হয়েছে। ফলে ওটা লাগু হবেই। দেশের স্বার্থেই সিএএ। অনেকেই এই আইন সমন্ধে জানেন না। তাই বিভ্রান্ত হন।
প্রশ্ন- বাংলায় প্রচারে এসে লাভ জিহাদ বলবৎ, অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড তৈরির কথা বলেছেন যোগীজি। বিজেপি বাংলায় এগুলো করবে?
উত্তর- আমরা ম্যানিফেস্টো মোতাবেক কাজ করব (বাংলায় বিজেপির ম্যানিফেস্টোয় লাভ জিহাদের উল্লেখ নেই)। সরকার গড়ার পর আমরা সবার পরামর্শ মেনে এগিয়ে যাব।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন