২০১৪ সালের বিজেপির জয়ের মুহূর্তে অনেকেই বলেছিলেন অমিত শাহের ভূমিকা বিজেপির প্রয়াত নেতা প্রমোদ মহাজনের কথা মনে করিয়ে দেয়। ভুল বলতেন। যাঁরা বলতেন, তাঁরা অমিত শাহকে চিনতে পারেননি। ২০১৪ সালে অনেকেই চিনতে পারেননি শাহকে। প্রমোদ মহাজনের কাছে দলের কেউ নির্বাচনী টিকিট চাইলে, তা পাওয়া অসম্ভব ছিল না। জিতবে না জেনেও কোনও নেতাকে টিকিট দিয়েছেন তিনি, এমনটা ঘটেছে। কিন্তু বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি সেরকম নন। যতক্ষণ না পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হচ্ছেন তিনি, প্রার্থীর টিকিট পাওয়া অসম্ভব।
বর্তমানে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ তাঁকে আধুনিক যুগের চাণক্যের তকমা দিয়েছেন। অসম্ভব নিখুঁত পরিকল্পনা, একগ্রতা, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি অনমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল দলপ্রধান বানিয়েছে। সঠিক নেতাকে খুঁজে বার করা থেকে প্রবীণ নেতাদের নির্বাচনী কার্যকলাপ থেকে দূরে রাখা, প্রাতিষ্ঠানিক সমস্ত খুঁটিনাটি ব্যাপারে অমিত শাহই দলের শেষ কথা।
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে জেতার পর প্রথম এক বছর অমিত শাহ সময় নিয়েছিলেন দলকে খোল নলচে বদলে ফেলার। ৬ মাসের মধ্যে শাহ স্লোগান দিলেন, 'সাথ আয়ে, দেশ বানায়ে'। জুলাই মাসের মধ্যে দলের সদস্যপদ পাওয়ার পদ্ধতি সরল হল এতটাই, একটা মিসড কলেই সুনিশ্চিত হবে সদস্যপদ। নথিভুক্ত সদস্যের সংখ্যা একলাফে সাড়ে তিন কোটি থেকে বেড়ে ১১ কোটি হল। দলের আদর্শ এবং পরিকাঠামোর সঙ্গে নতুন সদস্যদের সহজ হওয়ার জন্য শাহ চালু করলেন 'মহা সম্পর্ক অভিযান'। নিখুঁত ভাবে পরিকল্পিত ছক। এরপর দলের আদর্শ কে বুথ স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য চালু করলেন 'মেরা বুথ সবসে মজবুত' প্রচার। যে ১২০ টা কেন্দ্রে ২০১৪ -তে হেরে গেলেন সেখানকার জন্য এল 'দীনদয়াল উপাধ্যায় বিস্তারক যোজনা'।
দলের এক সাধারণ সম্পাদক বললেন, "বিজেপির বুথ স্তরের পরিচালনা পদ্ধতির সঙ্গে অন্য কোনও দলেরই তুলনা চলে না"।
২০১৬ থেকেই ২০১৯-এর লোকসভার রণকৌশল তৈরি করেছেন অমিত শাহ। এবং প্রথমেই ত্রিপুরা থেকে কয়েক দশক ধরে চলে আসা বাম শাসন তুলে দিলেন তিনি। দল যে সমস্ত জায়গায় খুব গভীরে পৌঁছতে পারেনি, সে সব কেন্দ্রে জোর দিলেন অমিত শাহ। ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, কেরালায় দলের সাধারন সম্পাদকদের নানা দায়িত্ব ভাগ করে দিতে শুরু করলেন অমিত শাহ। দলের পরিকাঠামোগত পরিবর্তন আনতে জেলায় জেলায় দলীয় দফতর বানানোর ওপর জোর দিলেন। দলের আধুনিকিকরণ, গ্রন্থাগার তৈরি, নমামি গঙ্গা, স্বচ্ছ ভারত-এর মতো প্রচার কে আরও জনপ্রিয় করে তুললেন অমিত শাহ।
কাকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হবে, কোন নেতার দ্বারা কোন কার্য সিদ্ধি হবে, তা বোঝায় অমিত শাহর দ্বিতীয় কোনও বিকল্পও নেই। দলের এক নেতার কথায়, "বিজেপিতে কোনও লবি নেই। অমিত শাহ যদি আপনার ওপর কোনও ব্যাপারে আস্থা রাখেন, আপনার কাছ থেকে সেই দায়িত্ব নিয়ে নেওয়ার খমতা কারোর নেই"। রাজনীতিতে জহুরির চোখ রয়েছে তাঁর। ২০১৪-এর লোকসভার আগে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব তিনি দিয়েছেন এমন নীচু তলার কর্মীকে, যা অন্য কেউ হলে দিতেন না।
দলে প্রযুক্তির ব্যবহারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনলেন শাহ। কল সেন্টার, জিপিএস দেওয়া রথ সবই শাহের মস্তিক প্রসূত। প্রযুক্তিতে সিদ্ধহস্ত ডিজাইনারদের নিয়োগও তাঁর সিদ্ধান্ত।