কোচবিহারের শীতলকুচির গুলি কান্ডের ঘটনায় রাজ্য উত্তাল হয়েছে। এখনও উত্তরবঙ্গে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে নির্বাচন বাকি রয়েছে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের গেটওয়ে শিলিগুড়ি থেকে ব্যাপক লীড পেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা। তারপর তিস্তা, মহামন্দা থেকে অনেক জল গড়িয়েছে। ৭২ বছরের সিপিএম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যের লড়াই এবার বেশ কঠিন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাসত্ত্বেও তিনিই এবার বাজিমাত করবেন বলে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের অনিল বিশ্বাস ভবন থেকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা জানালেন প্রত্যয়ী অশোকবাবু।
কেমন সাড়া মিলছে প্রচারে?
মানুষের কাছে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। শিলিগুড়ির সমস্ত ক্লাব, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও এনজিওদের কাছে যাচ্ছি। এখানকার কংগ্রেস নেতৃত্বও যথেষ্ট সমর্থন করছে। সিনসিয়ারলি পাশে রয়েছে। ফাঁসিদেওয়া কেন্দ্রে আমরা ওদের জন্য করছি।
শিলিগুড়িতে লড়াই কার সঙ্গে?
এখানে লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে হতে পারে, আবার বিজেপির সঙ্গেও হতে পারে। গত বছর লড়াইটা কঠিন। সেই তুলনায় এবার অনেকটাই আমাদের পক্ষে।
সিপিএম জিতবে কেন?
৫ বছর আমরা সাধারণের সঙ্গে ছিলাম। অনেক বাধা ও প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও কাজ করেছি। মানুষ সেটা দেখেছে। আমরা স্যারেন্ডার করিনি বা পালিয়ে যাইনি। ওদের অন্য়ায়ের প্রতিবাদ করেছি, মানুষের বিপদে আপদে থেকেছি। করোনা আবহে লকডাউনে মানুষের পাশে আমরা থেকেছি। একটা সিমপ্যাথি সিপিএমের সঙ্গে আছে।
উত্তরবঙ্গে ভাল করেছে বিজেপি….
গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যে ফল করেছে এবার তার ধারে কাছেও যেতে পারবে না।
এখানে কী হবে?
গত লোকসভা নির্বাচনেও আমরা পিছিয়ে ছিলাম। তার আগে ২০১৪-তেও পিছিয়ে ছিলাম। তারপর ২০১৫ সালে কর্পোরেশনে ভাল ফল করেছি। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনেও জয়ী হয়েছিলাম। লোকসভার ফলের প্রভাব বিধানসভা নির্বাচনে পড়ে না। লোকসভাতে যে রেজাল্ট বিজেপি করেছে বিধানসভায় সেই ফল হবে না পরিস্কার বলছি।
আপনার সহযোগী শঙ্কর ঘোষ এখন বিজেপি প্রার্থী। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী..
নো কমেন্টস। লড়াই বিজেপি বা তৃণমূলের সঙ্গে কোনও ব্যক্তির সঙ্গে নয়।
প্রার্থী বুথে বসে ধরনা দিচ্ছেন, মারধর করা হচ্ছে প্রার্থীকে। কী বলবেন?
এটা খুবই উদ্বেগজনক। ২০১১ সালের পর থেকে এরাজ্যে যতগুলো ভোট হয়েছে কোনও ভোটই ফ্রি এন্ড ফেয়ার হয়নি। ২০১৫ সালে শিলিগুড়ি কর্পোরেশনে ভোট হয়। ২০১৫ থেকে কোনও এখানে দলকে ভোট লুঠ করতে দিইনি। এখানে একটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি রয়েছে। শিলিগুড়িতে শেষ 15 বছর কোনও রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়নি। ২০১৩-তে একবার আমাদের পার্টি অফিস থেকে গ্রেফতার করেছিল। তাছাড়া তেমন কোনও ঘটনা নেই।
মেরুকরণ ঘটছে বাংলার রাজনীতিতে…..
শিলিগুড়িতে কোনও মেরুকরণ হবে না। মারোয়াড়ী, বিহারীরাও আমাকে বেশি ভোট দেয়। আমি 'ইজি একসেসেবল'। সবাইকে সম্মান করা, মর্যাদা দিই।
কোন প্রচারে জোর দিচ্ছেন বেশি?
যত বস্তি আছে সব বস্তিতে গিয়েছি। সেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। অন্য ক্ষেত্রেও বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। যদিও সারাবছরই যোগাযোগ রাখি। সূর্যকান্ত মিশ্র মিটিং করে গিয়েছেন। ভোটার মিটিং করছি। প্রাতভ্রমণেও মিট করছি।
দিনের কর্মসূচি….
সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠি। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। কোথায় কী প্রোগ্রাম আছে দেখি নিই। তারপর সকাল ৮টা নাগাদ সকালে চা টোস্ট খেয়ে বেরিয়ে যাই প্রচারের জন্য। প্রচার চলে রাত ১১টা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। মাঝে টানা ৭-৮দিন পর দুপুরে বাড়ি গিয়ে দুপুরের খাওয়া হয়নি। সারা দিনে ১৫-১৬টা মিটিং করি।
মন্ত্রী ছিলেন, বিধায়ক ও মেয়র ছিলেন আপনি।
২০ বছর মন্ত্রী ছিলাম। তবে তার থেকে ৫ বছর লড়াই করে পুরসভা চালিয়েছি তাতে বেশি স্যাটিসফায়েড। তখন মাথার ওপর জ্যোতি বসু ছিলেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন। এখন মাথার ওপরে কেউ নেই। লোকেও জানে একজন বিধায়ক ও মেয়র হিসাবে লড়াই করেছি। সেটা মানুষ দেখেছে। মোদি এখানে এসে আমার নাম করে বলে গিয়েছেন উনি বিরোধী তাই ওনাকে টাকা দিচ্ছে না।
এবার রাম পর বাম…..
এখানে তেমন কোনও পরিস্থিতি নেই। যা পারফর্মেন্স করেছি, তাতে মানুষ ভোট দেবে। এখানে বিকল্প আছে। এবার এসমস্ত কিছু আসবে না। এখানে বিজেপি সব বুথে এজেন্ট দিতে পারবে বলে মনে হয় না। আমি জিতবই তবে ঘরে বসে থাকতে তো পারি না। লোকে বলছে এত দৌড়াচ্ছেন। না গেলে হবে?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন