তেলেঙ্গানার মোট ৩.১ কোটি ভোটার রাজ্যের মোট ২২৯০ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন। এ বার রাজ্যে প্রথমবার ৫.৩ লক্ষ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
তেলেঙ্গানার ১১৯ টি বিধানসভা আসনে আজ ভোটগ্রহণ। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে ৩ ডিসেম্বর। গত দুই নির্বাচনে জয়ী ক্ষমতাসীন দল বিআরএসের সামনে এবার কঠিন লড়াই। একই সময়ে, বিরোধী দল বিজেপি এবং কংগ্রেস রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া
মোট আসন:
তেলেঙ্গানায় ১১৯ টি বিধানসভা আসন রয়েছে। হায়দ্রাবাদে সর্বাধিক ১৫ টি বিধানসভা আসন রয়েছে।
হট সিট:
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে. চন্দ্রশেখর রাও দুইটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ২টি আসন হল কামারেডি ও গাজওয়েল। বিজেপির ইটালা রাজিন্দর গাজওয়েলে মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি হচ্ছেন যখন কংগ্রেস সাংসদ রেভান্থ রেড্ডি কামারেডিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ ছাড়া জুবিলি হিলস আসন থেকে মহম্মদ আজহারউদ্দিন, চন্দ্রায়ণগুট্টা থেকে আকবরউদ্দিন ওয়াইসি, বি. সঞ্জয় কুমার, সিরসিল্লা থেকে কেটি রামা রাও, সিদ্ধিপেট থেকে হরিশ রাও, হুজুরনগর থেকে উত্তম কুমার রেড্ডি, গোশামহল থেকে টি. রাজা সিং এবং মালকাজগিরি থেকে এম. হনুমন্ত রাও প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
ভোটার:
তেলেঙ্গানার মোট ৩,১৭,৩২,৭২৭ ভোটার রাজ্যের মোট ২২৯০জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন। এবার রাজ্যে ৫,৩২,৯৯০ জন ভোটার প্রথমবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
পোলিং বুথ:
তেলঙ্গানায় নির্বিঘ্নে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে ৩৫,৩৫৬টি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৩২,৮১২ টি।
মুখ্যমন্ত্রী পদের মুখ:
রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন বিআরএস প্রধান কে. চন্দ্রশেখর রাও। এবারও বিআরএসের হয়ে তিনিই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী।
রাজ্যের প্রধান দুই বিরোধী দল বিজেপি ও কংগ্রেস। বিজেপি ঘোষণা করেছে, ক্ষমতায় ওবিসি ক্যাগাগরি থেকে বেছে নেওয়া হবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে । অন্যদিকে, কংগ্রেসের হয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে অনেক মুখের কথা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি রেভান্থ রেড্ডি, সাংসদ উত্তম কুমার রেড্ডি এবং কোমাতিরেড্ডি ভেঙ্কটা রেড্ডি, খাম্মাম জেলার তিনবারের বিধায়ক মাল্লু ভাট্টি বিক্রমার্কা এবং আদিবাসী নেতা সিথাক্কা। দলিত নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরার ইঙ্গিত একাধিকবার দিয়ে আসছে দলীয় নেতৃত্ব।
প্রধান সমস্যা:
রাজ্যের বিরোধী দলগুলি বারবার বেকারত্ব এবং প্রশ্ন ফাঁসের মতো ইস্যু নিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারকে নিশানা করেছে। নিয়োগ ইস্যুতে বেকাররা রাজ্যে প্রতিদিনই বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনেও বিআরএস সরকার বেকারদের ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল, তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে। এই কারণেই বিআরএস তরুণদের আকৃষ্ট করতে 'বিদ্যার্থী ও যুবজন'-এর মতো অনুষ্ঠান শুরু করেছে।
এই নির্বাচনে রাজ্যের মহিলা, আদিবাসী এবং কৃষকদের সাথে সম্পর্কিত ইস্যুগুলিও নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিরোধী দলগুলি যখন এই ইস্যুতে সরকারকে কোণঠাসা করছে, সরকার দাবি করেছে যে সরকার সকল শ্রেনীর জন্য জন্য কাজ করেছে।
সাম্প্রতিক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিআরএসের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী একটি সভায় বলেছিলেন যে ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে পরিবারের সদস্যদের নয়, জনগণকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং কেসিআরের দল গণতন্ত্রকে পারিবারতন্ত্রে পরিণত করেছে। এর পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী মহিলাদের সংরক্ষণের কথাও তুলে ধরেছিলেন।
কর্ণাটকের মতো, কংগ্রেসও তেলেঙ্গানায় মহিলা ভোটারদের আকৃষ্ট করতে গ্যারান্টির কথা বলছে। রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বেশ কয়েকবার কর্ণাটক বিধানসভায় দলের তরফে দেওয়া একাধিক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির উল্লেখ করেছেন।
আজ তেলেঙ্গানায় বিধানসভা নির্বাচনের জন্য সকাল থেকেই শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। ১১৯ আসন তেলেঙ্গানায় বিধানসভা নির্বাচনের বিশিষ্ট সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রাজ্য জুড়ে ৩৫ হাজারের বেশি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১০৬টি আসনে এবং ১৩টি বামপন্থী চরমপন্থী (এলডব্লিউই) প্রভাবিত আসনে সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে। এই নির্বাচনে মোট ২২৯০ জন প্রার্থী তাঁদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে চলেছেন। যার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী কে. চন্দ্রশেখর রাও, তাঁর মন্ত্রী-পুত্র কে. টি. রামা রাও, রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি এ. রেভান্থ রেড্ডি এবং বিজেপি লোকসভা সদস্য বি. সঞ্জয় কুমার এবং ডি অরবিন্দ।
তেলেঙ্গানার ক্ষমতাসীন বিআরএস ১১৯টি আসনেই তাদের প্রার্থী দিয়েছে। আসন ভাগাভাগি চুক্তি অনুসারে, বিজেপি নিজেই ১১১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং অভিনেতা পবন কল্যাণের নেতৃত্বাধীন জনসেনার জন্য বাকি আটটি আসন ছেড়ে দিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস তার মিত্র কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়াকে (সিপিআই) একটি আসন দিয়েছে এবং বাকি ১১৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। আসাদউদ্দিন ওয়াইসির নেতৃত্বাধীন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (এআইএমআইএম) হায়দ্রাবাদ শহরের নয়টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
২০১৪ সালে শুরু হওয়া জয়ের ধারা ধরে রাখতে মরিয়া বিআরএস। যেখানে কংগ্রেস চার বছর আগে হেরে যাওয়ার পরে ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইয়ে নেমেছে। দক্ষিণের এই রাজ্যে প্রথমবার ক্ষমতায় আসতে কোনো কসরত করতে বাকি রাখেনি বিজেপিও।