Advertisment

হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রামে আটক মুখ্যমন্ত্রী, 'খেলা' ৭ নম্বর বুথে

সংঘর্ষ, জখম, অশান্তির ঘটনা না ঘটলেও দুপুরের পর থেকে খবরের শিরোনাম থেকে গেল বয়াল সাত নম্বর বুথ। এদিন দুপুরে ওই বুথে গিয়ে দেখা যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় হুইল চেয়ারে বসে রয়েছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

উত্তপ্ত নন্দীগ্রামের বয়াল।এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

৩৫৫টির মধ্যে মাত্র একটি বুথ নিয়ে দিনভর সরগরম হয়ে রইল হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রাম। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের বয়াল মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ নম্বর বুথে ছুটলেন তৃণমূল প্রার্থী,বিজেপি প্রার্থী। টানা উত্তেজনাও ছিল ওই বুথে। বিজেপি ও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা একশো মিটারের তফাতে তখন সম্মুখ সমরে। মুহূর্মুহু একে অপরের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা দুপক্ষের মঝে দাঁড়িয়ে দুদলকে আটকে রাখেন প্রায় দুঘণ্টা। ওই বুথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ছুটে আসেন নন্দীগ্রাম থানার দায়িত্ব প্রাপ্ত আইপিএস নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী, মাইক্রো অবজার্ভার ও বিশাল কেন্দ্রীয় বাহিনী।  

Advertisment

ভোটের আগেই তৃণমূল প্রার্থী বয়ালে গোলমালের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এদিন দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ বয়াল মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে পৌঁছান মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তৃণমূলনেত্রী সেখানে পৌঁছাতেই জয় শ্রী রাম ধ্বনি দিতে থাকেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। এরই মধ্য়ে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরাও জড় হতে থাকেন ওই বুথের কাছে। দেখা দেয় চরম উত্তেজনা। ওই বুথ থেকে বেরনোর আগে সাংবাদিক বৈঠকও করেন মমতা।  মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় শুভেন্দুর বাড়ির পাশ দিয়ে বেরনোর পাঁচ মিনিট পরই শুভেন্দু রওনা দেন বয়াল মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথের উদ্দেশ্যে। নন্দীগ্রামের ২০২১ ভোটের চিত্রনাট্যে থাকবে বয়ালের নাম।

publive-image
এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

এদিন সোনাচূড়ায় বোমা পড়ার অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছু বুথে একে অপরের বিরুদ্ধে এজেন্টকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তৃণমূলের সন্ত্রাসে ভীত হয়ে পূর্ব ভেকুটিয়ার বিজেপি কর্মী উদয়শঙ্কর দুবে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। তাছাড়া বড় ধরনের আশান্তির ঘটনা ঘটেনি এদিন নন্দীগ্রামের নির্বাচনে। নন্দীগ্রামে শান্তিতে নির্বাচন করার জন্য কোনও কসুর করেনি নির্বাচন কমিশন। এদিন ১৪৪ ধারা জারি ছিল নন্দীগ্রামে। ছিল ২২ কোম্পানী কেন্দ্রীয় বাহিনী। নাকা চেকিংয়ের ব্যবস্থা ছিল। মাইক্রো অবজার্ভাররা তো ছিলই। সারা দিনই নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের কনভয় ছুটেছে নন্দীগ্রামের রাস্তায় রাস্তায়।

সংঘর্ষ, জখম, অশান্তির ঘটনা না ঘটলেও দুপুরের পর থেকে খবরের শিরোনাম থেকে গেল বয়াল সাত নম্বর বুথ। এদিন দুপুরে ওই বুথে গিয়ে দেখা যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় হুইল চেয়ারে বসে রয়েছেন। বুথ ঘিরে রয়েছেন তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীরা। ওই বুথের ভোটার শশধর প্রধান বলেন, "এই পরিস্থিতিতে বুথে ঢুকতে পারছি না। ভোট দেওয়াার জন্য অপেক্ষা করছি।" মুখ্যমন্ত্রীর বুথে এভাবে বসে থাকাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। এই বুথের আরেক ভোটার বলাই শেঠ বলেন, "আমি একটু আগেই ভোট দিতে এসেছিলাম।  কোনও সমস্য়া হয়নি। তৃণমূলের লোক নেই, তাই এজেন্ট দিতে পারেনি। শুধু-শুধু অশান্তি।" স্থানীয় তৃণমূল সমর্থক রশিদ খানের বক্তব্য, "আমাদের এজেন্টকে বসতে দেয়নি। আবার ভোট দিতেও বাধা দিচ্ছে সকাল থেকে। তাই নেত্রী এসেছেন।"

publive-image
এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে সীমাবদ্ধ থকেনি এই বুথের ভোট। এদিন সকাল থেকে বাড়ি থেকে বের হননি মমতা। দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমেই এই বুথে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বুথের বাইরে দুদলের মধ্য়ে চরম উত্তেজনা থামাতে হিমসিম খেতে হয়েছে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। নন্দীগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইপিএস, মাইক্রো অবজার্ভারের উপস্থিতিতে বুথ থেকে বেরিয়ে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তখনও দূর থেকে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন মমতাকে। ওই গ্রামেই সাংবাদিক বৈঠকও সারেন মমতা। তিনি জানিয়ে দেন, নির্বাচনে আশান্তি হলেও তিনিই জয়ী হবেন।

মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ওই বুথ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আধঘণ্টার মধ্য়ে সেখানে পৌঁছান বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। প্রথমে তিনি বয়াল শম্ভুনাথ প্রার্থমিক শিক্ষা সদনের 6 নম্বর বুথে যান।  সেখান থেকে 5টা 10 মিনিট নাগাদ পৌঁছান পাশের বযাল মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে। সেখানে প্রায় মিনিট কুড়ি ছিলেন শুভেন্দু। যথারীতি বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা শুভেন্দুকে দেখে ফের ভিড় জমান।  তখন আর তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ঘটনস্থলে দেখা যায়নি। শুভেন্দু সাংবাদিকদের বলেন,"নন্দীগ্রামের মানুষ স্বতঃস্ফুর্ত ভোট দিয়েছে। কোনও বুথে রিপোলিং চাই না।" নন্দীগ্রাম এদিন দেখল একটি বুথকে কেন্দ্র করেই দুই প্রার্থীর আনোগোনা। অশান্তি, উত্তেজনা। অভি়জ্ঞ মহলের মতে, বাংলা এদিন দেখল একজন মুখ্যমন্ত্রী টানা দেড় ঘণ্টা বুথে বসার পর স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত আইপিএস ও নির্বাচন কমিশনের আধিকারিক সেখানে পৌঁছান। তারপর তিনি বুথ থেকে বের হন। 

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Mamata Banerjee nandigram
Advertisment