মালদায় যখন আজ বক্তব্য রাখবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, তখন চারদিনের উত্তরবঙ্গ সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারই তিনি পৌঁছে গিয়েছেন শিলিগুড়িতে। ব্রিগেডে ১৯ জানুয়ারির সমাবেশের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিকে রাষ্ট্রীয় স্তরে মহাজোটের বার্তা দিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আদালতের দ্বারস্থ হয়েও এরাজ্যে তাদের রথযাত্রা করার অনুমতি পায়নি বিজেপি। আবার ব্রিগেডে নিজেদের জনসভার অনিশ্চয়তাও তাড়া করছে পদ্ম শিবিরকে। তাই সম্ভবত দলকে উজ্জীবিত করতে সোয়াইন ফ্লু-কে পাত্তা না দিয়ে এরাজ্যে জনসভা করতে আসছেন অমিত শাহ।
বিজেপির রথযাত্রা বেরনোর কথা ছিল গত বছর ৩ ডিসেম্বর। পরিবর্তিত কর্মসূচিতে বলা হয়েছিল, ৭ ডিসেম্বর কোচবিহার থেকে রথযাত্রা হবে। অমিত শাহ সেই যাত্রার উদ্বোধন করবেন বলে ঢাকঢোল পিটিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব হাজির হয়েছিলেন কোচবিহারে। রথ ও ময়দান, সমস্ত প্রস্তুত ছিল। কিন্তু ওই দিন হাইকোর্ট রথযাত্রা বাতিল করে দেওয়ায় বিফল হতে হয়েছিল গেরুয়া বাহিনীকে। এবার সুপ্রিম কোর্টেও রথযাত্রার আবেদন বাতিলের পর আর অপেক্ষা না করে অমিত শাহর সভা দিয়ে বিজেপি রাজ্যে লোকসভার অভিযান শুরু করছে।
রথ ও ব্রিগেডের জনসভা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই বিপন্ন রাজ্য বিজেপি। উপর্যুপরি ব্যর্থতায় দলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা বিমর্ষ হয়ে পড়ছেন। কিঞ্চিৎ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বও। চেয়েছিলেন ডিসেম্বরের শুরুতে রথযাত্রার মাধ্যমে লোকসভা অভিযান শুরু করতে। তারপর জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে ব্রিগেডে সভা করবেন, এমনটাই ভাবনা ছিল। কিন্তু তা কার্যকরী করা সম্ভব হয়নি। তাই আর সময় নষ্ট করতে নারাজ গেরুয়া বাহিনী।
অমিত শাহ বুধবার সভা করবেন ঝাড়গ্রাম ও সিউড়িতে। ২৪ জানুয়ারি জয়নগর ও কৃষ্ণনগরের সভায় তিনি না-ও আসতে পারেন বলে জানিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেক্ষেত্রে ওই দুই সভায় থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।
মালদা থেকেই লোকসভার অভিযান কেন শুরু করলেন শাহ? মালদা গণি খান পরিবারের শক্ত ঘাঁটি। জেলার দুই সাংসদ ঘোষণা করেছেন, তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেবেন না। কংগ্রেসের হয়েই লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করবেন। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মালদায় তুলনামূলক ভাল ফল করেছে বিজেপি। কোনও বিরোধী জোট না হলে লোকসভা ভোটেও ভাল ফল আশা করছে তারা, কারণ সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশ কংগ্রেসকে ভোট দেবে। বাকি সংখ্যালঘু ভোট ভাগ হবে সিপিএম, তৃণমূল এবং কিছুটা বিজেপির মধ্যে বলেই দলের নেতৃত্বের ধারনা। পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূলের ফল দেখে সেখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার করতে নারাজ বঙ্গ বিজেপি। তাই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির নজর পড়েছে মালদার দিকে।
বিজেপির সাধারন সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, "রথযাত্রা না হওয়ায় অমিত শাহর এই সভা বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করে দেবে। তৃণমূলকে সরাতে সোয়াইন ফ্লুকেও তোয়াক্কা করেননি আমাদের সভাপতি। এরপর রাজ্যে তিন জায়গায় প্রধানমন্ত্রীও সভা করতে আসছেন।"
অন্যদিকে, সোমবার উত্তরবঙ্গ উৎসবের সূচনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার জিটিএ-র বৈঠকে অংশ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী। ২৩ জানুয়ারি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবস পালন করা হবে দার্জিলিংয়ে। সেখানে হাজির থাকবেন তিনি। ২৫ জানুয়ারি কলকাতায় ফিরবেন মমতা।