Advertisment

বিজেপি বনাম মমতা: লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

২০১৪ সালের ভোটে রাজ্যব্যাপী উত্থানের কালে পশ্চিমবঙ্গের মোট ভোটের ১৭ শতাংশ পেয়েছিল বিজেপি। এ রাজ্যে এটাই ছিল তাদের সেরা পারফরম্যান্স। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের সময়ে বিজেপির ভোট শেয়ার ১০ শতাংশ কমে যায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Mamata Banerjee

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের রাস্তায় (ফাইল ছবি- শুভম দত্ত)

গত মাসে পশ্চিমবঙ্গ বিশাল এক জনসভার সাক্ষী থেকেছে। ২৩টি রাজনৈতিক দলের নেতারা বিভিন্ন রাজ্য থেকে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সমবেত হন। যে সমাবেশের নেতৃত্বে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এই সমাবেশ ছিল ক্ষমতার প্রদর্শন।

Advertisment

শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করেন। বাংলাদেশ সীমান্তের ঠাকুরনগরে আয়োজিত সভায় তিনি তৃণমূল কংগ্রেসকে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল সমর্থন করার আহ্বান জানান। এই বিলে বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দু সহ বেশ কিছু শ্রেণির জন্য ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্যতামান লঘু করার কথা বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন, “এখনই রাষ্ট্রপতি শাসন হবে না রাজ্যে”

এ রাজ্যের একটা বাম ঝোঁক রয়েছে। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ২০১৭ সালের তাঁর দেশ সফর শুরু করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তরভাগের নকশালবাড়িকে, যে জায়গা নকশাল আন্দোলনের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত। বাম নেতৃত্বের হিসেবে এ ছিল বাম এবং অতিবামদের বিরুদ্ধে বিজেপি-আরএসএসের বার্তা। বাংলায় বাম সরকারের পতনের পরে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস নয়া বাম বলে পরিচিত। তাদের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের ধরন ছিলে বাম ধাঁচেরই। এবং এই আন্দোলনের সুবাদেই ২০১১ সালে বাংলার মসনদে বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।



বারবারই একটা কথা সামনে উঠে আসছে, যে তৃণমূল কংগ্রেস লোকসভা নির্বাচনে 'কিং মেকার' হয়ে উঠতে পারে। এ রাজ্যে মোট ৪২টি লোকসভা আসন রয়েছে। সংখ্যার হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ লোকসভা আসন সমন্বিত রাজ্য। সবচেয়ে বেশি লোকসভা আসন রয়েছে উত্তর প্রদেশে (৮০)। তার পরের স্থান মহারাষ্ট্রের (৪৮)। নির্বাচনোত্তর বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে এ রাজ্যগুলি সত্যিই বড় ভূমিকা নিতে সক্ষম। ২০১৪ সালের ভোটে বিজেপির বিশাল ভারতব্যাপী জয়ের মধ্যেও, এ রাজ্যে ৪২টি আসনের মধ্যে ৩৪টিই দখলে রেখেছিল তৃণমূল। এ রাজ্যে দার্জিলিং এবং আসানসোল - এই দুটি আসনে জিতেছিল বিজেপি। এর ফলে লোকসভায় তৃণমূল এখন চতুর্থ বৃহত্তম দল। ২০১৯ সালেও তৃণমূল কংগ্রেস যদি ভাল ফল করে, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী করার দাবি তৃণমূলের তরফ থেকে তোলা হচ্ছে কিনা, সেদিকে সকলেরই চোখ থাকবে।

তাহলে বিজেপি কি পশ্চিমবঙ্গে পায়ের তলায় জমি পাচ্ছে?

২০১৪ সালের ভোটে রাজ্যব্যাপী উত্থানের কালে পশ্চিমবঙ্গের মোট ভোটের ১৭ শতাংশ পেয়েছিল বিজেপি। এ রাজ্যে এটাই ছিল তাদের সেরা পারফরম্যান্স। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের সময়ে বিজেপির ভোট শেয়ার ১০ শতাংশ কমে যায়। কিন্তু চাপ সরায়নি তারা। বামফ্রন্ট-কংগ্রেসের বোঝাপড়ার ব্যর্থতার ফলে বিজেপি বিরোধীশূন্যতার পরিস্থিতি কাজে লাগাতে থাকে। ২০১৬ সাল থেকে প্রায় প্রতিটি উপনির্বাচনে বিজেপি কংগ্রেস এবং বামপন্থীদের থেকে এগিয়ে থাকে এবং রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে অবতীর্ণ হয়। অন্য বিরোধীদের থেকে বিজেপি ভাল ফল করায় পালে হাওয়া পায় আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দলের মত সংগঠনগুলিও। আগে এদের এ রাজ্যে তেমন কোনও উপস্থিতি না থাকলেও, এবার গলা তুলতে থাকে তারা।



২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে আরএসএস-বিজেপি যৌথভাবে মোট ১৭৫ টি রাম নবমী অনুষ্ঠানের ঘোষণা করে। পরের দু'বছর ধরে সারা রাজ্যে অভূতপূর্ব অস্ত্র মিছিলের রমরমা দেখা যায় রামনবমী উপলক্ষে। এর ফলে তৃণমূল কংগ্রেস নিজস্ব রামনবমী মিছিল আয়োজন করতে বাধ্য হয়। দু'দলের পক্ষ থেকেই ঘোষণা করা হয় হনুমান জয়ন্তীর - যা আগে কখনও এ রাজ্যে হয়নি।

এর মধ্যে রামনবমীর মিছিল ঘিরে বেশ কয়েকটি সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষও হয়। তার মধ্যে রয়েছে হুগলি, ২০১৭ এবং ২০১৮-য় পুরুলিয়া, আসানসোল, রানিগঞ্জ। এ ছাড়া ২০১৬-১৭ সালের ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে হাওড়ায় উলুবেড়িয়া ও ধূলাগড়ে হিংসাত্মক সংঘর্ষ হয়েছিল। গত বছরের উলুবেড়িয়া উপনির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের জায়গা থেকে সিপিএমকে উৎখাত করে দেয় বিজেপি।

লড়াই কি সত্যিই তৃণমূল বনাম বিজেপি-র?

ব্যাপারটা দৃশ্যত তেমনই, যদিও কংগ্রেস এবং সিপিএম, দুজনেই এ লড়াইয়ে শামিল। তৃণমূলের সমালোচকরা বলবেন, ২০১৮-র মে মাসের রক্তক্ষয়ী পঞ্চায়েত ভোটের পর পাশার দান পাল্টাচ্ছে। ওই ভোটে ৩৪ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল শাসক দল। অভিযোগ ছিল, ভোটারদের ভোট দিতেই দেওয়া হয়নি। সমালোচকদের মতে এর ফলে অনেকেই তৃণমূল থেকে বিজেপির দিকে মুখ ফেরাবেন। তবে পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, তৃণমূল থেকে যে ভোট বিজেপির দিকে গেছে, তা আসন সংখ্যার দিক থেকে যথেষ্ট কিনা তা যেমন দেখার রয়েছে, তেমনই দেখতে হবে, তৃণমূলের হারানো ভোট সবই কি বিজেপির দিকে গেছে, না তার ভাগ পেয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেসও? এমনিতেও বিজেপিতে ক্ষমতার কেন্দ্র অনেক, এবং এখনকার আসনগুলিও হারাচ্ছে তারা। দার্জিলিংয়ে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন সাফল্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে তৃণমূল সরকার।

বিজেপির পরিস্থিতি তাহলে ঠিক কতটা ভাল?

নিজের জনমোহিনী শক্তি অনেকটাই ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি পঞ্চায়েত ভোটে তাঁর জনপ্রিয়তা হ্রাস হয়েছে, এমন প্রচার সত্ত্বেও। গত কয়েক বছর ধরে তাঁর রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে কেন্দ্রের দিকে আক্রমণ শানানো এবং ফেডারেলিজমের পক্ষে সওয়ালকে ঘিরেই। বিশেষকদের মতে, বিরোধীশূন্য অবস্থার যেমন ফায়দা তুলেছিলেন জ্যোতি বসু, ঠিক তেমনভাবেই বিজেপির বহুধাবিভক্তি থেকে ফায়দা তুলবেন মমতা। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রথম দু'দফার পরে বামফ্রন্ট তাদের ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি সুসংহত করেছিল। ২৯৪ টি আসনের মধ্যে ২৫২ টি দখলে রেখেছিল তারা। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এবার মমতা-শাসনের দ্বিতীয় দফা চলছে। মুসলিম ভোট ছাড়াও গরিব মানুষের জন্য দুটাকা কিলো চাল এবং স্কুলছাত্রীদের জন্য বিনা মূল্যে বাইসাইকেলের প্রকল্পও তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

কংগ্রেস আর সিপিএমের তাহলে কী হবে?

বাম সমর্থকদের মধ্যে ক্ষয়ের বাতাবরণ দেখা দিয়েছে প্রথমত সিপিএম সাংগঠনিকভাবে নিজেদের পুনরুজ্জীবিত করতে না পারায়, এবং সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ে নিজেদের রণকৌশলের জেরে। আরেকটা ঘটনাও ছাপ ফেলেছে। তা হল, এ রাজ্যে দলের নেতারা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেও, রাজ্যের বাইরে দলের নেতারা সে কথা ততটা জোরের সঙ্গে বলছেন না।

কংগ্রেস আর সিপিএম দু পক্ষই সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। তাদের অধিকাংশ কর্মীই ২০১১ সালের পর থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। অনেকেই যোগ দিয়েছেন বিজেপিতেও।

Read the Full Story in English

Mamata Banerjee CBI Vs Mamata bjp kolkata police
Advertisment