লোকসভা নির্বাচনের দামামা বাজতেই চুনের পোঁচ পড়তে শুরু করেছে শহরের দেওয়ালে। তার উপর নানা রঙে প্রতীকের ছবি আর পছন্দের প্রার্থীর নাম ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পীরা। বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি, ওড়িয়া তো আছেই, কলকাতায় ভোট দেওয়ালে জায়গা করে নিয়েছে চীনা হরফও! উদ্দেশ্য, শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রায় হাজার চারেক চীনা ভোটারকে বার্তা দেওয়া, প্রার্থী তাঁদেরও লোক। তবে আপতত চীনা হরফে দেওয়াল লিখনের দৌড়ে শামিল একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসই। শাসকদলের নেতারা দাবি করছেন, চীনা ভাষায় দেওয়াল লিখে তাঁরা প্রমাণ করলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও বিশেষ জাতি বা ধর্মের নন, সকলের মুখ্যমন্ত্রী।
লোকসভা ভোটের আরও খবর পড়ুন, এখানে
কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে কসবা বিধানসভার ট্যাংরা এলাকায় চীনা ভাষায় একাধিক দেওয়ালে লিখেছেন তৃণমূল কর্মীরা। ওই এলাকা কলকাতা পুরসভার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের অর্ন্তগত, স্থানীয় বিধায়ক জাভেদ খানের খাসতালুক হিসাবে পরিচিত। ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাভেদের ছেলে ফৈয়াজ আহমেদ খান। এদিন ফৈয়াজ বলেন, "আমার এলাকায় প্রায় ৫,০০০ চীনা বাসিন্দা স্থায়ীভাবে থাকেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ২,০০০ জন ভোটার। আমরা এই মানুষগুলির কাছে পৌঁছতে চেয়েছি। তৃণমূল কংগ্রেস যে প্রকৃতই জাত-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে আপামর সাধারণ মানুষের কথা বলে, সেই বার্তা দিয়েছি।"
বন্ধুদের অনুরোধে দেওয়াল লিখে দিয়েছেন রবার্ট হাউ। ছবি: পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
তাঁর কথায়, "চীনা সংস্কৃতির প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। এই এলাকার চীনা রেস্তোঁরাগুলি কলকাতার খাদ্য মানচিত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক চীনা বাসিন্দা আমাদের দলের সমর্থক। তাঁদের আরও বেশি করে রাজনীতি ও সামাজিক কাজকর্মে সামিল করতে চাই আমরা। আমাদের শহরের বহুমাত্রিকতাকে ধারণ করে একমাত্র তৃণমূল।" অন্য কোনও দল কেন চীনা ভাষায় দেওয়াল লেখেনি? ফৈয়াজের কটাক্ষ, "বিরোধীরা তো জনবিচ্ছিন্ন। ওঁরা আগে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজিটা সামলান, তারপর নাহয় এসব ভাববেন।"
আরও পড়ুন: Lok Sabha Election 2019: বাংলায় একই দিনে মোদী বনাম মমতা
কী লেখা হয়েছে দেওয়ালগুলিতে? চীনেপাড়ার বাসিন্দা রবার্ট হাউ বলেন, "একদম সাদামাটা ভোটের প্রচার। বয়ান হলো, '২৩ নম্বর দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মালা রায়কে ভোট দিন।' সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রার্থীর ছবি।" একটি বেসরকারি কোম্পানির ম্যানেজার রবার্ট জানান, তিনি সক্রিয় তৃণমূল কর্মী নন, কিন্তু বন্ধুদের অনুরোধ ফেলতে না পেরে দেওয়াল লিখে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, "২০১৫ সালের পুরসভার ভোট থেকে চীনা ভাষায় দেওয়াল লেখা শুরু হয়েছে। দেওয়ালে নিজের ভাষায় ভোটের প্রচার দেখতে ভালই লাগে। আবারও লিখব। এই শহরটা তো আমাদেরও, তাই না!"
কলকাতার চীনা বাসিন্দারা ট্যাংরা ছাড়াও মধ্য কলকাতার বেশ কিছু এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছেন। গত আড়াই দশক যাবত টেরিটি বাজারে চীনা ব্রেকফাস্ট বিক্রি করেন বছর পঞ্চাশের ওয়াং সু। তিনি বলেন, "আমাদের এই তল্লাটে কেউ কখনও চীনা ভাষায় দেওয়াল লিখেছে বলে তো মনে পড়ছে না। তবে ট্যাংরার উদ্যোগটার কথা জেনে খুব ভাল লাগছে।" সূত্রের খবর, এক সময় কলকাতায় প্রায় ২০ হাজার চীনা বাসিন্দা ছিলেন। দাঁতের ডাক্তারি আর জুতোর ব্যবসায় একতরফা দাপট ছিল তাঁদের। কিন্তু ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের পর থেকেই ক্রমশ কমতে থাকে এই সংখ্যা।
বাংলায় লাল রং যতই ফিকে হয়ে গিয়ে থাক, চীনে কিন্তু অব্যাহত কমিউনিস্ট দাপট। সেই চীনা ভাষায় দেওয়াল সাজানো নিয়ে কী ভাবছেন কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী? প্রচারের ফাঁকে মালা দেবী বললেন, "এমনটাই তো হওয়া উচিত। শহরের প্রতিটি বাসিন্দার প্রতিনিধি হয়ে উঠতেই চাইছি।"