ভাঙড়েও ভরাডুবি! পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের জেরে গত দু-বছর খবরের শিরোনামে ছিল ভাঙড়। আন্দোলনের জেরে ভাঙড়ের একাংশে কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল তৃণমূল। এলাকায় একতরফা আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সিপিআই-এমএল (রেড স্টার) সমর্থিত জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির। এখনও ভাঙড়ের মাছিভাঙা, খামারাইট, পোলেরহাট-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় তৃণমূলের কার্যত প্রবেশ নিষেধ।
লোকসভা নির্বাচনে কমিটি যাদবপুর কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছিল। সিপিএম নেতারা আশা করেছিলেন, আন্দোলনের এলাকা থেকে বড় অঙ্কের লিড পাবেন বামপ্রার্থী। কিন্তু বৃহস্পতিবার ফলপ্রকাশের পর যা দেখা গেল, তা একেবারেই উলটপুরাণ! তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দেওয়া তো দূরস্থান, সিপিএম প্রার্থী রয়েছেন তৃতীয় স্থানে। তাঁকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী।
সূত্রের খবর, পোলেরহাট-২ এলাকার মতো আন্দোলনের শক্ত ঘাঁটিতে এমন ফল হওয়ায় অবাক জমি কমিটির নেতারাও। তাঁদের মতে, ভাঙড়ে বিজেপির কার্যত কোনও সংগঠনই নেই। পোস্টার, দেওয়াল লিখন কিছুই তেমন করতে পারে নি গেরুয়া শিবির। যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা নিজেও খুব একটা সময় দেন নি আন্দোলনের আঁতুড়ঘরকে। অন্যদিকে, বিকাশ প্রথম থেকে ভাঙড়ের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছিলেন। প্রচারপর্বে চষে ফেলেছেন গ্রামের পর গ্রাম। তাঁর পক্ষে প্রচারও হয়েছিল জোরদার। তা-ও কেন এমন ফল, তারই উত্তর খুঁজছেন জমি কমিটির নেতারা। তাঁদের প্রাথমিক অনুমান, তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে মেরুকরণের তীব্র চোরাস্রোত বইছিল। বাহ্যত তার কোনও হদিশ পাওয়া যায় নি। ফলে দীর্ঘদিন কমিটির মিছিলে বিকাশের সঙ্গে হাঁটা ব্যক্তিও ভোট দিয়েছেন পদ্মফুলে।
জমি কমিটির নেতা মির্জা হাসান বলেন, "অপ্রত্যাশিত ফল। বিকাশবাবু আমাদের জন্য এত লড়লেন, তাও তাঁকে লিড দিতে পারলাম না। আসলে মানুষ মেরুকরণের প্রভাবে ভাগ হয়ে গিয়েছেন। তৃণমূলকে হারাতে পারবে কেবল বিজেপি - এমন ভাবনা থেকেই এই অঘটন। তবে আমরা লড়াই করব।"
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, "সাম্প্রদায়িক মেরুকরণে ভোট হয়েছে। হিন্দু-মুসলমান বিভাজনের ভিত্তিতে ভোট। আমরা সেই মেরুকরণ রুখতে পারি নি। সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্যই পারি নি। আমরা যে জিততে পারি তা লোকে বিশ্বাস করেনি। সেটা আমাদের ব্যর্থতা।"
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভাঙড়। জমি কমিটি ও সিপিএমের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাত থেকে তাঁদের উপর হামলা শুরু করেছে তৃণমূল। সুজনবাবু বলেন, "রাতভর তৃণমূলের গুণ্ডারা তাণ্ডব চালিয়েছে। আজ সকালে গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ করলে ওরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।"