রাজনীতি একমুখী হয় না। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বীরভূমের ভোটেও তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল তাঁর বিরোধী হিসেবে একা অমিত শাহ-স্মৃতি ইরানির বিজেপি শুধু নয়, চতুর্মুখী লড়াইয়ের মুখে পড়বেন। মঙ্গলবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, দলের জাতীয় কংগ্রেস কমিটির পর্যবেক্ষক তরুণ গগৈ প্রমুখ গোটা টিম নিয়ে রামপুরহাটে আইন অমান্য করতে এসে সরাসরি তোপ দাগলেন অনুব্রতর শাসনকে।
তরুণ গগৈ, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখপাধ্যায়ের পুত্র অভিজিৎ, প্রদীপ ভট্টাচার্যদের পাশে নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে সোমেনবাবু বললেন, “প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে বলছি, লিখে নিন, এরাজ্যে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।” সোমেনবাবুর কথায় সোৎসাহে সায় দিলেন উৎফুল্ল তরুন গগৈ সহ প্রদেশ নেতারা।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর রথযাত্রা হওয়া দিয়ে বীরভূমের রামপুরহাটে রাজনৈতিক চাপান উতোর শুরু। রথের বিরুদ্ধে সিপিআইএম-এর বিমান বসুর পদযাত্রা যেমন হয়েছিল, তেমন তৃণমূলের মহামিছিলের পাশাপাশি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের জনসভা – সব হলেও কংগ্রেস ময়দানে ছিল না। মঙ্গলবার আইন অমান্য কর্মসূচীর ডাক দিয়ে জমায়েত করে নেতাদের মুখরক্ষা বলুন বা দলের সম্মান রক্ষা, পুরোটাই করলেন বিধায়ক মিল্টন রশিদ।

জনসভায় এআইসিসি-র প্রতিনিধি গগৈ তৃণমূলকে কটাক্ষ করেন, বলেন, “ব্রিগেড ভরিয়ে প্রধানমন্ত্রী যদি হওয়া সম্ভব হতো, তবে ব্রিগেড ভরানোই প্রধানমন্ত্রী দাবিদারদের লক্ষ্য হতো।” উল্লেখ্য, কংগ্রেসের জাতীয় স্তরের নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে ব্রিগেডে বক্তব্য রাখলেও গগৈয়ের বিদ্রুপ, “ব্রিগেডে জনসমাগম ততটা হয় নি যতটা মঞ্চে ভীড় হয়েছিল”। আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে সোমেনবাবু সরাসরি বলেন, “রাজ্য জুড়ে অন্যায়ের অনেক প্রতিবাদ তো করে চলেছে কংগ্রেস কর্মীরা, এবার প্রতিরোধে নামার দিন এসেছে।”
বিজেপি-তৃণমূল বিরোধীতাই যে দলের কর্মীদের উজ্জীবিত রাখার ভোকাল টনিক, সেটা বুঝে সরাসরি তৃণমূলের উগ্র বিরোধিতায় সরব ছিলেন উপস্থিত সমস্ত কংগ্রেস নেতা। জনসভা হলো, নেতা-কর্মীরা শুনতে এসেছিলেন কিঞ্চিৎ ম্লান হয়ে যাওয়া নেতাদের জোরালো বক্তব্য, সেরকম কথাই সবাই বললেন। বললেন প্রণব পুত্র তথা সাংসদ অভিজিৎ মুখার্জিও, অনুব্রতকে “মোটা কেষ্ট” বলে বিদ্রুপ করলেন, বললেন, “অধীরের মতন নেতা এখানেও আছেন। মানুষ কংগ্রেসকেই ভোট দিচ্ছেন, নামটাই আলাদা।” তৃণমূল “ব্রিগেড ভরাতে পারেনি” বলেও কটাক্ষ করলেন অভিজিৎ। কিন্তু বামফ্রন্ট সম্বন্ধে আশ্চর্যরকম নীরব সবাই। তবে কি আগামীতে জোটের পথ খুলে রাখলেন কংগ্রেস নেতারা? প্রশ্ন উঠছেই।