Advertisment

আজ নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই কোচবিহারে বিজেপি-র 'আইটি যোদ্ধা' দীপকের

দীপকের দাবি, তাঁর মতো কর্মীদের জন্যই পার্টির প্রচার জেলার এমন এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, যেখানে "তৃণমূলী সন্ত্রাসের" জন্য বিজেপি কর্মীদের পক্ষে সশরীরে প্রচার একরকম অসম্ভব।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
lok sabha polls 2019 coochbehar west bengal bjp

কাজে ব্যস্ত দীপক দাস। ছবি: পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

চোখ স্থির দু'হাতে ধরা দুটো সেলফোনে, পাশে রাখা চার্জার। কোন রাজনৈতিক সভায় হোক বা পার্টি অফিসে, বাড়িতে হোক বা গোপালপুর গ্রামে নিজের ওষুধের দোকানে, যেখানেই যখন থাকুন, দীপক দাসের ব্যস্ততার শেষ নেই। ৩৬ বছরের দীপক বিজেপি-র প্রধান 'আই টি-যোদ্ধা' কোচবিহারে, যেখানে প্রথম দফার লোকসভা নির্বাচনে ভোট হচ্ছে আজ। "আমি জেলায় পার্টির আইটি সেলের আহ্বায়ক। ১,১১৪ টা হোয়াটস্যাপ গ্ৰুপের অ্যাডমিন। পার্টির ফেসবুক পেজটা আমিই দেখি, টুইটারের ট্রেন্ড ফলো করি," এক নিঃশ্বাসে বলে যান দীপক।

Advertisment

এতেই শেষ নয়। দীপকের দাবি, তাঁর মতো কর্মীদের জন্যই নিঃশব্দ হাতিয়ার হিসেবে পার্টির প্রচার জেলার এমন এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, যেখানে "তৃণমূলী সন্ত্রাসের" জন্য বিজেপি কর্মীদের পক্ষে সশরীরে প্রচার একরকম অসম্ভব।

"দুটো নম্বর আছে আমার। একটাতে আমি ২২৯ টা গ্ৰুপের অ্যাডমিন, অন্যটায় ৮৮৫ টার," বলতে থাকেন দীপক, "প্রতি গ্ৰুপে কমপক্ষে ৩০ জন মেম্বার, আর ম্যাক্সিমাম ২৫০। সংখ্যাটা রোজই বদলায়, কেউ বেরিয়ে যায়, আবার কাউকে অ্যাড করা হয়। সকাল ছ'টা থেকে একটা মুহূর্তও সময় নষ্ট করি না আমি, বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইকের সময় তো টানা ২৪ ঘন্টা খেটেছিলাম।"

আরও পড়ুন: কোচবিহার-আলিপুরদুয়ার, ভোটের আগেই হিসেব-নিকেশ

দীপকের পড়াশুনো ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত। আর্থিক সঙ্গতির অভাবে পড়াশুনো আর বেশি এগোয়নি। ২০১৪-য় "নরেন্দ্র মোদীকে দেখে" অনুপ্রাণিত হয়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই দীপক পান ব্লকের সাধারণ সম্পাদকের পদ। দীপকের কথায়, "২০১৫-য় একটা অ্যানড্রয়েড ফোন কিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় পার্টির হয়ে প্রচার শুরু করি। এ বছর পার্টির থেকে আমাকে দশ হাজার টাকার ফোন কিনে দেওয়া হয়েছে, সঙ্গে পোর্টেবল চার্জার। আমার যাতায়াতের খরচও দলই মেটায়।"

দীপক জানাচ্ছেন, বিজেপি-র রাজ্য আইটি সেল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি, "হাওড়াতে আমাদের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের একটা মিটিংয়ে আমি উপস্থিত ছিলাম। অমিতজি আমাদের 'আইটি যোদ্ধা' আখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের কী করা উচিত, এবং কী উচিত নয়।"

কোচবিহারে দীপকের টিমে সদস্য সংখ্যা ৪০। মূল হাতিয়ার বলতে সেলফোন এবং দুটো ভাড়া করা ডিএসএলআর ক্যামেরা। ছোটখাটো দু'একটা সমস্যা ছাড়া দীপক দিব্যি খুশি নিজের কাজ নিয়ে, "আমার বাইক আছে। কিন্তু চালাতে পারি না, কারণ দুটো হাতের দুটো সেলফোনে সবসময় চোখ রাখতে হয়। দলের কোন বার্তা থাকলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা 'লাইক' করি,' শেযার করি এবং চেষ্টা করি সেটা 'ট্রেন্ড' করাতে।"

অন্য ধরণের 'অপারেশন'-ও আছে অবশ্য। দীপক স্বীকার করে নেন, মাঝেমাঝে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে তৃণমূলে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চালাতে হয় তাঁর টিমকে, "তবে তৃণমূলের ফেক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা অনেক বেশি। আমার এবং আমার সহকর্মীদের অ্যাকাউন্ট জেনুইন, কিন্তু অনেক সমর্থক আছেন যাঁরা নিজেদের অ্যাকাউন্ট থেকে তৃণমূলের সমালোচনা করতে ভয় পান। এঁরা ফেক প্রোফাইল থেকে তৃণমূলের সমর্থক হিসেবে টিএমসি -র গ্ৰুপগুলোয় ঢোকেন এবং নজর রাখেন। আর, আমাদের জানাতে থাকেন, কী ঘটছে সেখানে। তৃণমূলও একই জিনিস করে।"

দীপকের দাবি, "আমাদের নেটওয়ার্ক যথেষ্ট বিস্তৃত। আমাদের টিম এবং সমর্থকরা নজর রাখে বিপক্ষ দলগুলোর কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির উপর। এই তো সেদিন একটা ছবি পেলাম, যেখানে বিপক্ষ দলের স্থানীয় এক নেতাকে 'আপত্তিকর' অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সেটা ভাইরাল করে দিলাম।"

আরও পড়ুন: আজ ভোট, বঞ্চনার আলোচনায় মশগুল ছিটমহল

পার্টির অ্যাকাউন্টগুলোর প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করার আরও উপায় আছে, বলছেন দীপক, "দেখুন, আমি যদি শুধুই দলের মেসেজ পোস্ট করতে থাকি, সহজে কেউ ফলো করবে না। তাই আমি গুরুত্বপূর্ণ খবর শেয়ার করি, নানা ইস্যুতে আলোচনা করে লোকের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করি, আর তারপর দলীয় বার্তা পোস্ট করি কয়েকটা।"

তবে এই কাজের ঝক্কিও আছে, অকপটে মানছেন দীপক, যাঁকে মুখোমুখি হতে হয়েছে 'সোশ্যাল মিডিয়ায় হুমকির', যাঁর ওষুধের দোকানে "বিরোধী দলের হামলাও" হয়েছে। দীপক সাফ জানাচ্ছেন, "আমি পার্টির হয়ে কাজ করি, সবাই জানে। কিন্তু খোলাখুলি পতাকা নিয়ে প্রচার করাটা আমাদের কাজ নয়। অনেকেই পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করেন। কোন বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তর্ক জোড়ার আগে আমরা শিক্ষক-অধ্যাপকদের সঙ্গেও কথা বলি বিষয়টা বুঝতে। যাঁদের মধ্যে কিছু প্রবীণ বামপন্থীও আছেন।"

আজ কোচবিহারে ভোট চলছে। দীপক আজ তুমুল ব্যস্ত, "বুথে সন্ত্রাস চালাতে পারে তৃণমূল। আমাদের কাজ হল সেই সন্ত্রাসের ছবি আর ভিডিও জোগাড় করে পার্টি নেতৃত্বকে জানানো, নির্বাচন কমিশন-পুলিশ এবং আপনার মতো সাংবাদিকদের জানানো। আমাদের কাজ ভোটেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, চলবে ভোটের পরেও।"

ও হ্যাঁ, বলা হয়নি, দীপকের একটা তৃতীয় ফোনও আছে। "ওটা শুধু কথা বলার জন্যই," হাসেন কোচবিহারে গেরুয়া ব্রিগেডের প্রধান 'আইটি যোদ্ধা'।

Advertisment