আসন প্রাপ্তির সম্ভাবনার নিরিখে তৃণমূল-বিজেপি-র তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও নির্বাচনের আগে বড় চমক দিতে চলেছে বঙ্গ-সিপিএম। সূত্রের খবর, প্রতিটি কেন্দ্রের এলজিবিটিকিউ কমিউনিটির মানুষদের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলবেন বাম প্রার্থীরা। তাঁদের সমস্যার কথা শোনার পাশাপাশি ব্যাখ্যা করবেন দলীয় ইস্তেহারের। বামেদের দাবি, এমন উদ্যোগ দেশে এই প্রথম।
সিপিএম সূত্রের খবর, আগামী ২১ এপ্রিল উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী কনীনিকা ঘোষ বসু প্রথম তাঁর কেন্দ্রের এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর অন্য কেন্দ্রের প্রার্থীরাও একই ধরনের আলোচনার উদ্যোগ নেবেন। সিপিএমের এক নেতার কথায়, "এমন উদ্যোগ দেশে এই প্রথম। আমরা প্রান্তিক যৌনতার মানুষদের দাবি নিয়ে বহুদিন যাবত লড়াই করছি। আমাদের ইস্তেহারেও সেই লড়াইয়ের ছাপ রয়েছে। ভোটের সময় হরেক ইস্যুর ভিড়ে এই মানুষদের স্বর যাতে হারিয়ে না যায়, তাই এমন উদ্যোগ।"
আরও পড়ুন: এই ভোটে কি দিন বদলাবে রূপান্তরকামীদের?
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলের ইস্তেহারে এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর মানুষদের ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়েছে ঠিকই, তবে এই নিয়ে সবচেয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন বামেরাই। সিপিএমের ইস্তেহারে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের আদলে সমলিঙ্গের সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সিপিআই, সিপিআই (এমএল)-এর মতো দলও প্রান্তিক যৌনতার মানুষের অধিকার চেয়ে সরব হয়েছে। কংগ্রেসের ইস্তেহারে রূপান্তরকামীদের জন্য বৈষম্যমুক্ত আইন তৈরির কথা বলা হলেও নির্দিষ্টভাবে কোনও পরিকল্পনার উল্লেখ নেই। বিজেপি-র ইস্তেহারেও প্রান্তিক যৌনতার মানুষদের ক্ষমতায়নের কথা আছে।
কনীনিকার কথায়, "এটা শুধু নির্বাচনের বিষয় নয়। বছরভর আমরা এই দাবিগুলি নিয়ে আন্দোলন করি। কিন্তু নির্বাচনের আগে যাঁদের জন্য এই লড়াই, তাঁদের সঙ্গে কথা বললে ওঁরাও যেমন ইস্তেহারের পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাবেন, আমরাও বহু কিছু শিখতে পারব। আগামীর আন্দোলনের সহায়ক হবে এই উদ্যোগ।" সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর রাজ্য কমিটির নেতা তথা এলজিবিটিকিউ অধিকার আন্দোলনের কর্মী অপ্রতীম রায় বলেন, "সমকামী, রূপান্তরকামী সহ প্রান্তিক যৌনতার মানুষের লড়াই সমাজের সার্বিক পরিবর্তনের লড়াইয়ের থেকে আলাদা নয়। বামপন্থীরাই এই ইস্যুতে সবচেয়ে সংবেদনশীল। এমন উদ্যোগ এলজিবিটিকিউ অধিকার আন্দোলনকে শক্তিশালী করবে।"
সাধুবাদের পাশাপাশি অবশ্য সংশয়ও রয়েছে। সমকামী হওয়ার 'অপরাধে' শহরের একটি নামজাদা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন অভিজিত কুণ্ডু। অধুনা হায়দ্রাবাদের বাসিন্দা ওই যুবক বলেন, "প্রাথমিক ভাবে খুবই আশাপ্রদ উদ্যোগ বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু সবটুকুই ভোটের দিকে তাকিয়ে নয় তো?"