পুরনিগম ও পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের রাখা যাবে না। আদর্শ আচরণবিধি যতদিন কার্যকর থাকছে ততদিন এই নির্দেশ বলবৎ থাকবে। রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে পুরনিগম ও পৌরসভার প্রশাসক হিসাবে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সরানোর নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে নির্দেশ কার্যকর করতে হবে। নির্বাচন নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য করতেই কমিশনের এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়ছে।
কমিশনের নির্দেশ, রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নগরোন্নয়ন এবং কর্মিবর্গ দফতরের সচিবকে নিয়ে তৈরি একটি কমিটি মেয়াদউত্তীর্ণ পুরসভা ও পুরনিগমগুলির প্রশাসনের কাজ দেখাশোনার জন্য সরকারি অফিসারদের নিয়োগ করবে। সংবিধানের ৩২৪ ধারা অনুসারে কমিশনের ক্ষমতা বলে এই নির্দেশ বলে জানা গিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মোট ১৩৫টি পুরনিগম ও পুরসভার মধ্যে ১২৫টির মেয়াদ ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসেই শেষ হয়ে গিয়েছে। গত এপ্রিল থেকে রাজ্যের ১১২ টি পুরসভায় ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জেরে নির্বাচন করা যায়নি। ফলে ওইসব মেয়দ উত্তীর্ণ পুরনিগম ও পুরসভা প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। সংশ্লিষ্ট পুরনিগম ও পুরসভার নির্বাচিত মেয়র, চেয়ারম্যান, মেয়র পারিষদকেই ফের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
তবে বিরোধীদের অভিযোগ ছিল পুর-নির্বাচনের হারের ভয়েই ভোট করাচ্ছে না রাজ্য সরকার। গত বছরই বিজেপি দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজ্যের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া পুরনিগম ও পুরসভাগুলিতে প্রশাসক পদ থেকে তৃণমূলের নেতাদের সরানোর দাবি তোলে। বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য রাখলে তাঁরা ভোটে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করতে পারেন বলে অভিযোগ করা হয়। এমনকী আদালতেও মামলা গড়ায়। কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্যদের সরানোর নির্দেশ না দিলেও যত দ্রুত সম্ভব মেয়াজ উত্তীর্ণ পুরনিগম ও পুরসভাগুলিতে নির্বাচনের কথা বলেছিল।
কমিশন অবশ্য নিরপেক্ষ ভোটের স্বার্থে বিরোধীদের দাবিকেই মান্যতা দিল। এই নির্দেশের ফলে আপাতত কলকাতা, বিধাননগর, আসানসোল সহ রাজ্যের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া পুরনিগম ও পুরসভাগুলি কোনও রাজনৈতিক দলের নেতার দ্বারা পরিচালিত হবে না।
এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধী দলগুলি। তবে, প্রতিবাদে মুখর তৃণমূল। সাসক দলের মুখপাত্রা কুণাল ঘোষ বলেছেন, 'মহামারী পরিস্থিতির জন্যই প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যে দল যেখানে ক্ষমতায় ছিল সেই দলের মেয়র, চেয়ারপার্সনরাই প্রশাসক ছিলেন। কমিশনের সিদ্ধান্তে পুর পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন