General Election 2019: সিনেমার পর্দায় কাঁটা তারের ভেদাভেদ মুছে দিয়ে দর্শকদের মন জয় করেছেন বাংলাদেশের ফিরদৌস। কিন্তু, সেই অভিনেতাই এবার বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের উৎসবে 'প্রচার করে' রীতিমতো বিপাকে। তাঁর ভিসা বাতিল করে দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
ভারতের নির্বাচনে কোনও বিদেশি প্রচার করলে, ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই নির্বাচন কমিশনের। সূত্রের খবর, এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম নেই এবং নির্বাচনী আচরণবিধিতে নেই কোনও উল্লেখ। খবর, ফিরদৌসের ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও নড়েচড়ে বসেছিল, সে খবর ছিল আগে থেকেই ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এ ব্যাপারে কলকাতার ফরেন রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও)-কে নির্দেশ অনুসারে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। এর আগে এই দফতর থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিল মন্ত্রক। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক আধিকারিক সংবাদ সংস্থা পিটিআই কে জানিয়েছেন, "ইমিগ্রেশন ব্যুরোর কাছ থেকে রিপোর্ট পেয়ে বাংলাদেশি নাগরিক ফিরদৌস আহমেদের ভিসা বাতিল করে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাঁকে ভারত ছাড়ার নোটিসও দেওয়া হয়েছে। কালো তালিকাভুক্তও করা হয়েছে ওই ব্যক্তিকে।"
রায়গঞ্জের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কানহাইয়ালাল আগরওয়ালের হয়ে সোমবার 'প্রচার করেন' ফিরদৌস। তবে, খোদ তৃণমূল প্রার্থীই অবশ্য বলছেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এদিকে, বিজেপি এই ঘটনার প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। মঙ্গলবার কানহাইয়ালাল প্রার্থীপদ বাতিলের দাবিও জানিয়েছে পদ্ম ব্রিগেড।
বিজেপির অভিযোগ, গতকাল রায়গঞ্জে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করেন বাংলাদেশের নায়ক ফিরদৌস। সেই প্রচারের ভিডিও নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকের কাছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয় বিজেপি নেতৃত্ব। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও করেছে রায়গঞ্জের বিজেপি প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট অসীম চন্দ। তাঁদের বক্তব্য, এ দেশে আসার ভিসায় নির্বাচনী প্রচারের কোনও উল্লেখ ছিল কী? বিষয়টি তদন্ত করে দেখুক নির্বাচন কমিশন।
শুধু প্রার্থী হওয়াই নয়, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণও ইদানিং দস্তুর হয়ে গিয়েছে। এবার রায়গঞ্জ কেন্দ্রে এবার প্রকৃতই চতুর্মুখী লড়াই হচ্ছে। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল এই কেন্দ্রে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিল। এবার ইসলামপুরের বিধায়ক কানহাইয়ালালকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। যদিও ২০১৬ তে কানহাইয়া কংগ্রেসের হয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন। সব মিলিয়ে ভোটের ময়দানে কঠিন লড়াই। এমতাবস্থায় সোমবার রায়গঞ্জ শহরে তৃণমূলের প্রচারে টলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীর সঙ্গেই দেখা যায় বাংলাদেশের সিনেমা জগতের পরিচিত মুখ ফিরদৌসকেও। এরপরই ভারতের নির্বাচনে এক বিদেশির অংশগ্রহণ নিয়ে তেতে ওঠে রাজনীতি।
উত্তর দিনাজপুরে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ সেন অভিযোগ করেন, জেএমবি যোগ রয়েছে তৃণমূলের। ফিরদৌসের প্রচারে অংশ নেওয়া তা প্রমাণ করছে। যদিও মজার বিষয়, যাঁর জন্য প্রচার অর্থাৎ তৃণমূল প্রার্থীই না কি জানেন না, ফিরদৌস তাঁর হয়ে প্রচারে অংশ নিয়েছেন বলে। ফিরদৌসের প্রচার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কানহাইয়াবাবু বলেন, "আমার জানা নেই"। ওই দিনের প্রচারে অংশ নেওয়া এক টলি অভিনেতা বলেছেন, "প্রচারে গিয়ে বিতর্কে জড়াব, ভাবতেই পারছি না। এসব আমাদের ম্যানেজাররা ঠিক করেন"।
মঙ্গলবারই কলকাতায় বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, "বাংলাদেশ থেকে আসা চিত্রাভিনেতা তৃণমূলের মঞ্চ আলো করছেন এবং তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার জন্য় বলছেন। ফিরদৌস আহমেদের একটা ভিডিও ফুটেজ গতকাল দুপুরে আমি সিইও-র কাছে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাই। অফিসিয়ালি অভিযোগ জানাই, তৃণমূলের হয়ে প্রচার করছে বাংলাদেশি। আইনগতভাবে বিষয়টা খতিয়ে দেখুন। সিইও জানান, আমরা বিষয়টা উপরমহলে জানিয়েছি"।