কলকাতা ময়দানের সভায় আসছেন সেই ১৯৬৭ সাল থেকে। ব্রিগেডের সমাবেশে মাঠ ভরাতে এসেছেন নয় নয় করে অন্তত বার তিরিশ। তার বেশি বই কম নয়। কিন্তু সে সবই ছিল লাল পতাকার সমাবেশ। এই প্রথম বিজেপির সভায় এসে খানিকটা যেন অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়েছেন পঁচাত্তর ছুঁই ছুৃই বৃদ্ধ ব্রজেন হালদার। প্রায় একই অবস্থা তাঁর প্রতিবেশী সুমিত্রা নস্করেরও।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় গিয়ে দেখা হল দক্ষিণ ২৪ পরগণার কুলতলির মধুসূদনপুরের বাসিন্দা ব্রজেন এবং সুমিত্রার সঙ্গে। বিজেপির তৈরি করা ছাউনি থেকে বেশ কিছুটা দূরে মাঠের মধ্যে বসে ছিলেন দু'জনে। কখন এসেছেন? ব্রজেনবাবু বলেন, "এসেছি তো অনেকক্ষণ! বাসে করে গ্রামের আরও অনেকের সঙ্গে এসেছি। কিন্তু এই ছাউনিটা কেন করেছে জানি না। এর আগে যতবার এসেছি, কখনও তো এমন ছাউনি দেখিনি, তাই বাইরেই বসেছি।" সুমিত্রার কথায়, "প্রথমে ভেবেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শুনতে পারব না এত দূর থেকে। কিন্তু এখন দেখছি অনেক টিভি লাগিয়েছে। কোনও অসুবিধা হবে না।"
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আঁচ পোয়াতে মোদীর সভায় ব্রিটিশ কূটনীতিক, তুললেন দেদার সেলফি
ব্রজেনবাবুর বয়স প্রায় পঁচাত্তর। ছোটবেলা থেকে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রথমে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি, পরে সিপিএম। ব্রিগেডে প্রথম এসেছিলেন কবে? ব্রজেন বলেন, "সেটা ছিল জ্যোতি বসুর সভা, বছরটা মনে নেই। তবে কলকাতায় মিটিং শুনতে প্রথম আসি ১৯৬৭ সালে। সেবার প্রথম কংগ্রেস হারল, যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় এল।" সেই শুরু। তারপর থেকে প্রতি বছর নিয়ম করে লাল পতাকার সভায় যোগ দিতে ট্রেনে উঠতেন।
এত বছর পরে বিজেপিতে গেলেন কেন? ব্রজেন বিশদ হন, "কুলতলিতে চিরকাল মূল লড়াইটা হল দুটো লাল ঝান্ডা পার্টির - এসইউসি আর সিপিএম। দীর্ঘদিন যাবত আমরা জিততে পারতাম না, এসইউসি জিতত। আর ছিল লাগামছাড়া খুনোখুনি। এসইউসির দু'জন মরল তো পাল্টা সিপিএমের তিনজন। এই রকম করেই চলছিল। ২০১১ সালে সিপিএম আচমকা সিটটা জিতে গেল। তারপর থেকেই এসইউসির দাপট কমতে শুরু করল। তৃণমূল এল। ২০১৬ সালের ভোটেও সিপিএম জিতেছে, কিন্তু তারপর থেকে ধীরে ধীরে দুই লাল পার্টিরই হাল খারাপ। তাই তৃণমূলকে হারাতে আমরা সব বিজেপি হয়েছি।"
সুমিত্রা জানান, গত পঞ্চায়েত ভোটে তাঁদের এলাকায় বিজেপি জিতেছে। তাঁর কথায়, "যার সময়, তার সঙ্গেই থাকতে হবে। তাছাড়া হিন্দু-মুসলমানের ব্যাপার আছে। সিপিএম-এসইউসি সেসব নিয়ে কিছু করেনি, বিজপি বলেছে করবে।"
মনেপ্রাণে বিজেপি হয়েও ব্রিগেড নিয়ে যেন কিছুটা ধন্দেই পড়েছেন ব্রজেন। মোদীর বক্তৃতা শোনার ফাঁকে বললেন, "বিজেপির সবকিছুই একটু অন্যরকম। তিনটে স্টেজ, ছাউনি - এসব তো কখনও দেখিনি, তাই একটু অস্বস্তি হচ্ছে।" এরপরেই তাঁর সংযোজন, "অবশ্য বিজেপি অনেক বড় দল। দিল্লিতে ক্ষমতায় আছে। তাদের ব্যাপারস্যাপার আলাদা হবেই।"