রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনী প্রচারে বারে বারে উঠে এসেছে সংখ্যালঘু প্রসঙ্গ। নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক যে একটা বড় টার্গেট রাজনৈতিক দলগুলির কাছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নজরে থাকলেও ২০১৯-এর তুলনায় রাজনৈতিক দলগুলি চলতি লোকসভা নির্বাচনে অনেক কম সংখ্যক মুসলিমকে প্রার্থী করেছে। ২০১৯-এ মোট ১১৫ জন মুসলিম প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও এবারে সেই সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ২৪-এর নির্বাচনী ময়দানে মাঠে নেমেছেন মাত্র ৭৮ জন মুসলিম প্রার্থী।
বিজেপি চলতি লোকসভা নির্বাচনে একজন মুসলিম প্রার্থীকে প্রার্থী করেছে। বিহারে বিজেপির সহযোগী জেডি(ইউ) আরও একজনকে প্রার্থী করেছে। প্রধান বিরোধী দলগুলির মধ্যেও, মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রার্থীর সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। কংগ্রেস থেকে তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি থেকে আরজেডি, এনসিপি থেকে সিপিআই(এম) সর্বত্রই ছবিটা মোটামুটি একই। এবারের লোকসভার ময়দানে ৭৮ জন মুসলিম প্রার্থীকে মাঠে নামানো হয়েছে। এই সংখ্যাটাই ২০১৯ সালে ছিল ১১৫।
২০১৯ সালে, ২৬ জনের মতো মুসলিম প্রার্থী সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কংগ্রেস ও টিএমসি থেকে চারজন, বিএসপি ও এসপি থেকে তিনজন এবং এনসিপি ও সিপিআই(এম)-এর একজন করে। অন্যরা অসমের এআইইউডিএফ, তৎকালীন লোক জনশক্তি পাসওয়ান, আইইউএমএল এবং জম্মু-কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্সের।
বিএসপি ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৩৫ জন মুসলিমকে প্রার্থী করেছে। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশে অর্ধেকেরও বেশি, ১৭ জন রয়েছেন। মধ্যপ্রদেশের চার জন ছাড়াও, বিহার ও দিল্লিতে তিন জন, উত্তরাখণ্ডে দু জন, এবং রাজস্থান, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানা এবং গুজরাটে একজন করে মুসলিম প্রার্থীকে ভোটযুদ্ধে মাঠে নামিয়েছে।
বিএসপি এর আগের ১৯-এর লোকসভা ভোটে ৩৯ জন মুসলিমকে প্রার্থী করেছিল। এইবার উত্তর প্রদেশে বিএসপির ১৭ জন মুসলিম প্রার্থী থাকলেও, ২০১৯ সালে, রাজ্যে মাত্র ৬জন মুসলিমকে প্রার্থী করেছিল দল।
কংগ্রেস এবার লোকসভা নির্বাচনে ১৯ জন মুসলিমকে প্রার্থী করেছে। পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যা ৬ , তারপরে অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম, বিহার এবং উত্তর প্রদেশে ২ জন করে এবং কর্ণাটক,তেলেঙ্গানা ও লাক্ষাদ্বীপ কেরল, ওড়িশায় একজন করে মুসলিমকে প্রার্থী করেছে দল।
২০১৯-এর ভোটে কংগ্রেস ৩৪ জন মুসলিমকে প্রার্থীকে প্রার্থী করে। তাদের মধ্যে ১০ জন বাংলায় এবং ৮ জন ইউপিতে। এর মধ্যে জিতেছে মাত্র চারটি আসনে। কিন্তু কংগ্রেস ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ১০০ টি কম আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে চলতি নির্বাচনে। ১৯-এ কংগ্রেস ৪২১টি আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও এবার দল মাত্র ৩২৮টি আসনে লড়াইয়ে নেমেছে।
টিএমসি এবার তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মুসলিমকে প্রার্থী করেছে। মোট ৬ জনকে ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেছে দল। এর মধ্যে ৫ জনই লড়ছেন বাংলা থেকে। এরপাশাপাশি অসমে একজন মুসলিমকে প্রার্থী করেছে দল। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৩।
মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছ থেকে জোরালো সমর্থন পাওয়া সত্ত্বেও, এসপি এবার মাত্র চারজন মুসলিম প্রার্থীকে ভোটযুদ্ধে নামিয়েছে। এসপির মুসলিম প্রার্থীদের মধ্যে এখন তিনজন উত্তর প্রদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, আর চতুর্থজন অন্ধ্র প্রদেশ থেকে লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছেন।
আরজেডি, মুসলিম-যাদব ভোটব্যাঙ্ক সহ আরেকটি দল, এবার বিহারে দুজন মুসমিলকে প্রার্থী করেছে, ২০১৯-এ এই সংখ্যা ছিল ৫।
২০১৯ সালে, বিজেপি ৪৩৬টি আসন জুড়ে তিনজন মুসলিমকে প্রার্থী করেছিল, যার মধ্যে কেউঅ জেতেনি। ২০১৪ সালে, বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪২৮টি আসনে। সেবার সাতজন মুসলিমকে প্রার্থী করেছিল দল, সেবারও কেউ জয়ী হয়নি। এবার বিজেপি ৪৪০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, যার মধ্যে একজন মুসলিম প্রার্থী রয়েছে।
সিপিআই এবং সিপিআই(এম) সম্মিলিতভাবে ২০১৯ সালে ১৩ জন মুসলিম প্রার্থীকে প্রার্থী করেছিল, যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সাতজন এবং লাক্ষাদ্বীপ এবং কেরলে ১ জন। এর মধ্যে মাত্র একটি আসন তারা জিতেছিল। ২০২৪ সালে, শুধুমাত্র সিপিআই(এম) মুসলমানদের প্রার্থী করেছিল, সব মিলিয়ে ১০ জন মুসলিমকে প্রার্থী করে। যার মধ্যে রয়েছে বাংলার পাঁচটি আসন, কেরলের চারটি এবং তেলেঙ্গানায় একটি আসন।
ছোট দলগুলির মধ্যে, AIMIM, IUML এবং AIUDF, মূলত মুসলিম স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যায়, বিভিন্ন রাজ্য জুড়ে কয়েকটি মুসলিম-অধ্যুষিত নির্বাচনী এলাকায় সম্প্রদায় থেকে প্রার্থী দিয়েছে।