ক্রিকেটার থাকার সময়েই গৌতম গম্ভীর মনের কথা স্পষ্ট বলার জন্য পরিচিত। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ডট কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারেও তাঁর রাজনীতি যোগ থেকে শুরু করে এমন অনেক কথাই অকপটে বললেন তিনি।
সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ
যখন আপনি খেলতেন সে সময় থেকেই সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয়ে আপনি মন্তব্য করতেন। এখন রাজনীতিতে নামলেন কেন?
আমি এসি ঘরে বসে সব ব্যাপারে টুইট করতে আর তারপর ভুলে যেতে চাই না। আমি টুইটার অ্যাক্টিভিস্ট হতে চাই না। আমি এমন একজন হতে চাই যে মাঠেঘাটে কাজ করতে চাই এবং যা নিয়ে টুইট করছি তা প্রয়োগও করতে চাই।
দ্বিতীয়ত আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছি। উনি গত পাঁচ বছরে সব ঠিক কাজ করেছেন, সে শক্তিশালী নেতৃত্বদান থেকে কঠোর সিদ্ধান্তগ্রহণ অবধি সব কিছুতেই। এই সময়ে দাঁড়িয়ে এরকম নেতৃত্বই আমাদের প্রয়োজন।
তৃতীয় যে কারণে আমি রাজনীতিতে এসেছি, তা হল দিল্লিবাসীদের প্রতি আপের বিশ্বাসঘাতকতা। ওরা আমাদের আবেগপ্রবণ করে তুলে সব ভোট নিয়ে নিয়েছে কিন্তু গত সাড়ে চার বছরে কিছুই করেনি। আমার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কৃতিত্ব অনেকটাই অরবিন্দ কেজরিওয়ালেরও।
আপনি অনেক দিন ধরে দুঃস্থ শিশুদের জন্য কমুনিটি কিচেন চালাচ্ছেন। এ কাজ কি আপনাকে কোনওভাবে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছে?
একেবারেই না। এ কাজ আমার ফাউন্ডেশনের এবং আমি আমার ফাউন্ডেশনকে রাজনীতির সঙ্গে জড়াতে চাই না, কারণ এ আমার হৃদয়ের অত্যন্ত কাছে এবং রাজনীতি থেকে অনেক দূরে থাকবে।
একমাস হয়ে গেল আপনি বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। রাজনীতির চাপ ক্রিকেটের থেকে কতটা আলাদা?
অনেকটাই আলাদা। আমি এরকম জীবনযাত্রায় কখনও অভ্যস্ত ছিলাম না। এটা দারুণ উত্তেজনার এবং চ্যালেঞ্জিংও। আগে আমি ছোট্ট পরিসরে থাকতাম যেখানে ক্রিকেটই ছিল সবকিছু এখন সারা শহর, এমনকি সারা দেশও আমার দিকে তাকিয়ে আছে, এটা রোমাঞ্চকর।
সম্প্রতি আপনার বিরুদ্ধে দুটি ভোটার আইডি কার্ড রাখার অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। আমার একটাই ভোটার আইডি রয়েছে, রাজিন্দর নগরে, আমি সেখানেই ভোট দিয়েছি। ছোটবেলায় দাদুঠাকুমার সঙ্গে রামজস রোডে থাকতাম, সেখানে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করিনি বা ভোটও দিইনি।
পশ্চিম দিল্লিতে জন্ম, বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও আপনি পূর্ব দিল্লি থেকে ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
আমি কোথায় থাকি তার ওপর কিছু নির্ভর করে না। আমার বাবা ৪৫ বছর ধরে পূর্ব দিল্লিতে ব্যবসা করছেন। আমি শহরটাকে ভাগ করতে চাই না। আমি জন্মেছি দিল্লিতে, বড় হয়েছি দিল্লিতে, পড়াশুনো করেছি দিল্লিতে। লোকজন প্রথমে দেশভাগ করেছে, তারপর রাজ্যভাগ করেছে এখন শহরও ভাগ করতে চাইছে। যেখান থেকেই আমি ভোটে দাঁড়াই না কেন, আমি দিল্লির ছেলে। আমার আশা সাড়ে চার বছর ধরে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হওয়া দিল্লিবাসীর জন্য আমি কিছু করতে পারব।
সম্প্রতি আপনি টুইটারে মেহবুবা মুফতির সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন যার জেরে মেহবুবা আপনাকে ব্লকও করে দেন। মেহবুবা এবং ওমর আবদুল্লা দুজনেই বলেছেন যে আপনি কাশ্মীর সম্পর্কে কিছু জানেন না, ফলে আপনার তা নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। আপনি নিজে কাশ্মীর ইস্যুকে কীভাবে দেখেন?
আমার ধারণা মেহবুবা এবং ওমর আবদুল্লা কাশ্মীরের জনসাধারণের সঙ্গে দীর্ঘ, দীর্ঘ দিন ধরে বিশ্বাসঘাতকতা করে আসছেন। কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থার জন্য আবদুল্লা এবং মুফতিরাই দায়ী।
এঁরা বছরের পর বছর ধরে জম্মু কাশ্মীর শাসন করে আসছেন এবং রাজ্যকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন যে যুবকের এখন পাথর ছোড়া দলে পরিণত হয়েছে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত সর্বত্র মানুষকে একই রকম সুবিধা দেওয়া উচিত, যেসব সুবিধা দিল্লি বা মুম্বইবাসী পেয়ে থাকেন।
কাশ্মীরের মানুষ বহু সুযোগসুবিধা, ন্যূনতম পরিকাঠামো থেকে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বঞ্চিত এবং আমার ধারণা এর জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মীরের রাজ্যপাট চালানো আবদুল্লারাই অনেকাংশে দায়ী।
আপনি সর্বদাই ভারতীয় সেনার পক্ষে বলে এসেছেন এবং তাদের সমর্থনে মুখও খুলেছেন। কিন্তু এবারের ভোটে আমরা দেখেছি রাজনীতিতে সেনাকে টেনে আনা হচ্ছে এবং নেতারা বলছেন ‘মোদীজি কে সেনা‘!
সশস্ত্র বাহিনীর রাজনীতিকরণে আমি কখনওই বিশ্বাস করিনি। সেনাবাহিনী সকলের জন্য, সারা দেশের জন্য, কোনও ব্যক্তিবিশেষের জন্য নয়। যদি কেউ এ ধরনের মন্তব্য করে থাকেন, সে তাঁদের ব্যক্তিগত অভিমত। সেনাবাহিনী নিয়ে আমি খুবই আবেগপ্রবণ।
আপনি কি কোনও না কোনও ভাবে ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন? ক্রিকেটের ধারাভাষ্য এবং রাজনীতির মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাবেন কীভাবে!
এখন আমার প্রথম কাজ রাজনীতি। বাকি সবই পরে আসবে। মানুষ ভাবতেই পারে যে এটা আমার দ্বিতীয় বা তৃতীয় পেশা, কিন্তু এখন এটাই আমার প্রথম পেশা। মানুষ খুঁটিয়ে দেখবেন আমি কতটা সময় রাজনীতিতে দিচ্ছি, কিন্তু সে প্রশ্নের উত্তর পূর্ব দিল্লির মানুষ দিতে পারবেন এক বছর পরে।
Read the Full Story in English