JD(S) সাংসদ প্রজ্জল রেভান্নার বিরুদ্ধে হাজার হাজার মহিলাকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ সামনে আসতেই ভোট আবহে দেশ জুড়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। এনিয়ে মোদী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবেগৌড়াকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বিরোধী দল। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দিরামাইয়াকে এই বিষয়ে চিঠি লিখে মহিলাদের সবধরণের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেওয়ার কথা বলেছেন। এদিকে একাধিক মহিলার ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকজন গত ১০ দিনে কর্ণাটকের হাসান জেলায় তাদের বাড়ি ছেড়েছেন।
হাসান জেডি(এস) প্রধান এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার শক্ত ঘাঁটি। দেবগৌড়ার নাতি প্রজ্জ্বল হাসান বিদায়ী সাংসদ এবং এবারের নির্বাচনে ফের জোটপ্রার্থী। ২৬ এপ্রিল হাসানে ভোটের পরপরই ভিডিও কাণ্ড সামনে আসতেই প্রজ্জ্বল দেশ জার্মানি চলে যায়। এদিকে ভিডিও কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে প্রজ্জ্বলের বাবা হলনারসিপুরের বিধায়ক এইচ ডি রেভান্নারও। শনিবারই তাকে বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়, অভিযোগ ওঠে বিশেষ তদন্তকারী দলকে অভিযানে বাধা দেওয়ার।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জেলার তিনটি শহর এবং পাঁচটি গ্রাম ঘুরে দেখেছে এবং বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথাও বলেছেন। তাদের কেউই নাম প্রকাশ করতে চাননি। উল্লেখ্য প্রজ্জ্বলের বিরুদ্ধে প্রথম এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল ২৮ এপ্রিল। একজন মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতেই সেই অভিযোগ দায়ের হয় সাংসদের বিরুদ্ধে। সেই মহিলার পরিবার এখন তাদের বাড়ি ছেড়েছে।
জানা গিয়েছে ওই মহিলা রেভান্নার বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি কখন বাড়ি ছেড়েছেন তা জানেন না প্রতিবেশিরা।
নিকটবর্তী একটি গ্রামে, যেখানে প্রাক্তন জেলা পঞ্চায়েত সদস্যা রেভান্নার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন, সেই গ্রামের স্থানীয় এক জেডি(এস) নেতা বলেন, অনেক মহিলা যারা আগে দলের হয়ে কাজ করেছিলেন তারা এখন আর কোনভাবেই দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না। “আমরা লক্ষ্য করেছি যে দলের অনেক মহিলা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রজ্জ্বলের সঙ্গে তাদের তোলা ছবি মুছে ফেলছেন। কিছু ক্ষেত্রে, অনেক পুরুষ তাদের স্ত্রীদের প্রজ্ব্বলের সঙ্গে মেলামেশা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই ঘটনা অনেক মহিলার জীবনকে তছনছ করে দিচ্ছে,”।
স্থানীয় এক নেতার কথায়, জেলা পঞ্চায়েত সদস্যা অভিযোগ করেছেন যে তাকে তিন বছর ধরে ধর্ষণ করা হয়েছিল এবং ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর থেকে সেই দলীয় কর্মী তার বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। “তিনি ২৪ এপ্রিল এখানে ছিলেন। ভিডিওগুলি পরের দিন প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর থেকে, আর এলাকায় পরিবারকে দেখা যায় নি। তিনি আরও বলেন, ভিডিও ক্লিপগুলি সামনে আসার পর থেকে মহিলাদের পরিচয় প্রকাশ্যে আসার পর বেশ পরিবারও হাসান ছেড়ে চলে গেছে।
স্থানীয় এক দোকানি বলেন, “মহিলাদের মুখ প্রকাশ করা একেবারেই ঠিক হয়নি। তারা আবার নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন কিনা সেটা এখন সংশয়”। এই পরিবারগুলি মামলা করতে চায়নি কারণ "রেভান্নার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করার পর হাসানে টিকে থাকা অসম্ভব"।
স্থানীয় জেডি(এস) নেতা অনেকেই দেবগৌড়ার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, " প্রজ্জ্বল যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। দেবগৌড়া তার জীবনের চার দশকেরও বেশি সময় উৎসর্গ তাঁর ও পরিবারের রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। প্রজ্জ্বলের এই কাণ্ড দলের ভাবমূর্তি একেবারে তলানিতে ঠেকিয়েছে"।
স্থানীয় এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন। প্রজ্জ্বল প্রায়ই গ্রামের ফার্মহাউসে যেতেন, যেখানেও কিছু ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ফার্ম হাউসের এক কর্মচারি বলেন, "প্রজ্জ্বল এখানে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে পার্টি করতে আসতেন। আমরা এর বাইরে কিছু জানি না,"। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জেলা গোয়েন্দা ইউনিট ভিডিও ক্লিপগুলি সম্পর্কে জানতেন, তবে বিষয়টির গভীরতা তীব্রতা সম্পর্কে জানতেন না। "