'কংগ্রেস গণতন্ত্রকে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করছে', দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনই মন্তব্য করেছেন প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।
কংগ্রেস ছেড়ে দফায় দফায় একাধিক শীর্ষ নেতা বিজেপিতে যোগ দানের বিষয়ে রাজনাথ সিং বলেন, 'যদি কেউ নিজে থেকে আমাদের কাছে এসে বলে 'আমি আপনাকে সমর্থন করতে চাই', আমরা কী না বলবো?'
এবারের নির্বাচনে বিজেপি ৪০০ আসন পারের লক্ষ্য সামনে রেখেছে। কতটা কঠিন এবারের লড়াই? কোন ইস্যুতে মানুষের কাছে পৌঁচ্ছাচ্ছে বিজেপি? এই প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমি বেশিরভাগই গত ১০ বছরে সরকারের পারফরম্যান্স মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সরকারের গৃহীত কল্যাণমূলক উদ্যোগ এবং প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্য নিয়ে কথা বলেছি। আমাদের সরকারের সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির মানুষের মধ্যে একটি বড় প্রভাব রয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও মোদী সরকারের একাধিক কল্যানমূলক প্রকল্প সম্পর্কে সচেতন। বৈশ্বিক মঞ্চে ভারতের অবস্থান নিয়ে মানুষ আজ গর্বিত' ।
বিরোধী ইন্ডিয়া জোট বারে বারে বলেছে ফের মোদী সরকার ক্ষমতায় ফিরলে দেশের সংবিধান পরিবর্তন করা হবে। সেই প্রশ্নে বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং বলেন, 'ইণ্ডিয়া জোট মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তারা সংবিধান বদলের কথা বলছে। কিন্তু আপনি যদি স্বাধীন ভারতের ইতিহাস দেখেন, তাহলে কংগ্রেসের শাসনকালে সংবিধানে ৮৫টি সংশোধনী আনা হয়েছিল। তারা গণতন্ত্রের শ্বাস রোধ করে জরুরী অবস্থা জারি করে। আমাদের জেলবন্দী করে রাখা হয়েছিল। আমি ১৮ মাস কারাগারে ছিলাম, যার মধ্যে দুই মাসেরও বেশি নির্জন কারাবাসে। আমার মায়ের মৃত্যুতেও আমাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়নি। তারা সংবিধান বদলের অভিযোগ আনছে এটা হাস্যকর'। সিং বলেন, 'মোদী সরকারের আমলে বিগর ১০ বছরে আমরা ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে পেরেছি'। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, 'আমরা বিরোধী মুক্ত ভারত চাই না। কিন্তু কংগ্রেস গণতন্ত্রকে গলা টিপে ধরেছে'।
দেশ জুড়ে ভোটের আমেজ। ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোট হবে ৭ ই মে। এর আগে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং নির্বাচন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প সহ অনেক বিষয়ে তার মতামত প্রকাশ করেছেন। রায়বেরেলি আসন প্রসঙ্গে রাজনাথ সিং বলেন, 'এখান থেকে রাহুল গান্ধী হারতে চলেছেন। আমরা ইতিমধ্যেই আমেঠিতে জিতেছি, রায়বরেলিতেও বিজেপি জিতবে। কংগ্রেসিরা চেয়েছিল রাহুল গান্ধী শুধুমাত্র আমেঠি থেকে নির্বাচনে লড়ুক। কেন তিনি সেখান থেকে লড়লেন না তা কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ বিষয়'।
কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্নিবীর প্রকল্প সম্পর্কে রাজনাথ সিং বলেছেন, 'এটি অনেক চিন্তাভাবনা করে আনা হয়েছে। এই প্রকল্প তরুণদের ভবিষ্যতকে নিরাপদ করতে চলেছে। এতে সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং আমরা সবাই তরুণদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন'।
রাজপুত সম্প্রদায় কি সত্যিই বিজেপির উপর ক্ষুব্ধ? কী দিলেন রাজনাথ সিং? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কড়া নিশানা করলেন ইণ্ডিয়া জোটকে। তিনি বলেন, 'উত্তর প্রদেশে এসপি-কংগ্রেস জোট কোনো কাজে আসবে না। বিজেপির নেতৃত্বে কেন্দ্রে তৃতীয়বারের মতো এনডিএ সরকার গড়তে চলেছে বলে দাবি করেন রাজনাথ সিং'।
তিনি আরও বলেন, 'অনেক ভেবেচিন্তে আমরা ৪০০ পারের স্লোগান দিয়েছি। এনডিএ এই লক্ষ্য অর্জন করবে'। রাজনাথ সিং দাবি করেছেন যে উত্তর প্রদেশে গতবারের চেয়ে বেশি আসন জিততে চলেছে বিজেপি। গত নির্বাচনে প্রায় ৫৭ শতাংশ মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল, তাই আরও বেশি লোক ভোট দেবে।
রাজনাথ সিং পশ্চিম ইউপিতে রাজপুতদের অসন্তোষের বিষয়কে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, 'প্রতি নির্বাচনেই এ ধরনের কথা বলা হয়। কখনও বিরোধীরা বলেন, ব্রাহ্মণরা মোদীর উপর ক্ষুব্ধ আবার কখন ও ওবিসিদের কথা বলা হয়। নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। বাস্তব হলো কোন অংশের মানুষই বিজেপির ওপর ক্ষুব্ধ নয়'।
প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় কম ভোটের প্রশ্নে রাজনাথ সিং বলেন, 'সমস্ত কর্মীদের জনগণের মধ্যে গিয়ে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিজেপি কর্মীরা গিয়ে জনসাধারণকে সরকারের কৃতিত্বের কথা জানাতে হবে এবং তাদের ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে'।
রাজনাথ সিং দক্ষিণ ভারতের ফল প্রসঙ্গে ভবিষ্যতবাণী করে বলেছেন, 'বিজেপি গত নির্বাচনে দক্ষিণ ভারতে একটি আসনও পায়নি। এবার সেখানে বিজেপি ভাল ফল করছে। আশা করা হচ্ছে, দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি থেকে বিজেপি ভালো আসন পাবে। আমি কেরল, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা ঘুরেছি। সেখানকার ভোটের পরিবেশ পুরোপুরি বিজেপির পক্ষে'।
আমেঠি ও রায়বেরেলিতেও জিতবে বিজেপি
রাজনাথ সিং দাবি করেছেন যে আমেঠি এবং রায়বেরেলি লোকসভা আসনেও বিজেপি জিতবে। ইউপিতে এসপি এবং কংগ্রেস জোট বিজেপিতে কোনও প্রভাব ফেলবে না। তিনি দাবি করেন, 'কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির সুফল জনগণ পাচ্ছে। আমরা কোনো বৈষম্য ছাড়াই সব ধর্ম ও বর্ণের জন্য কাজ করেছি। এটা জনগণ বুঝতে পেরেছে। তাই বিরোধীদের অভিযোগ বিশেষ প্রভাব ফেলবে না'।