যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে আজ পর্যন্ত কোনও দলই পরপর তিনবার জেতেনি। তৃণমূল কংগ্রেস কি এ রেকর্ড ভাঙতে পারবে?
এ প্রশ্ন করা হয়েছিল এক বর্ষীয়ান তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীকে। তিনি পিছিয়ে গেলেন সেই ১৯৮৪ সালে- যখন এক তরুণ মহিলা নেত্রী হারিয়ে দিয়েছিলেন এক প্রাজ্ঞ আইনজীবী তথা কমিউনিস্ট নেতাকে।
২০১৯ সালেও ছবিটা প্রায় এক, শুধু এবারের সংযোজন এক অভিনেত্রী।
তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয়বার জয়ের জন্য নির্ভর করছে ৩০ বছরের বাঙালি সিনেমা অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীর উপরে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৮৪ সালে ছিলেন কংগ্রেসের তরুণ নেত্রী- যিনি যাদবপুর কেন্দ্র থেকে হারিয়েছিলেন বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা তথা নামী আইনজীবী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে।
এবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মিমি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি - তাঁর মুখোমুখি সিপিএম প্রার্থী কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
বিজেপি এ কেন্দ্র থেকে দাঁড় করিয়েছে অনুপম হাজরাকে। তৃণমূল কংগ্রেসর এই সাংসদ ভোটের ঠিক আগে দল বদল করে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী দাঁড়িয়েছেন সুগত বসুর জায়গায়। হারভার্ডের প্রফেসর সুগত বসু ২০১৪ সালের তৃণমূলের হয়ে ভোটে জিতেছিলেন। মমতা জানিয়েছেন, সুগত বসুকে ফের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুমতি দেয়নি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়।
তরুণী এই অভিনেত্রীর রোড শো এবং সভায় বহুজনের জমায়েত হয়েছে, তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেছে প্রার্থীর জনপ্রিয়তার প্রতিফলন দেখা যাবে ভোটের ফলেও। তৃণমূলের দাবি নেতাজি সুভাষ বোসের উত্তরাধিকারীর চেয়ে বেশি ভোটে জিতবেন মিমি। সুগত বসু জিতেছিলেন ১ লক্ষ ২৫ হাজারের কিছু বেশি ভোটে।
২০০৯ সালেও তৃণমূল জিতেছিল এ আসনে। সেবার প্রার্থী ছিলেন সংগীতশিল্পী কবীর সুমন।
এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত ভাঙড় এলাকায় অন্তর্দ্বন্দ্ব দলের মাথা ব্যথার কারণ হলেও তৃণমূল নেতৃত্ব আশাবাদী যে তাঁদের ভোটযন্ত্র প্রার্থীকে জেতানোর ব্যাপারে একযোগে কাজ করবে।
এই কেন্দ্রে ভোট রবিবার।
সিপিএমের প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সারদা এবং নারদ কাণ্ডে আবেদনকারীদের আইনজীবী ছিলেন, যে দুটি মামলাতেই সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্টে সিবিআই তদন্তের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে বিকাশ ভট্টাচার্য নিজে মনে করেন, ভোটে কে দাঁড়াচ্ছে তার চেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় জনগণের ইস্যু।
সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বিকাশ ভট্টাচার্য বলেছেন, "বামপন্থীরা অন্য দলগুলির তুলনায় এগিয়ে আছে কেননা মানুষের সমস্যাগুলি নিয়ে অন্য কেউই কথা বলছে না।"
তাঁর অভিযোগ, "কর্মসংস্থান, শিল্প এবং আইনশৃঙ্খলার মত বিষয়ে- যেগুলি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা- সেগুলিকে এড়ানোর জন্য বিজেপি ও তৃণমূল ভোটারদের মধ্যে ধর্মীয় বিভাজন আনছে।"
যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে যেমন কলকাতার দক্ষিণ-পূর্ব ভাগের শহরতলি এলাকা রয়েছে তেমনই রয়েছে বারুইপুর ও ভাঙড়ের গ্রামীণ এলাকাও।
সোশাল ওয়ার্কের পিএইচডি তথা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনুপম হাজরা ২০১৯ সালে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েই যাদবপুর আসনের টিকিট পেয়েছেন।
জয়ের ব্যাপারে প্রত্যয়ী অনুপম বললেন, "মানুষ জানে লোকসভা নির্বাচন দেশের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা স্থির করার জন্য। ২০-৩০টা আসন নিয়ে মমতা ব্যানার্জি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, আর এবারের ভোটের পর সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে চলা সিপিএমের আর কিছু বলারও থাকবে না।"
২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে যাদবপুরে বিজেপির ভোট শেয়ার ছিল ১.৯ শতাংশ, ২০১৪ সালের ভোটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ শতাংশে।
২০১৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ৪৫.৯২ শতাংশ ভোট, সিপিএম পেয়েছিল ৩৬.০৮ শতাংশ ভোট। এই কেন্দ্র থেকে এবার কোনও প্রার্থী দেয়নি কংগ্রেস।
রাজ্যের সব চেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে যাদবপুর কেন্দ্রে। মোট ১৮১৬০৯৮ ভোটারের মধ্যে ৯০৯০৬১ জন পুরুষ, ৯০৬৯৬২ জন মহিলা এবং ৭৫ জন তৃতীয় লিঙ্গের।
Read the Full Story in English