আমেঠিতে সম্মানের লড়াইয়ে কংগ্রেস। গতবার এই আসন থেকে বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে পরাস্ত হন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এবার সেই আসনে নিজে দাঁড়ান নি তিনি। তা নিয়ে মোদী বারে বারে নির্বাচনী সভা থেকে রাহুলকে নিশানা করেছেন। এবার আমেঠি থেকে লোকসভার লড়াইয়ের কংগ্রেসের ভরসা কিশোরী লাল শর্মা। তাঁর নাম ঘোষণা অনেকেকেই অবাক করেছিল কারণ গত চার দশক ধরে তিনিই আমেঠিতে গান্ধী পরিবারের নির্বাচন পরিচালনার "ব্যাকরুম বয়" ছিলেন।
ইতিমধ্যেই আমেঠিতে প্রচার শুরু করেছেন কিশোরী লাল শর্মা। গত ৪০ বছর ধরে কংগ্রেস এবং গান্ধী পরিবারের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এবারের নির্বাচনে তিনিই খোদ লড়াইয়ের ময়দানে। কতটা কঠিন এবারের লড়াই? অকপটে জানালেন কিশোরী লাল শর্মা।
নির্বাচন পরিচালনা আর ভোটের ময়দানে নিজেই প্রার্থী এই দুইয়ের মধ্যে ফারাকটা ঠিক কতটা? এই প্রশ্নে কিশোরী লাল শর্মা বলেন, 'আমার কাছে দুটোর মধ্যে খুব বেশি ফারাক নেই। সিস্টেম একই। আমি একা কখনও কিছু করিনি। আমি দলের সঙ্গে কাজ করেছি, যারা এবার নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছেন। তারা আমার সঙ্গে বিগত ২৫-৩০ ধরে কাজ করছে। আমি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থাশীল। নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমার জন্য খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি'।
বিজেপি সাংসদ স্মৃতি ইরানির তুলনায় আপনার কাছে প্রচারের জন্য সময় হাতে অনেকটাই কম। এবার নির্বাচন বড় চ্যালেঞ্জ কংগ্রেসের জন্য। যেহেতু রাহুল গান্ধী এই আসন থেকেই হেরেছিলেন গত ভোটে। কী মনে করছেন এবারের নির্বাচন কতটা কঠিন হতে চলেছে? উত্তরে কিশোরী লাল শর্মা বলেন, 'আমেঠির মানুষ এখন বুঝতে পারছে তারা গতবার ভুল করেছিল। এবার তারা সেই ভুল সংশোধন করে নেবেন। হারের পর, রাহুল গান্ধী আমাকে কারণ পর্যালোচনা করতে বলেছিলেন, ত্রুটিগুলি খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমি দেখেছি দুটি বিষয় কাজ করেছে প্রথমত, বিজেপি সরকারের অনেক চাপ ছিল এবং আমাদের কর্মীদের হয়রানি করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, আমাদের দিক থেকেও কিছু ত্রুটি ছিল'।
আপনার জন্য চাপরাশি বা গান্ধী পরিবারের কর্মীর মতো শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আমেঠি এবং রায়বরেলিতে সবাই জানে আমি কে, এমনকি যারা এই ধরনের কথা বলছে তারাও'।
তিনি আরও বলেন, 'রাজীব গান্ধীর আদর্শে মুগ্ধ হয়ে ১৯৮০ সালে যুব কংগ্রেসের কর্মী হিসাবে আমার রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু করি…। কেউ কেউ আমাকে সনিয়া গান্ধীর পিএ বলে ডাকেন। খুব কম লোকই জানেন যে আমি পাঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদস্য। আমি ২০১৩ সালে এআইসিসি সেক্রেটারি ছিলাম, সিপি জোশীর সঙ্গে বিহারের সহ-ইনচার্জ-এর দায়িত্ব সামলেছি। যখন আমরা বিহারে জোট পরিচালনা করেছিলাম এবং ২৭ টি আসনে জয় নিশ্চিত করেছিলাম'।
আপনি কি মনে করেন দলের মধ্যে কোন্দল আছে? এর উত্তরে আমেঠি লোকসভার কংগ্রেস প্রার্থী বলেন, 'সব দলের মধ্যেই কিছু না কিছু দ্বন্দ্ব আছে। কিন্তু যখন বিষয়টি আমার কাছে আসে, তখন সব মিটে যায়। আমি তাদের বড় ভাইয়ের মতো। আমি তাদের বকাঝকা করতে পারি, তাদের সঙ্গে ভালোবেসে কথা বলতে পারি। আমি সে কোন বিষয়ে সমস্যা হলে তাদের বুঝিয়ে বলি'।
কেউ কেউ বলে যে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অনিচ্ছুক ছিলেন। তাহলে আপনি কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাজি হলেন? আমেঠির কংগ্রেস প্রার্থী বলেন, 'আমেঠির মানুষের অনুভূতিকে সম্মান করেই। দলের অন্য কর্মীরা যা চেয়েছিলেন আমিও তাই চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা (গান্ধী) জি আমাকে বলেছিলেন যে কিশোরী জি এবার আপনাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। রাহুল-প্রিয়াঙ্কা সকলেই সবাই এখানে আমার হয়ে প্রচারে আসবেন। প্রিয়াঙ্কা ইতিমধ্যেই তারিখও জানিয়েছেন। রাহুলও তারপর আসবেন'।
আপনার প্রচারের জন্য খুব কম সময় বাকি আছে, অন্যদিকে স্মৃতি ইরানি দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালাচ্ছেন। এটা তো বিজেপিকে বাড়তি মাইলেজ দেবে, আপনার কী মনে হয়? কিশোরী লাল শর্মা বলেন, 'স্মৃতি ইরানি এখানে কোন চ্যালেঞ্জ নয়। যদিও সিদ্ধান্ত জনগণকেই নিতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করা আমাদের দায়িত্ব। আমি আশ্বাস দিচ্ছি যে আমি কখনই তার সম্পর্কে অসম্মানজনক কিছু বলব না। সে যদি আমার বিরুদ্ধে অসম্মানজনকভাবে কথা বলতে চায়, সেটা তার ব্যাপার, কিন্তু আমি বলবো না'।