Advertisment

বাংলায় শেষ দফায় তিন কেন্দ্রে মরিয়া বামেরা

তৃণমূল-বিজেপি-র দাপটে রাজ্যে কার্যত বিবর্ণ লাল পতাকা। কিন্তু শেষ দফার ভোটে তিনটি কেন্দ্রকে পাখির চোখ করে ঝাঁপিয়েছে সিপিএম।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
৮৬ শতাংশ আসন বিনাযুদ্ধে দখল বিজেপি-র! সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব ত্রিপুরার বাম

ত্রিপুরায় গেরুয়া সন্ত্রাস, অভিযোগ বামেদের

সপ্তম তথা শেষ দফার নির্বাচনে তাঁরা কি কোথাও লড়াইতে আছেন?

Advertisment

বঙ্গ সিপিএমের নেতাদের দাবি, আছেন। আলিমুদ্দিন সূত্রের খবর, এই দফায় যে নয়টি আসনে নির্বাচন হবে, তার মধ্যে তিনটিতে ভাল ফল করার বিষয়ে আশাবাদী বাম নেতৃত্ব। এর মধ্যে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে জয়ের সম্ভাবনা কম হলেও দমদম এবং যাদবপুর কেন্দ্রে ১০ বছরের ব্যবধানে ফের লাল পতাকা ওড়ার সম্ভাবনা দেখছেন তাঁরা। বিভিন্ন এলাকায় কর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক করে রীতিমতো পরিসংখ্যান দিয়ে সেই সম্ভাবনার কথা তুলে ধরছেন সিপিএমের জেলা নেতারা। বোঝানোর চেষ্টা করছেন, এই তিন কেন্দ্রে তৃণমূলকে হারানোর ক্ষমতা রয়েছে বামপন্থীদেরই। তাই বিজেপি-কে ভোট দিলে তৃণমূলেরই সুবিধা হয়ে যাবে।

যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে যাদবপুর ও টালিগঞ্জ নিয়ে খানিকটা নিশ্চিন্ত বামপ্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। ২০১৬ সালে প্রবল মমতা-ঝড় সত্ত্বেও যাদবপুর বিধানসভায় জয়ী হয়েছিলেন সুজন চক্রবর্তী। টালিগঞ্জে হেভিওয়েট তৃণমূল প্রার্থী অরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে শেষ রাউন্ড পর্যন্ত লড়াইতে ছিলেন সিপিএমের মধুজা সেন রায়। সিপিএম নেতৃত্বের আশা, এবার এই দুই বিধানসভাতেই লিড পাবেন বিকাশ। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী সুজনকে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন তৃণমূলের সুগত বসু। সেবার ভাঙড় বিধানসভা থেকে প্রায় ৬০ হাজার ভোটে লিড নিয়েছিল তৃণমূল।

cpiml red star bhangar ভাঙড় পাওয়ার গ্রিড আন্দোলনের ফাইল ছবি

কিন্তু গত কয়েক বছরে ভাঙড়ের ছবিটা অনেকখানি বদলে গিয়েছে। পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে ভাঙড়ের একাংশে শক্ত সংগঠন তৈরি করেছে সিপিআইএমএল রেড স্টার এবং জমি কমিটি। তারা বিকাশকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করায় স্বস্তিতে সিপিএম। বাম নেতৃত্বের আশা, ভাঙড়ের একাংশে আরাবুল ইসলাম, কাইজার আহমেদরা যেমন ভোট করাবেন, তেমনই অন্য অংশে ভোটের দিন দাপট দেখাবেন অলীক চক্রবর্তীরা। ফলে গতবারের মতো লিড পাবে না তৃণমূল। সিপিএম সূত্রের খবর, ভাঙড়ে বিকাশ হাজার দশেক ভোটে পিছিয়ে থাকবেন বলে মনে করছে দল।

দক্ষিণ ২৪ পরগণার সিপিএম নেতারা চিন্তিত যাদবপুরের বাকি চারটি বিধানসভা - সোনারপুর উত্তর, সোনারপুর দক্ষিণ, বারুইপুর পূর্ব ও বারুইপুর পশ্চিম নিয়ে। এক সময়ের এই দুর্ভেদ্য লাল দুর্গে এখন আর দলের সংগঠন তেমন পোক্ত নয়। সিপিএমের এক জেলা কমিটির সদস্যের কথায়, "সোনারপুর নিয়ে আমাদের উদ্বেগ কম। কিন্তু বারুইপুরে ভোট-লুঠ না আটকাতে পারলে সমস্যা হবে।"

রাজ্য জুড়ে গেরুয়া হাওয়ার উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু যাদবপুরে সেই হাওয়ার গতি খানিকটা ঢিমে। বিজেপি প্রার্থী তথা তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ অনুপম হাজরা ভোটপ্রচারের মধ্যেই অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করে বিতর্কে জড়িয়েছেন। দলে অর্ন্তদ্বন্দ্বও রয়েছে। সিপিএম নেতৃত্বের আশা, বিজেপি-র ভোটের একাংশ এবার তাঁরাই পাবেন। বিকাশবাবুর কথায়, "যাদবপুরে তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের সরাসরি লড়াই। তৃণমূলকে হারাতে চাইলে আমাদেরই যে ভোট দিতে হবে, মানুষ তা বুঝতে পারছেন।"

Anubrata Mandal And Anupam Hazra Meets অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে অনুপম হাজরা। ফাইল ছবি: পার্থ পাল।

যাদবপুর ছাড়াও সিপিএমের পাখির চোখ এবার দমদম। গত দু-বারের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এবং বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে এবার সিপিএম দাঁড় করিয়েছে প্রবীন নেতা নেপালদেব ভট্টাচার্যকে। দমদম এই রাজ্যে বিজেপি-র পুরোনো কাজের জায়গাগুলির অন্যতম। প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তপন শিকদার এখান থেকে দুবার জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালেও তপনবাবু আড়াই লক্ষের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। দমদম কেন্দ্রের অলিগলিতে এবার বিজেপি-র পক্ষে হাওয়া স্পষ্ট। কিন্তু তা সত্ত্বেও সিপিএম নেতারা এই আসনটি জেতার বিষয়ে আশাবাদী। তাঁদের দাবি, যাকে বিজেপি-র হাওয়া বলে মনে হচ্ছে, তা আসলে তৃণমূল-বিরোধী হাওয়া। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলের ভিত্তিতে দমদমে তৃণমূলের চেয়ে হাজার পঞ্চাশ ভোটে পিছিয়ে ছিল বাম-কংগ্রেস জোট। অন্যদিকে, তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-র ব্যবধান ছিল প্রায় ৪ লক্ষের। নেপালদেব বলেন, "মানুষ মূর্খ নন। বিজেপি-র পক্ষে তৃণমূলকে হারানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই তৃণমূল বিরোধী মানুষ আমাদেরই ভোট দেবেন।"

দমদমের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের নাম জড়িয়েছিল নারদ কাণ্ডে। সিপিএমের আশা, ওই বিতর্কের জেরে ভোট কমতে পারে বিজ্ঞানের অধ্যাপকের। বিজেপি-র শমীকও সৌগতকেই আক্রমণের বর্শামুখে রেখেছেন। নেপালদেব বলেন, "আমাদের ভোটাররা কেউ বিজেপি-কে ভোট দেবেন না, কিন্তু তৃণমূলের একাংশ সাংসদের উপর বিরক্ত হয়ে পদ্মফুলে বোতাম টিপবেন। ফলে বিজেপি এখানে তৃণমূলের ভোটই কাটবে। জিতব আমরাই।"

বামেরা আশাবাদী ডায়মন্ড হারবার নিয়েও। পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই কেন্দ্রের ৯৩ শতাংশ আসনই দখল করেছিল তৃণমূল। কিন্তু বাম নেতৃত্বের দাবি, বর্তমান সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এলাকায় আসেন না, তাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে চোরাস্রোত রয়েছে। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী সভা করে গেলেও ডায়মন্ড হারবারে বিজেপি-র সগঠন দুর্বল। তাই হেভিওয়েট তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াইতে রয়েছেন সিপিএমের ফুয়াদ হালিমই। ইতিমধ্যেই "মার খাওয়ার হ্যাট-ট্রিক" করে ফেলা ফুয়াদ বলেন, "বিজেপি কোথাও নেই। লড়াই আমার সঙ্গে তৃণমূলের। প্রবল সন্ত্রাস চলছে, কিন্তু আমি আশাবাদী। মানুষ ভোট দিতে পারলে ফলাফল অন্যরকম হবে।"

শেষ দফায় এই তিনটি কেন্দ্র ছাড়াও ভোট হবে কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণ, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর ও বারাসতে। সিপিএম সূত্রের খবর, এই কেন্দ্রগুলিতে ভাল ফলের আশা করছেন না বাম নেতৃত্ব। বিজেপি-র আশা, বসিরহাট, জয়নগর ও মথুরাপুরে মেরুকরণের হাওয়া রয়েছে। ফলে গেরুয়া শিবিরের ফলাফল ভাল হবে।

সিপিএম নেতা তথা রায়গঞ্জের সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, "আমি কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করব না। তবে এই তিনটি কেন্দ্রে তো বটেই, অন্যগুলিতেও মানুষ ভোট দিতে পারলে আমরা ভাল ফল করব। মোদী-মমতা যে একই বিষবৃক্ষের দুটি ফুল, তা মানুষ বুঝতে পারছেন।"

General Election 2019
Advertisment