Advertisment

ভোটের আগেই হিসাব নিকাশ: কী হতে চলেছে আগামিকাল রাজ্যের তৃতীয় দফার নির্বাচনে?

মুর্শিদাবাদের আসনগুলিতে বিজেপির ভাল ফল করার তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই অভিমত রাজনৈতিক মহলের। তবে, তৃণমূল কংগ্রেসেরও শক্ত পরীক্ষা তৃতীয় দফায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
loksabha elections 2019, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে স্টার প্রার্থীরা।

মঙ্গলবার তৃতীয় দফার লোকসভা নির্বাচনে বাংলার পাঁচ আসনে জয় ছিনিয়ে আনাই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এদিন নির্বাচন হবে বালুরঘাট, মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর কেন্দ্রে।

Advertisment

২০১৪ সালে বালুরঘাটে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী তথা নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ। পরবর্তীকালে সারদা মামলায় নাম জড়িয়েছিল অর্পিতার। ওই নির্বাচনে তৃণমূল ভোট পেয়েছিল ৩৮.৫৩ শতাংশ, আরএসপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ২৮.৪৭ শতাংশ, আর বিজেপি ২০.৮৯ শতাংশ ভোটারের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছিল। তবে এবার কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির জোর লড়াই। পদ্মশিবিরের প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার। আরএসপি বালুরঘাটে এখন ক্ষীণ শক্তি। তাই মনে করা হচ্ছে, আরএসপির রণেন বর্মন রয়েছেন তৃতীয় হওয়ার দৌড়ে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে গতবারের জয়ী আসন বালুরঘাট ধরে রাখাই এখন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। ২০০৯ সালে এই কেন্দ্রে আরএসপিকে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল তৃণমূল। মাত্র ১ শতাংশের কম ভোট জিতেছিল আরএসপি। তারপর থেকে রক্তক্ষরণ চলছে এই বামদলের। সাংগঠনিক দিক থেকে রাজ্যের যে কোন কেন্দ্রের থেকে বালুরঘাটে বিজেপির ভিত অনেক শক্তপোক্ত। এই কেন্দ্রে তৃণমূল-বিজেপির লড়াই হবে সেয়ানে-সেয়ানে। বালুরঘাট লোকসভার মধ্যে রয়েছে ইটাহার, কুশমান্ডি(এসসি), কুমারগঞ্জ, বালুরঘাট, তপন(এসটি), গঙ্গারামপুর(এসসি) ও হরিরামপুর(এসসি)।

এদিন গণিখানের জেলা মালদাতেও নির্বাচন। গণিপরিবার এবারের নির্বাচনে দু'ভাগে বিভক্ত। কংগ্রেস ছাড়বেন না বলে 'সোমেন মামা'কে কথা দিয়েও শেষ পর্যন্ত গণিভাগ্নী মৌসম নুর এবার মালদা উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন। তিনি লড়ছেন দাদা ঈশা খানের বিরুদ্ধে। আবু হাসেমে খান (ডালুবাবু)-পুত্র ঈশা এবার এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী। মালদা উত্তরে এবার সংখ্য়ালঘু ভোট ভাগাভাগিই বড় ফ্যাক্টর। এখানে রয়েছে মালদা উত্তর, হাবিবপুর(এসটি), গাজোল(এসসি), চাঁচোল, হরিশচন্দ্রপুর, মালতিপুর, রতুয়া, মালদা(এসসি) বিধানসভা কেন্দ্র। হাবিবপুর, মালদা ও গাজোল এই তিন কেন্দ্র ছা়ড়া বাকি চার কেন্দ্রে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিজেপি এখানে প্রার্থী করেছে প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক খগেন মুর্মুকে। এখানেও লড়াইয়ের সম্ভাবনা মৌসমের সঙ্গে বিজেপির। এছাড়া রয়েছে গণিগড়ের সাবেক কংগ্রেসি ভোট ব্যাঙ্ক। ফলে, শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে তা বলা শক্ত।

২০১৪-তে কংগ্রেস প্রার্থী মৌসম বেনজির নুর পেয়েছিলেন ৩৩.৪১ শতাংশ ভোট, সিপিএমের খগেন মুর্মুর প্রাপ্ত ভোট ছিল ২৭.৭৭ শতাংশ। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের সৌমিত্র রায় পেয়েছিলেন মাত্র ১৬.৯৭ শতাংশ ভোট। বিজেপি প্রার্থীর ঝুলিতে এসেছিল ১৫.৩৯ শতাংশ ভোট। ২০০৯ সালে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল মাত্র ৬.৬৭ % ভোট। এবার সেই বিজেপিই মৌসমের কাছে চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মালদা দক্ষিণের নির্বাচনে মূল লড়াই কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের। এখানে গণি খান চৌধুরীর ভাই তথা বিদায়ী সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরীকে এবারও প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। উল্লেখ্য, সিপিএম এই কেন্দ্রে প্রার্থী দেয়নি। অন্যদিকে, পদ্ম পতাকা নিয়ে ময়দানে নেমেছেন প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী এবং তৃণমূল প্রার্থী ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনে আবু হাসেম খান চৌধুরী পেয়েছিলেন ৩৪.৮১ শতাংশ ভোট। সিপিএম ও বিজেপি পেয়েছিল ১৯ শতাংশ করে ভোট। তৃণমূলের প্রাপ্তি ছিল ১৭ শতাংশ। রাজনৈতিক মহলের মতে, সিপিএম এই কেন্দ্রে প্রার্থী না দেওয়ায় অ্যাডভান্টেজ কংগ্রেস। এখানকার বিধানসভা কেন্দ্রগুলো হল মানিকচক, ইংলিশবাজার, মোথাবাড়ি, সুজাপুর, বৈষ্ণবনগর, ফারাক্কা ও সামসেরগঞ্জ।

কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি মুর্শিদাবাদের দুই কেন্দ্রে মঙ্গলবার ভোট। অধীর চৌধুরীর কেন্দ্র বহরমপুরের ভোট ২৯ এপ্রিল। মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে গত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল সিপিএম। জোটের চক্করে প্রথমে কংগ্রেস প্রার্থী দেব না ঠিক করেও পরে প্রার্থী করে আবু হেনাকে। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন আবু তাহের খান ও বিজেপির প্রার্থী হুমায়ুন কবীর। মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ বদরুদ্দোজা খান এবারও সিপিএমের প্রার্থী।

২০১৪ -তে বদরুদ্দোজা খান পেয়েছিলেন ৩৩.৩৩ শতাংশ ভোট। যা ২০০৯ লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় ১০ শতাংশ কম ছিল। কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩১.৭২ শতাংশ যা ২০০৯-এর তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ কম। সে বার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ছিল ২২.৪৪ শতাংশ ভোট। মুর্শিদাবাদে রয়েছে ডোমকল, রাণীনগর, মির্শিদাবাদ, ভগবানগোলা, হরিরামপুর, জলঙ্গী ও নদীয়ার করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্র।

জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জীবনে প্রথম সরাসরি সাধারণের ভোটে জয়ী হয়েছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়। পর পর দুবার সেখান থেকে জয়ের পর সেই আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন প্রণব-পুত্র অভিজিত মুখোপাধ্যায়। তিনি প্রথমে উপনির্বাচন ও পরে ২০১৪ সালে ওই আসন থেকে জয় পেয়েছেন। তবে এবার লড়াই একটু অন্য় মাত্রা নিয়েছে। মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন অভিজিতের সঙ্গে আরএসএসের যোগাযোগ নিয়ে। আরএসএসের সঙ্গে জড়িয়েছেন তাঁরা বাবা অর্থাৎ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নামও। আরএসএস এই ভোটে অভিজিতকে সাহায্য় করছে বলে মমতার দাবি। যদিও অভিজিৎ সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে, এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে দাপুটে মাফুজা খাতুনকে। এছাড়া লড়াইয়ে আছেন সিপিএমের প্রার্থী জুলফিকার আলি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হলেন খলিলুর রহমান।

জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে রয়েছে সুতি, নবগ্রাম, খারগ্রাম, জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জ, সাগরদিঘী, লালগোলা, এই সাত বিধানসভা কেন্দ্র। ২০১২ সালে উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন প্রণব-পুত্র। সেবার লড়াই ছিল হাড্ডাহাড্ডি। ২০১৪ সালে কংগ্রেস ৩৩.৮০ শতাংশ ভোট পয়েছিল। সিপিএমের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৩. ০৭ শতাংশ। ব্য়বধান ছিল খুবই কম। তৃণমূল পেয়েছিল ১৮.৫৪। এবার এই কেন্দ্রে জয় চাইছে তৃণমূল। তবে মুর্শিদাবাদের আসনগুলিতে বিজেপির ভাল ফল করার তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই অভিমত রাজনৈতিক মহলের। তবে, তৃণমূল কংগ্রেসেরও শক্ত পরীক্ষা তৃতীয় দফায়।

CONGRESS Cpm lok sabha 2019 bjp tmc
Advertisment