কানহাইয়ার বেগুসরাইতে ব্রাত্য কেবল বাংলার বামেরা!
লোকসভা নির্বাচনের প্রাকলগ্নে গোটা দেশের বামপন্থীদের পাখির চোখ বিহারের বেগুসরাই কেন্দ্র। একদা বিহারের 'লালগড়' হিসাবে পরিচিত বেগুসরাইতে বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের বিরুদ্ধে সিপিআইয়ের টিকিটে লড়ছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের (জেএনইউএ ইউ) প্রাক্তন সভাপতি কানহাইয়া কুমার।
জেএনইউতে 'আজাদি' বিতর্কের পর বামপন্থী মহলে কার্যত 'ইয়ুথ আইকন' হয়ে ওঠাকানহাইয়াকে জেতাতে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে সিপিআইয়ের ছাত্র-যুব নেতারা বেগুসরাইতে ঘাঁটি গেড়ে বসে রয়েছেন। জেএনইউ-সহ দেশের একাধিক নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া-অধ্যাপকদের পাশাপাশি একঝাঁক সাংস্কৃতিক কর্মীও কানহাইয়ার প্রচারে সামিল। দিনরাত এক করে বেগুসরাই কেন্দ্রের গ্রাম-মফস্বল চষে ফেলছেন বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা সিপিআইয়ের ছাত্র-যুব সংগঠন অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস ফেডারেশন (এআইএসএফ) এবং অল ইন্ডিয়া ইয়ুথ ফেডারেশনের (এআইওয়াইএফ) কর্মীরা।
আরও পড়ুন: ক্রাউড ফান্ডিং-এ মাত্র দু’দিনে কানহাইয়ার সংগ্রহে ৩১ লক্ষ
কিন্তু বেগুসরাইতে একবারের জন্যেও প্রচারে যাননি বাংলার সিপিআইয়ের কোনও ছাত্র-যুব নেতা। সূত্রের খবর, যাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। অথচ এই রাজ্যেরই বাসিন্দা এআইএসএফের সর্বভারতীয় শীর্ষ নেতা!
আজাদি-বিতর্কের পর একাধিকবার বাংলায় এসেছেন কানহাইয়া। বঙ্গ-সিপিআইয়ের মরা গাঙে জোয়ার তৈরি না হলেও কানহাইয়ার বক্তৃতা বহুদিন পর সংবাদ শিরোনামে এনেছিল দেশের প্রাচীনতম কমিউনিস্ট দলকে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে বামফ্রন্ট ভুল করেছিল বলে বিতর্কও তৈরি করেছিলেন তিনি। গত বছরের ডিসেম্বরে ধর্মতলায় সিপিআইয়ের সমাবেশেও মুখ্য আকর্ষণ ছিলেন কানহাইয়াই। তারপরও কেন তাঁকে জেতাতে বেগুসরাই গেলেন না বঙ্গ সিপিআইয়ের তরুণ তুর্কিরা?
আরও পড়ুন: কানহাইয়াদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করলেন কীভাবে? দিল্লি পুলিশকে প্রশ্ন আদালতে
সিপিআই দফতরে কান পাতলে এই প্রসঙ্গে মূলত দুটি ব্যাখ্যা শোনা যাচ্ছে। প্রথমত, বেগুসরাই কেন্দ্রটি সম্পূর্ণভাবেই হিন্দিভাষী অধ্যুষিত। ফলে বাংলার ছাত্রনেতারা গিয়ে বিশেষ কোনও সুবিধা করতে পারতেন না। কিন্তু এই যুক্তি মানতে নারাজ দলেরই একাংশ। এক এআইএসএফ নেতার কথায়, "বিহারের আরা কেন্দ্রে এবার জয়ের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে আরেক বামপন্থী দল সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের। সেখানে বাম প্রার্থীর হয়ে প্রচার করছেন জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি এন সাই বালাজি সহ বেশ কিছু ছাত্রনেতা, তাঁদের অনেকেই তো হিন্দিভাষী নন!"
দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি হলো, বাংলায় সিপিআই তেমন শক্তিশালী না হওয়ায় বিহারের নেতৃত্ব এই রাজ্যের বামেদের তেমন গুরুত্ব দিতে রাজি নন। সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি কার্যত মেনে নিচ্ছেন এই যুক্তি। তাঁর সাফ কথা, "ওরা আমাদের ডাকেনি আসলে, তাই কেউ যায়নি। বেগুসরাইতে তো বাঙালি ভোটার নেই, তাই হয়তো বিহারের পার্টি দরকার মনে করেনি।"
এআইএসএফের সর্বভারতীয় সভাপতি শুভম ব্যানার্জি বলেন, "উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ-সহ গো বলয়ের বিভিন্ন রাজ্যের নেতারা বেগুসরাই যাচ্ছেন। কিন্তু যে সব রাজ্যে আমাদের আসন প্রাপ্তির সম্ভাবনা আছে, সেগুলি থেকে কেউ যাচ্ছেন না। তাছাড়া বেগুসরাইয়ের বাস্তবতায় বাংলার নেতাদের সম্ভবত তেমন প্রয়োজন নেই।"