নির্বাচনে শোচনীয় হারের পর শনিবার তাদের প্রথম বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে দলের সভাপতি রাহুল গান্ধীর পদত্যাগ গ্রহণ করতে অস্বীকার করল কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী বা ওয়ার্কিং কমিটি। এমনটাই জানিয়েছেন দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা। কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে রাহুলকে অনুরোধ করা হয়, তিনি যেন তাঁর পদে বহাল থেকে দলের প্রতিটি স্তর "সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজান"। সুরজেওয়ালা আরও জানান, এই মর্মে একটি পরিকল্পনা শিগগিরই রূপায়িত হতে চলেছে।
বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ বলেন, কার্যনির্বাহী কমিটি এক সুরে রাহুলকে জানিয়েছে, তিনি যেন "এই কঠিন সময়ে" দলের দিশা নির্ধারণে সাহায্য করেন। আজাদের দাবি, কোনও কার্যনির্বাহী কমিটিতে বয়স নির্বিশেষে এ ধরনের ঐক্য তিনি দেখেন নি। তাঁর কথায়, "তাঁর নেতৃত্বের প্রতি কেউ সন্দেহ প্রকাশ করে নি, কিন্তু পরিস্থিতি এমনই যে আমরা বেরোতে পারলাম না।" কংগ্রেসে রাহুল গান্ধীর ভূমিকার প্রশংসা করে আজাদ বলেন, "এখন যা পরিস্থিতি, তাতে একমাত্র রাহুল গান্ধীই প্রতিপক্ষের নেতৃত্ব দিতে পারেন।"
নির্বাচনী হারের পর্যালোচনা করতে দলীয় মিটিংয়ের পর কংগ্রেসের তরফে এক প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, জনাদেশ মাথা পেতে নিয়েছে কংগ্রেস, এবং বিরোধীপক্ষ হিসেবে তাদের কর্তব্য পালন করে যাবে তারা, জনসাধারণের সমস্যা তুলে ধরে পরবর্তী সরকারকে ভারতের মানুষের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে বাধ্য করবে।
আরও পড়ুন: রাহুলের 'চৌকিদার চোর হ্যায়' স্লোগানই ‘ধাক্কা’ দিয়েছে কংগ্রেসকে
কার্যনির্বাহী কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে রাহুলের প্রতি আহ্বান জানায়, আদর্শগত এই যুদ্ধে তিনি যেন দলের নেতৃত্ব দেন, এবং বিশেষভাবে ভারতের যুবসমাজ, কৃষক, তফশিলি উপজাতি, সংখ্যালঘু, এবং দরিদ্র মানুষের সমস্যা নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান। প্রস্তাবনায় বলা হয়, "বিভাজন এবং বিদ্বেষের ওপরে দাঁড়িয়ে যেসব শক্তি, তার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে"।
গত ২৩ মে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটকে ঐতিহাসিকভাবে দ্বিতীয়বার দেশে ক্ষমতায় আনেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যে ৫৪২ টি লোকসভা আসনের জন্য নির্বাচন হয়, সেগুলির মধ্যে মাত্র ৫২ টি আসনে জিতেছে কংগ্রেস। বিজেপি একাই ৩০৩ টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এবং কংগ্রেস যদিও ২০১৪ সালে জেতা ৪৪টি আসনের চেয়ে বেশি পেয়েছে এবার, দেশের ১৮টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে একটি আসনও পায় নি তারা।
কংগ্রেস জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন কৃষি এবং ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে সঙ্কট, এনপিএ (নন পারফর্মিং অ্যাসেটস), প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসন, কর্মসংস্থানের অভাব, এবং অর্থনৈতিক মন্দার মোকাবিলা করতে সরকারকে সমর্থন করবে। "কংগ্রেস পার্টি নির্বাচনে হেরেছে, কিন্তু আমাদের অদম্য সাহস, আমাদের লড়াকু মনোবৃত্তি, এবং আদর্শের প্রতি নিষ্ঠা আরও জোরদার হয়েছে।"