General Election 2019: দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে দার্জিলিং ও রায়গঞ্জে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে তৃণমূল কংগ্রেস। ৪২-এ ৪২, এই লক্ষ্যে এবার উত্তরবঙ্গের ওই দুই কেন্দ্র তৃণমূল কংগ্রেসের পথের সবচেয়ে বড় কাঁটা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তুলনামূলকভাবে জলপাইগুড়ি আসনে লড়াই অনেকটা সহজ। আজ এ রাজ্যের জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও রায়গঞ্জে লোকসভা নির্বাচন।
লোকসভা নির্বাচনের আরও খবর পড়ুন, এখানে
২০১৪-তে দার্জিলিং-এ জনপ্রিয় ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়াকে প্রার্থী করে বাজিমাত করতে চেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু সেই কৌশল কাজে আসেনি। একইভাবে রায়গঞ্জ কেন্দ্রে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির ভাই সত্যরঞ্জনকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ক্ষেত্রেও সুবিধা করে উঠতে পারেনি তৃণমূল। বরং, চতুর্থ হয়ে লজ্জাজনক অবস্থায় পড়েছিল ঘাসফুল ব্রিগেড। দার্জিলিং ও রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র ঘুরে যা বোঝা গেল, এবারও পরিস্থিতির খুব একটা বদল হয়নি। দার্জিলিংয়ে লড়াই সরাসরি হলেও, রায়গঞ্জে লড়াই এবারও চতুর্মুখী। ফলে, রাজ্যের শাসক দলের জন্য লড়াই বেশ কঠিন।
আরও পড়ুন: মুকুল-বিজয়বর্গীয়ের ইশারায় কাজ করছে সিবিআই, বিস্ফোরক রাজীব কুমার
দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিধায়ক অমর সিং রাইকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাহাড়ি ফুটবলার বাইচুং মডেল কাজে আসেনি বলে এবার সরাসরি দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা তথা সেখানকার বিধায়ক গজমুমু-র নেতাকে ঘাসফুল প্রতীকে দাঁড় করিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবু পাহাড়ের মানুষের ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা যে যথেষ্টই রয়েছে তা পাহাড়ে পা রাখলেই স্পষ্ট। অন্যদিকে, কালিম্পং-এ একটা বড় অংশের ভোট পকেটস্থ করতে চলেছেন জন আন্দোলন পার্টির (জাপ) নেতা হরকাবাহাদুর ছেত্রী, যদিও পাহাড়ের অন্য অংশে তেমন একটা সমর্থন নেই জাপ-এর।
এদিকে, পাহাড়ে বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন জিএনএলএফ ও গুরুং-রোশন গিরির সমর্থকরা। এই লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়াং বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচার বেশ স্তিমিত। ভোটের তেমন কোনও উত্তাপই নেই এবার। বরং নির্বাচনী প্রচারে ঝড় উঠেছে উত্তরবঙ্গের সমতলে। শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া ও চোপড়া বিধানসভা কেন্দ্রে নানা দলের প্রচার বিশেষভাবে চোখ টানছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এবারও পাহাড়ে আসন ছিনিয়ে আনা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে কষ্টকর। একদিকে বন্ধ চা-বাগান ও অন্যদিকে পরিবহন শিল্প বিশেষ ভূমিকা নিতে চলেছে এবারের নির্বাচনে।
আরও পড়ুন: পড়াশোনা শেষ করেই রাজনীতিতে আসার ইঙ্গিত দীপা পুত্র প্রিয়দীপের
তবে দার্জিলিং লাগোয়া জলপাইগুড়ি লোকসভা আসনে তৃণমূলকে টেক্কা দেওয়া কঠিন। এই কেন্দ্রে রয়েছে ধূপগুড়ি, মেখলিগঞ্জ, মাল, ময়নাগুড়ি, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি, রাজগঞ্জ ও জলপাইগুড়ি বিধানসভা ক্ষেত্র। এখানেও চা-বাগানের পরিস্থিতি নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে। তাছাড়া, এই কেন্দ্রে প্রায় ১৫ শতাংশ আদিবাসী ভোটার রয়েছেন। বিদায়ী সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মনকে এবারও প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই কেন্দ্রে সিপিএম ও কংগ্রেসের ভোট বাড়া-কমার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করবে তৃণমূল ও বিজেপির লড়াই। উল্লেখ্য, সামগ্রিকভাবে দক্ষিণবঙ্গের থেকে উত্তরবঙ্গে সাংগঠনিক শক্তি বেশি পদ্মশিবিরের।
এবারের নির্বাচনে সম্ভবত সবচেয়ে আকর্ষণীয় লড়াই হতে চলেছে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ইসলামপুরে দাড়িভিট স্কুলের হিংসায় দুই তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় রায়গঞ্জের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। দাড়িভিট নিয়ে আন্দোলন করে জমি শক্ত করেছে বিজেপি।
এই লোকসভা কেন্দ্রে এবার কংগ্রেস ও সিপিএম, দুই দলের প্রার্থীই হেভিওয়েট। সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম এই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ। অন্যদিকে, কংগ্রেসের টিকিটে লড়ছেন প্রিয়রঞ্জন-পত্নী দীপা দাশমুন্সি। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রয়াণের পর এবার ওই কেন্দ্রে 'প্রিয় আবেগ' কতটা ফ্যাক্টর হবে, তা নিয়েও হিসেব কষছে সব শিবিরই। উল্লেখ্য, যে কয়েকটি আসনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে কংগ্রেস-সিপিএম জোট ভেস্তে যায়, সেগুলিরই অন্যতম রায়গঞ্জ। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এখানে প্রার্থী করেছে ইসলামপুরের বিধায়ক কানহাইয়ালাল আগরওয়ালকে। দলের রাজ্য নেত্রী দেবশ্রী চৌধুরীকে রায়গঞ্জে প্রার্থী করেছে পদ্মশিবির। একমাত্র এই লোকসভা আসনেই তাই প্রকৃত চতুর্মুখী লড়াই।
আরও পড়ুন: ফোন ‘ট্যাপ’! হাঁড়ির খবর বিজেপির কাছে, চাঞ্চল্যকর অভিযোগ মমতার
রাজনৈতিক মহলের মতে, ৪২-এ ৪২ করতে বড় বাধা হতে পারে রায়গঞ্জ। ভোট কাটাকাটির খেলায় এখানে যে কোনও প্রার্থীর ভাগ্য ফিরতে পারে। আর এসব সমীকরণের শেষে বাংলাদেশের নায়ক ফিরদৌসকে দিয়ে প্রচার করিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে তৃণমূল। ফলে সব মিলিয়ে উত্তরের উত্তর যে ঠিক হতে চলেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না কোনও পক্ষই।