General Election 2019: লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন একেবারে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে সাংসদ প্রার্থীর রাজ্যের শাসকদলের নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ, বাংলার রাজনীতিতে একপ্রকার নজীরবিহীন। রাজ্যের চতুর্থ দফার নির্বাচনে অনুব্রত মন্ডলের সঙ্গে দেখা করে সেই কাজটাই করলেন যাদপুরের বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা। কেমন প্রচার চলছে? কাকার এই প্রশ্নের জবাবে টিপস চাইলেন ভাইপো। তবে এটাকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলেই দাবি করেছেন অনুপম।
লোকসভা নির্বাচনের আরও খবর পড়ুন, এখানে
ছোটবেলায় অনুপমকে কোলে নিয়ে আদরও করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস বীরভূমের জেলা সভাপতি। তাঁদের পারিবারিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের বলেই জানিয়েছেন অনুপম। অনুব্রতের সঙ্গে সাক্ষাতের পর অনুপম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানান, "আমি ছোটবেলায় কাকার কোলেও চেপেছি। একেবারে কাকা-ভাইপোর সম্পর্ক। রাজ্যের আর পাঁচজন রাজনীতিকের মতন নই যে অন্য রাজনীতির লোকের সঙ্গে কথা বলব না। শত্রু তো রাজনীতির ময়দানে। দিনের শেষে সবাই মানুষ। ফলে আজকে আমি বিরোধী বলে বোমা মারব, কাল আমি ওই দলেই ঝাঁপ মারব, আমি এসব পছন্দ করি না। রাজনীতি আলাদা জায়গায়, ব্যক্তিগত সম্পর্ক আলাদা জায়গায়।"
আরও পড়ুন: অনুব্রতকে প্রণাম অনুপমের! দলবদল নিয়ে কী কথা হল কাকা-ভাইপোর?
অনুব্রত মন্ডল ও অনুপম হাজরা, দুজনই থাকেন বোলপুরে। দুজনের বাড়ির দূরত্ব মেরেকেটে মিনিট পাঁচেক। বোলপুরের সীমান্তপল্লী এলাকায় থাকেন অনুপম। অনুব্রত মন্ডলের বাস রামকৃষ্ণ পল্লীতে। রইল সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ:
একেবারে দলীয় কার্যালয়ে?
অনুপমের বক্তব্য, "এটা সৌজন্যতা। আজ বোলপুরে ভোট দিতে গিয়েছিলাম। দিন দশেক আগে ওঁর মা মারা গিয়েছেন। তখন কথাও হয়েছিল। আমার মনে হয় এটা বাঙালীর সংস্কৃতি। পাড়া-প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের মৃত্যু হলে আমরা সেই বাড়িতে দেখা করতে যাই। সেই সৌজন্য আমি দেখিয়েছি। তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে ছিলেন অনুব্রত মন্ডল। তাই সেখানে গিয়েছিলাম।"
অনুব্রত মন্ডল বলেছেন যে ফিরে আসতে চাইলে দরজা খোলা আছে। কী বলবেন?
নতুন করে দল পরিবর্তনের কোনও কারণই নেই, স্পষ্ট জানালেন অনুপম। যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী বললেন, "যে দল থেকে আমি বিনা কারণে বহিষ্কৃত হয়েছি, সেই দলে ফিরে আসার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আমার তো দল থেকে বহিষ্কারের কারণ নারদ, সারদা বা বোমাবাজি নয়। যে দল থেকে ফেসবুকের কারণে বহিষ্কৃত হয়েছি, সেই দলে ফিরে আসার প্রশ্নই ওঠে না।"
রাজনীতি নিয়ে কী কথা হল দুজনের মধ্যে? অনুপম জানান, "কাকা আমার কাছে জানতে চান কেমন প্রচার চলছে। আমি বলি, টিপস দাও কিভাবে ভোট জেতা যায়। আমার স্টাইলে আমি চলছি। এক্সট্রা টিপস থাকলে দিতেই পার। কারণ কারও কাছে শিখতে অসুবিধা নেই।" অনুপম বললেন একথা শুনে "কাকা শুধুই হেসেছেন"। তাঁদের মধ্যে কথা হয় মিনিট ১০-১৫।
অনুপমের বাবার সঙ্গে বন্ধুত্ব অনুব্রত মন্ডলের। অনুপমের বাবা দেবনাথ হাজরা একসময় বোলপুর থানায় ওসি ছিলেন। অনুপমের কথায়, "১৯৯৫ থেকে ৯৮ আমার বাবা ওসি ছিলেন। তখন অনুব্রত মন্ডল ছিলেন কংগ্রেসে। বাবা নিরপেক্ষ অফিসার ছিলেন। তাই সিপিএম তাঁকে প্রমোশন দেয়নি। সেই সময় অনুব্রত মন্ডল সিপিএমের কাছে মারধরও খেতেন। কিন্তু মেরুদন্ড সোজা রেখেছিলেন বাবা। অনুব্রত মন্ডলও তাঁকে সম্মান করতেন।"
এই সাক্ষাত নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বলতে শুরু করেছেন।
অনুপম এসব নিয়ে ভাবতে নারাজ। তিনি বলেন, "রাজনীতির লড়াইয়ে এক পা-ও জায়গা ছাড়ব না। ময়দানে নেমেছি জয়ের জন্য। বিরোধী হিসাবে তৃণমূলের যে নোংরামো সেটার প্রতি ক্ষেত্রেই সমালোচনা করব। কিন্তু তার বাইরে গিয়েও বড় জায়গা আছে। তাই বলে আমি কি ওঁর বোমা মারাটাকে সমর্থন করি নাকি? তৃণমূলে থাকার সময়ই বলেছি। আতঙ্ক দিয়ে, বোমাবাজি দিয়ে ভোট হয় না। সৌজন্যতা রাখা উচিত। মানুষকে ভালবেসে ভোট করালে তার ফল দীর্ঘমেয়াদী হয়। ভীতি দিয়ে ভোট করলে সমস্যা আছে।"
তৃণমূল তো বলে বিজেপি বাংলার সংস্কৃতি বোঝে না।
অনুপমের বক্তব্য, "বিজেপির কাছে সংস্কৃতি শিখতে হবে। বিজেপি বাংলার সৌজন্য-সংস্কৃতি বোঝে। আজকের ঘটনাটা একটা উদাহরণ। তৃণমূল যখন বোমাবাজির সংস্কৃতি করে, সেখানে সৌজন্যের সংস্কৃতি। এর আগেও বাবুল সুপ্রিয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঝালমুড়ি খেয়েছেন, দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন একজন বাঙালী প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান। এসব আমাদের সংস্কৃতি। রাজনীতির উর্দ্ধে গিয়ে মানুষকে সম্মান করি।"
নির্বাচনে জয় নিয়ে কোনও আশীর্বাদ করলেন অনুব্রত মন্ডল? অনুপম বলেন, "কাকা বলেছেন, কেউ ভোটে হারার জন্য নামে না। যার রাজতিলক আছে তাকে কেউ হারাতে পারে না।"