দিল্লির কুর্সিতে বিজেপির প্রত্যাবর্তন এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এই মুহূর্তে সাড়ে তিনশো লোকসভা আসনে এগিয়ে রয়েছে এনডিএ। দেশ জোড়া এই বিজেপি ঢেউ প্রবলভাবে আছড়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির এই সাফল্য আগামী বিধানসভা নির্বাচনে যে বড় ফ্যাক্টর হবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সাদা চোখে দেখলে, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহর জুটি যে ভাবে এরাজ্য়ে প্রচার করেছে, তার সুফল মিলেছে বলে মনে হতে পারে। দিনের শেষে দেখার বিষয় এ রাজ্য় থেকে কটি আসন ঝুলিতে পুরতে পারে বিজেপি, এখন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। তবে ২০১৪ সালে দুটি আসন পাওয়া দল যে নিশ্চতভাবেই এবার দুই সংখ্যায় থাকছে তা স্পষ্ট।
পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দার্জিলিং, বিষ্ণুপুর, আসানসোল, আলুপুরদুয়ার, মালদা উত্তর, হুগলির মতো আসনগুলিতে বিজেপি প্রার্থীরা যে মাত্রায় ব্য়বধানে বাড়চ্ছেন, তাতে তৃণমূল প্রার্থীদের পক্ষে লড়াইয়ে টিকে থাকা ক্রমশ অসম্ভব হয়ে পড়ছে। শুধুমাত্র রাজ্য়ের জঙ্গলমহল বা উত্তরবঙ্গই নয়, দক্ষিণবঙ্গেও রীতমিতো থাবা বসিয়েছে বিজেপি। রানাঘাট কেন্দ্রে লক্ষাধিক ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার। হুগলী কেন্দ্রে ক্রমশ জয়ের পথে এগোচ্ছেন বিজেপি মহিলা মোর্চার সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্য়ায়। অন্যদিকে, বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছেন এসএস আহলুওয়ালিয়া। বঁনগা কেন্দ্রেও ৪০ হাজারের বেশি ব্য়বধানে এগিয়ে বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর।
দার্জিলিং এবং আসানসোল। গত লোকসভা নির্বাচনে বাংলার এই দুটি মাত্র আসন ঝুলিতে পুরতে পেরেছিল বিজেপি। গোর্খাদের সমর্থনে এর আগে পর পর দুবার দার্জিলিং কেন্দ্রে জয় পেয়েছিল বিজেপি। এবারও ওই কেন্দ্রে বিজেপির জয় কার্যত সময়ের অপেক্ষা। অন্যদিকে, ২০১৪ সালে আসানসোল কেন্দ্রে জয় পেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী তথা গায়ক বাবুল সুপ্রিয়। মুনমুন সেনকে পিছনে ফেলে এবারও বাবুলের জয় মোটের উপর নিশ্চিত। আর তাই গতবারের দুই আসন ধরে রেখে এবার আসন সংখ্যা কয়েকশো গুন বাড়িয়ে নেওয়া নিঃসন্দেহে বিরাট সাফল্য।
কেন এই বাড়বাড়ন্ত পদ্ম শিবিরের?
মোদী-শাহ এ রাজ্যে বাড়তি সভা করার ফলেই এমন জয়, এ কথা সাদা চোখে মনেই হতে পারে। কিন্তু, এর পিছনে রয়েছে দীর্ঘ প্রক্রিয়া। মূলত, ধর্মীয় মেরুকরণ এ রাজ্যে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, এনআরসি নিয়ে বিজেপির লাগাতার প্রচারও প্রভাব ফেলেছে ভোটারদের একাংশের মনে। অন্যদিকে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য়ের জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গের কিছু অংশে তৃণমূল কংগ্রেসকে যথেষ্ট বেগ দিয়েছিল বিজেপি। তখনও রাজনৈতিকমহলের একাংশ মনে করতে শুরু করেছিল, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এই দুই এলাকায় ভাল ফল করবে বিজেপি। এ ক্ষেত্রে শুধু মেরুকরণের রাজনীতি নয়, বরং জঙ্গলমহলে আদিবাসীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভকে পুঁজি করেই ফসল ঘরে তুলেছে গেরুয়া শিবির। এইসব এলাকার আদিবাসীদের একটা বড় অংশ বিজেপিতে ভিড় করেছে। জঙ্গলমহলের মতোই উত্তরবঙ্গেও সংগঠন মজবুত করে ফেলেছে বিজেপি। এক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের প্রতি কলকাতার দীর্ঘকালের 'উদাসীনতা'কেই কাজে লাগিয়েছে পদ্ম ব্রিগেড। এদিকে আবার দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি অপছন্দ ও প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়াকে হাতিয়ার করেছে বিজেপি।