রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব একাধিকবার দাবি করেছেন, নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়করা দলে দলে তাঁদের শিবিরে যোগ দেবেন। শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে 'মিট দ্য প্রেস'-এ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও দাবি করেন, "এখনই তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে। নির্বাচনের পর টিএমসিটাই বিজেপি হয়ে যাবে।" রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের "বাড়বাড়ন্তের" জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকেই দায়ী করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন।
শনিবার প্রেস ক্লাবে প্রথম পর্যায়ে সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল দ্বিতীয় পর্যায়ের মিট দ্য প্রেস-এ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি রাজ্যে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধির জন্য বিরোধীদের ওপর দায় চাপান। বিশেষত সিপিএমের ওপর পড়ে তাঁর কোপ। তৃণমূলের মহাসচিব বলেন, "সূর্যকান্তবাবুরা কোন দিন বিজেপিতে চলে না চলে যান! সিপিএমের মাঝারী, ছোট, বড় নেতারা বিজেপির দিকে দৌড়চ্ছেন। দক্ষিণপন্থী দল ছাড়া স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে। কিন্তু খগেন মুর্মু, মাফুজা খাতুনের মত সিপিএম নেতৃত্ব দল ত্যাগ করে বিজেপির প্রার্থী হয়ে লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করছেন। বামেরাই বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি করছে এই রাজ্যে।"
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র তিনটি আসন দখল করেছিল বিজেপি। কিন্তু তার পর থেকে বিজেপি এই রাজ্যে প্রথম সারির বিরোধী দলের জায়গা দখল করেছে। একাধিক উপনির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে তারা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস ও সিপিএমের তুলনায় বেশ কয়েকগুণ ভাল ফল করে পাকাপাকি ভাবে বিজেপিই রাজ্যের প্রধান বিরোধী শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। একইসঙ্গে তৃণমূল মহাসচিবের অভিযোগ, "কংগ্রেস ও সিপিএম বিরেোধী শক্তি হিসাবে নিষ্ক্রিয় থাকায় পদ্মশিবিরের সুবিধা হয়েছে। আমরা যখন এরাজ্যে বিরোধী দল ছিলাম, তখন আন্দোলনের মধ্যে থাকতাম। বিরোধীর ভূমিকা পালন করতাম। এখন তারা করে না বলেই বিজেপির এই বৃদ্ধি।" তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় থাকায় রাজ্য শাখাও সুবিধে পাচ্ছে।
এর আগে বিজেপি নেতা মুকুল রায় দাবি করেছেন, তৃতীয় দফা অবধি নির্বাচন হওয়া ১০ টি আসনে পদ্মশিবির সাতটি আসন পাবে। কংগ্রেস পাবে দুটি আসন। তিনি তৃণমূলের জন্য বরাদ্দ.করেছেন একটি আসন। এদিন সূর্যকান্ত মিশ্র অভিযোগ করেন, "তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির বোঝাপড়া হয়েছে। বিজেপি ১২ টি আসন চেয়েছিল, আটটিতে রফা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের আসনগুলো প্রায় ছেড়েই দিয়েছে।" বিজেপিকে তৃণমূল আসন ছাড়ছে? পার্থবাবু বলেন, "অদ্ভুত লোকের অদ্ভুত অভিযোগ। এই অভিযোগ সত্যি মনে হলে মানুষকে বোঝাতে পারে সিপিএম। দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে দলটা।"
তবে মুকুল রায়ের মন্তব্য নিয়ে পার্থবাবুকে প্রশ্ন করা হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তৃণমূলের মহাসচিব। "গদ্দার"-এর নাম শুনতে চান না বলে জানিয়ে দেন তিনি। সেই সাংবাদিকের প্রশ্নই শোনেননি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে বিরোধীরা দেশব্যাপী বিজেপি-বিরোধী জোট করতে যে সক্ষম হন নি, তা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূল ও সিপিএমের দুই নেতাই।