General election 2019: ষষ্ঠ দফার ভোট প্রচারের শেষ পর্বে বাংলায় সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিজেপি। মথুরাপুরের জনসভা থেকে বিরোধীদের তোপ দেগে ভোট মহারণের ঝাঁঝ আরও বাড়িয়ে দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। প্রধানমন্ত্রীর 'স্তুতিবাক্য' দিয়েই বক্তব্য শুরু করেন রাজনাথ। তারপর বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিঁধে চলেন বিরোধীদের। বাংলায় এসে সাইক্লোন ফণী ইস্যু নিয়ে মোদীর ফোন না ধরায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আরও একবার সরব হন রাজনাথ। তিনি বলেন, "ফণীর ব্যাপারে কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করলেও উনি ফোন ধরেন নি, তারপর ওঁর উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীকে একবার ফোন করা।"
এদিন সভা থেকে বিরোধীদের করা কটাক্ষের সব জবাব দিয়ে দিলেন রাজনাথ সিং। 'মিশন শক্তি' নিয়ে কংগ্রেসের করা মন্তব্যর বিরোধিতা করে বলেন, "ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বিজ্ঞানীদের কোনও রকমের বিকাশ এবং উন্নত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি দেন নি।" মনমোহন সিংকে "ভালো মানুষ" বললেও 'অ্যান্টি স্যাটেলাইট' তৈরির ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা নিয়েই এদিন প্রশ্ন তুললেন বিজেপির এই বর্ষীয়ান নেতা।
আরও পড়ুন: তুফানগঞ্জে তুলকালাম! 'গরু চুরি' নিয়ে খণ্ডযুদ্ধ পুলিশ-জনতার
তিনি বলেন, "২০০৭ সালে আমাদের অ্যান্টি স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ক্ষমতা থাকলেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি না পাওয়ায় তা তৈরি করতে পারেন নি বিজ্ঞানীরা, কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সেই অসম্পূর্ন কাজকেই এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এই মুহুর্তে রাশিয়া, চীন, আমেরিকার পর ভারতের কাছে সেই শক্তি রয়েছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের যে কোনো দেশ আমাদের স্যাটেলাইট ধ্বংস করার চেষ্টা করলে, তাদের ধ্বংস করতে আমাদের তিন মিনিট সময় লাগবে।"
মথুরাপুরের পর কলকাতায় একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী "প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্য বোঝা উচিত ছিল মুখ্যমন্ত্রীর" এই অভিযোগ তুলে সুর চড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। সরাসরি 'চেয়ারের ক্ষমতার' প্রশ্ন তুলে বলেন, "আপনি একজন মুখ্যমন্ত্রী আর উনি প্রধানমন্ত্রী। ওঁর ফোন ধরা আপনার উচিত ছিল, নয়তো পরে একবার ফোন করা উচিত ছিল।" বিজেপির এই নেতা অবশ্য মনে করছেন, কলকাতায় বিজেপি যে হারে "ছড়িয়ে পড়ছে", তাতে ভয় পাচ্ছেন মমতা।
এদিকে 'জয় শ্রী রাম' নিয়ে ওঠা বিতর্কে নাম না করে তৃণমূল নেত্রীর দিকে আঙ্গুল তুলে রাজনাথ বলেন, "জয় শ্রী রাম বলার মধ্যে কোনও অপরাধ নেই। আমি অনেকবার কলকাতায় এসে শুনেছি জয় শ্রী রাম, জয় মা কালী, জয় মা দুর্গার নামে ধ্বনি দেন সবাই। এটা নিয়ে সমস্যা থাকার কোনও কারণ নেই। ন্যায়বিচার না থাকলে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না।" তৃণমূল সুপ্রিমো এবং রাহুল গান্ধী যেভাবে "ক্রমাগত ব্যক্তিগত আক্রমণে" বিঁধে চলেছেন বিজেপি প্রধানকে, তার সমালোচনাও করেন রাজনাথ। বলেন, "এটি খুবই দুঃখজনক যে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে মৌখিক নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আমি সকল প্রধানমন্ত্রীদের সম্মান করতাম, তা তিনি জওহরলাল নেহরু হোন কিংবা রাজীব গান্ধী। কিন্তু বর্তমানে 'চৌকিদার চোর হ্যায়' সম্বোধনে যেভাবে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করা হচ্ছে, তা দুঃখজনক।"
এদিন মঞ্চ থেকে বিরোধীদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিয়ে রাজনাথ বলেন, "বিরোধী দলগুলি এনআরসি নিয়ে মিথ্যা কথা এবং ভীতি ছড়াচ্ছে জনগণের মধ্যে। দেশে থাকা বিদেশীদের তথ্য রাখার জন্য এই এনআরসি। আমরা হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টানদের নিয়ে একযোগে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু বিরোধী দলগুলি একে ইস্যু বানিয়ে মিথ্যা ও ভীতির রাজনীতি করার চেষ্টা করছে।"
পশ্চিমবঙ্গের জনগণের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে রাজনাথ বলেন, "ভয় না পেয়ে ভোট দিন। যদি ভোট দিতে যাওয়ার সময় আপনাদের উপর কেউ আক্রমণ করে তাদের নাম লিখে রাখুন। আমরা পরে দেখে নেব তাদের।"
Read the full story in English