General Election 2019: তাঁকে নজরবন্দি করে কিচ্ছু করতে পারবে না নির্বাচন কমিশন, এ কথা আগেই জানিয়েছিলেন 'প্রত্যয়ী' অনুব্রত মণ্ডল। বীরভূমে ভোটের দিন অনুব্রত মণ্ডলের সে কথাই ফলে গেল। এদিন কার্যত তিনি এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। শুধু তাই নয়, কমিশনের নজরবন্দি দশাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই বোলপুরের তৃণমূল কার্যালয়ে অন্য একজনের মোবাইল ফোন থেকে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে সদ্য মাতৃহারা অনুব্রতর হুঙ্কার, ‘‘বলে দাও, আমাদের কাছে বেশি গুলি আছে।’’ উল্লেখ্য, অনুব্রত মণ্ডলের মোবাইল ফোনটি হেফাজতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কাকে বার্তা দিলেন অনুব্রত?
"আমাদের কাছে বেশি গুলি আছে" এ কথা অনুব্রত মণ্ডল ঠিক কার উদ্দেশে বলেছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রত্যাশিতভাবেই অনুব্রত নিজেও এ বিষয়টি খোলসা করেননি। তবে এদিন বীরভূমের দুই এলাকায় অশান্তি হয়েছে। এরমধ্যে রীতিমতো অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে নানুরে। তৃণমূলকর্মী বলে পরিচিত এক মহিলার বাড়ির সামনে এদিন লাঠি-বাঁশ নিয়ে চড়াও হন গ্রামবাসীদের একাংশ। ক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা নিজেরা বিজেপি কর্মী-সমর্থক বলে দাবি করেন। অন্যদিকে, নলহাটির হাবিসপুরে বিজেপি সমর্থককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মারধরে মাথা ফেটেছে বিজেপি এক সমর্থকের। ওই তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে ব্যাপক হাতাহাতি হয়। পরিস্থিতি সামলাতে শেষ পর্যন্ত লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ফলে, এই দু'ই এলাকার কোনও নেতাকে অনুব্রত বিশেষ বার্তাটি দিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
অনুব্রতর ভোট দান
দলীয় কর্মীদের বাইকে চড়ে ফুরফুরে মেজাজে ভোট দিয়েছেন বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি। এদিন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে ঢুকে বুথে অনুব্রত বলেন, ‘‘তাড়াতাড়ি হাত চালাও’’। কিন্তু, এই কথার অর্থ কী? প্রশ্ন করতেই পরিচিত মেজাজে অনুব্রতর সাফাই, ভোট দ্রুত করার জন্যই তিনি হাত চালানের কথা বলেছেন। ভোট কেন্দ্রের বাইরে তিনি আবার বলেন, ‘‘নকুলদানাই জিতবে’’। সবমিলিয়ে কমিশনের নজরবন্দি হয়ে থাকলেও, অনুব্রত আছেন অনুব্রততেই।
লোকসভা নির্বাচনের আরও খবর পড়ুন, এখানে
সোমবার ভোট দেওয়ার পর বোলপুরে তৃণমূলের কার্যালয়ে যান অনুব্রত মণ্ডল। দলীয় কার্যালয়ের ফোন থেকে দলের এক কর্মীকে ফোনে অনুব্রত বলেন, ‘‘কীরকম ভোট? কত পার্সেন্টেজ হল? আরও তাড়াতাড়ি করো, হাত চালাও। ব্যাপক লিড চাই। অন্য দলের এজেন্ট আছে না নাই?’’ বারবার ‘হাত চালাও’ বলতে ঠিক কী বলতে চাইছেন অনুব্রত? জবাবে বীরভূমে তৃণমূলের ডাকাবুকো নেতা ফের বলেন, ‘‘তাড়াতাড়ি ভোট করার জন্য বলছি হাত চালাতে’’।
আরও পড়ুন: তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে তুলকালাম নানুর
এর আগে ভোট দেওয়ার পরও অনুব্রত ‘হাত চালানোর’ কথা বলেছিলেন। সেসময় বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি বলেন, ‘‘খুবই শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। সব দাওয়াই কাজ হচ্ছে। নকুলদানা জিতবে। আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। নজদরদারি মানি না। একটা ফোন নিল তো কী হল, হাজারটা ফোন আছে’’। অনুব্রতর কথা যে ঠিক, তা বোঝা গেল এই মন্তব্যের খানিকক্ষণের মধ্যেই যখন তিনি পার্টি অফিস থেকে টেলিফোনে ভোট ম্যানেজ করা শুরু করলেন।
উল্লেখ্য, রবিবার থেকেই কমিশনের নজরবন্দি হয়ে রয়েছেন অনুব্রত। তৃণমূলের কেষ্টর সঙ্গে রয়েছেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। কমিশনের নজরবন্দি হয়ে থাকার জন্য অনুব্রতর মোবাইল ফোনটি রয়েছে কমিশনের হেফাজতে। এবারের লোকসভা নির্বাচনের মরশুমের প্রথম থেকেই তাঁর নকুলদানা মন্তব্য ঘিরে জোর বিতর্ক তৈরি হয় রাজ্য রাজনীতিতে। ভোটার থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী, এমনকী বিরোধীদেরও নকুলদানা খাওয়ানোর নিদান দিয়েছিলেন অনুব্রত। সেই মন্তব্যেই সরগরম হয়ে ওঠে রাজনৈতিক মহল। এদিকে, রবিবার বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ভোটের সময় অনুব্রতকে ঝাড়খণ্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। দিলীপের পাল্টা অনুব্রত বলেন, আমার বাড়ি বীরভূমে, কেন ঝাড়খণ্ডে যাব। ভোটের দিন তিনি বাড়িতেই থাকেন বলে জানান কেষ্ট। আর এদিন দেখা গেল, তিনি শুধু এলাকাতে রয়েছেন তা নয়, রীতিমতো অনুব্রতসুলভ দাপটের সঙ্গেই বিরাজ করছেন লাল মাটির দেশে।