General Election 2019: নরেন্দ্র মোদীর অতীত তুলে ধরে এবার বিঁধলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার আন্দুলের সভায় প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করার ফাঁকে হঠাৎই মোদীর সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হওয়ার কাহিনী শোনালেন মমতা। মোদীর সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা কোথায় হয়েছিল? কেমন ছিল সেই সাক্ষাৎ? সে নিয়েই হাওড়ার আন্দুলের সভায় মুখ খুললেন তৃণমূলনেত্রী।
লোকসভা নির্বাচনের আরও খবর পড়ুন, এখানে
বুধবার মমতা বলেন, ‘‘আমি তো কোনওদিনই নরেন্দ্র মোদীকে চিনতাম না। জানেন প্রথম কবে দেখেছিলাম ওঁকে? তখন অটলবিহারী বাজপেয়ীজি প্রধানমন্ত্রী। গুজরাতে ভূমিকম্প হয়েছিল। আমি তখন রেলমন্ত্রী ছিলাম। অটলজির নেতৃত্বে আমাদের একটা দল গিয়েছিল সেখানে। দেখলাম, অটলজির ব্যাগ ধরে একজন নামছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ওই ভদ্রলোক কে? বলল, আরএসএসের প্রচারক।’’ এরপরই মমতা বলেন, ‘‘অটলজির বেঁচে থাকাকালীন যদি অভিজ্ঞতা শুনতেন। আডবানিজিকে বলুন, তাঁর দলের নেতার অভিজ্ঞতা কী? মুরলী মনোহর যোশীকে জিজ্ঞেস করুন, কেমন অভিজ্ঞতা? আমি বলতে চাই না। আমার বলতে ভালও লাগে না।’’
আরও পড়ুন: তৃণমূলের ব্লক-জেলা সভাপতির যা যোগ্যতা তা মোদী-শাহের নেই: মমতা
প্রসঙ্গত, অটল জমানার সঙ্গে মোদী জমানার তুলনা টেনে বরাবরই সরব হন মমতা। তৃণমূল নেত্রী এর আগেও বহুবার বলেছেন, বাজপেয়েজী ‘উদারনৈতিক নেতা’, আর মোদী-শাহরা ফ্যাসিবাদী। গুজরাতে দাঙ্গার সময় নরেন্দ্র মোদীকে রাজধর্ম পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন বাজপেয়ী। তাছাড়া, মোদীর রাজনৈতিক উত্থানের নেপথ্যে আডবানির বড় ভূমিকা রয়েছে বলেই মনে করে রাজনৈতিক মহল। অথচ সেই আডবানিকেই পরবর্তী ক্ষেত্রে দলের ‘মার্গদর্শক মণ্ডলে’র সদস্য করে দেন মোদীরা। এমনকী, এবার লোকসভা নির্বাচনে ভোটে লড়ার টিকিটিও আডবানিকে দেওয়া হয়নি। সেই প্রেক্ষাপটে লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে এদিন মোদীর অতীত তুলে ধরে আদতে মমতা খোঁচা দিলেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: West Bengal Lok Sabha Elections 2019 LIVE Updates: মোদীকে কমিশনের জোড়া ক্লিনচিট
উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কয়েকবার সরব হয়েছেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আডবানি, মুরলী মনোহর যোশীরা। ক’দিন আগেই ব্লগে নাম না করে মোদী-শাহের নেতৃত্ব নিয়ে মুখ খুলেছিলেন আডবানি। তিনি ব্লগে লিখেছিলেন, “রাজনৈতিক ভাবে যাঁরা আমাদের আদর্শের বিরুদ্ধে বা আমাদের সঙ্গে সহমত নন, তাঁদের কখনোই বিজেপি ‘শত্রু’-র চোখে দেখেনি। দলের জন্মলগ্ন থেকে বিজেপি কখনোই প্রতিপক্ষকে দেশদ্রোহীর তকমা দেয়নি।” প্রসঙ্গত, বিরোধীদের ‘শত্রু’ ও ‘দেশদ্রোহী’ তকমা দিয়ে লোকসভা ভোটের প্রচারে এবার আওয়াজ তুলেছেন মোদী-শাহরা। একইসঙ্গে আডবানি লিখেছেন, “আগে দেশ, পরে দল, শেষে ব্যক্তি, এটাই আমার জীবনের নীতি…”। এর আগেও মোদী-শাহের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন আডবানি। ২০১৫ সালে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির পর আডবানির নেতৃত্বাধীন ‘মার্গদর্শক মণ্ডল’-এর তরফে এক বিবৃতিতে মোদী-শাহর নেতৃত্বের সমালোচনা করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, এবারের লোকসভা নির্বাচনে হিন্দু ভাবাবেগ নিয়েই মাঠে নেমেছে মোদী বাহিনী। এদিকে, মোদী-শাহের অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই হিন্দু ভাবাবেগকেই হাতিয়ার করে বারবার বিজেপিকে নিশানা করে চলেছেন। এমন সময়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আদতে মোদীর সেই অতীত চেহারাই মমতা তুলে ধরার চেষ্টা করলেন বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। পাশাপাশি, আডবানির মতো বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সঙ্গে মোদীর বর্তমান সম্পর্ক কেমন তা নিয়ে বিজেপি ভোটারদের উদ্দেশে এদিন মমতা পরোক্ষে কৌশলী বার্তা দিলেন বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।