General Election 2019: পঞ্চম দফার লোকসভা নির্বাচনের সাতসকাল থেকেই তেতে ছিল ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র। সকাল থেকেই ব্যারাকপুরের বিভিন্ন প্রান্তে দফায় দফায় গোলমালের ছবি ধরা পড়েছে। কিন্তু সব হিসেব উলটপালট করে ব্যতিক্রমী হয়ে রইল বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্র। চাঁদিফাটা রোদে ভোটের উত্তাপে পারদ যেন চড়লই না মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুর গড়ে। শাসকদলের গড় বলে পরিচিত বীজপুরে দাপিয়ে বেড়াল বিরোধীরা। শাসক শিবিরের সামনেই দেখা গেল বিজেপির ক্যাম্প অফিস। শুধু কী তাই, যে বীজপুরে ভোট মানেই গন্ডগোলের ছবি ধরা পড়ত, সেখানে এবার যেন শান্তি বিরাজমান। গোলমাল তো দূরঅস্ত, নির্বিঘ্নেই ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন বাসিন্দারা। বীজপুরের এহেন ভোলবদল নিয়েই নতুন করে ফিসফাস শুরু রাজনৈতিক মহলে।
লোকসভা নির্বাচনের আরও খবর পড়ুন, এখানে
ভোটের দিন বাড়ির বাইরে নাকি সেভাবে পা রাখেননি বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের পুত্র শুভ্রাংশু রায়। ক্যাম্প অফিসেও দেখা মেলেনি শুভ্রাংশুর। মুকুল পুত্রের এই মতিগতি দেখেই নয়া চর্চা শুরু হয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। তবে কি এবার নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মমতার দলের হয়ে ভোট করাননি শুভ্রাংশু? নাকি বাড়িতে বসেই কোনও ‘গোপন অপারেশন’ করেছেন শুভ্রাংশু? কারও মতে, শুভ্রাংশুর ‘ইচ্ছেতেই’ নাকি এবার বীজপুরে ক্যাম্প অফিস খুলতে পেরেছে বিজেপির মতো বিরোধী দল। তবে কি শুভ্রাংশু তাঁর বাবার দেখানো পথেই এগোচ্ছেন? এমনই নানা গুঞ্জন চলছে বাংলা রাজনীতির অলিন্দে।
আরও পড়ুন: বাবার মতো নই, পাল্টা ছুরি বসাতে জানি: শুভ্রাংশু
প্রসঙ্গত, বীজপুরে এ যাবৎ যত নির্বাচন হয়েছে, তাতে গোলমালের ছবিই ধরা পড়েছে প্রতিবার। বীজপুরে ভোট মানেই বরাবরই অশান্তির বাতাবরণ থাকে। সে তুলনায় এবারের লোকসভা নির্বাচনে তেমন কোনও অশান্তির আঁচ চোখে পড়েনি। ভোটারদেরও মতে, ‘‘এই প্রথমবার শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।’’ তাঁদের মতে, ‘‘কোনও বাধা ছাড়াই প্রথমবার ভোট হল।’’ তাছাড়া শাসকদলের দাপাদাপিতে বীজপুরের মাটিতে কখনই সেভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি বিরোধীরা। সেদিক থেকে দেখলে এবার শাসক ডেরায় বিজেপির মতো এই মুহূর্তে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের এহেন অবস্থানে নজর কেড়েছে রাজনীতির কারবারিদের।
অন্যদিকে, ভোটের দিন ব্যারাকপুরের বিভিন্ন প্রান্তে যেভাবে বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন অর্জুন সিং, সেখানে বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্রে কিন্তু কোনও বাধা ছাড়াই ঘুরে বেড়াতে পেরেছেন ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী। এদিকে, ভোটের দিন শুভ্রাংশুর ঘরে বসে থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তাহলে কি শুভ্রাংশুর সঙ্গে থাকা শাসকদলের নেতা-কর্মীরা অর্জুনকেই আড়াল থেকে সমর্থন করলেন? এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে। প্রসঙ্গত, ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফল অনেকটা নির্ভর করে বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ব্যবধানের উপর। সেক্ষেত্রে এবার বীজপুরে শাসকদলের ফল নিয়ে চিন্তায় দলেরই একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক নেতা বললেন, ‘‘বীজপুরের ফলাফল নিয়ে আমরা আশঙ্কায় রয়েছি।’’
আরও পড়ুন: চাইলেই গদ্দারকে ধরিয়ে দিতে পারতাম, মন্তব্য ক্ষুব্ধ মমতার
উল্লেখ্য, ক’দিন আগেই তৃণমূলের এক নির্বাচনী সভায় দলেরই একাংশের নেতৃত্বের উপর ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন শুভ্রাংশু। মুকুলকে তৃণমূলের চোর অপবাদ দেওয়া নিয়ে যেমন তিনি মুখ খুলেছেন, তেমনই তিনি যে তাঁর বাবার মতো অহিংসের পথে না গিয়ে ‘পাল্টা ছুরি বসাতে’ জানেন, সে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মুকুল পুত্র। একইসঙ্গে ক্ষোভের সুরে মুকুল-পুত্রকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘সমালোচনা শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত’’। এর আগে ফেসবুকেও তৃণমূলের প্রতি তাঁর ক্ষোভ নিয়ে সরব হয়েছেন শুভ্রাংশু। এমন প্রেক্ষাপটে ভোটের দিন শুভ্রাংশুর এমন আচরণ যে রাজনৈতিক ভাবে যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ, তা মানছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ।