Lok Sabha Election Result in West Bengal 2019: তিনি হারেননি, ছাপ্পা ভোটের মাধ্যমে তাঁকে হারানো হয়েছে। রাজ্য জুড়ে একাধিক আসনে বিজেপি প্রার্থীরা 'অপ্রত্যাশিত' জয় পেলেও ভারতীর ভাগ্যে শিঁকে ছেড়েনি। আর এরপরই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-য় সরব হলেন প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ।
ভোটের প্রচারে তাঁর গলায় চড়েছিল উত্তেজনার পারদ। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সোচ্চার হয়েছিলেন মমতার ‘ভালো মেয়ে’। খাকি উর্দি ছেড়ে সকলকে চমকে দিয়ে পদ্মপতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন মমতার একদা স্নেহধন্যা ভারতী ঘোষ। উত্তরপ্রদেশ থেকে লোক ঢুকিয়ে দেওয়ার মতো হুমকি দিয়ে খবরের হেডলাইন কুড়িয়েছেন এই দুঁদে আইপিএস। এরপর ভোটের দিন 'মাটিতে পড়ে গিয়ে' কখনও তিনি কেঁদে ফেলেছেন, কখনও আবার ‘ছাপ্পা ভোট’ রুখতে বুথে বুথে চড়াও হয়ে বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছেন। তবে চর্চার শীর্ষে থাকলেও উনিশের নির্বাচনে বঙ্গ রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দেওয়া নবাগতা ভারতীর মুখে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি ফুটল না। ঘাটালে তৃণমূলের তারকাপ্রার্থী দেবের কাছে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হলেন ভারতী ঘোষ। তবে হারলেও হাল ছাড়তে নারাজ ভারতী। ‘তৃণমূলের সন্ত্রাস ও ছাপ্পা ভোটের’ জন্যই তিনি হেরে গেলেন বলে যেমন দাবি করেছেন, তেমনই পরাজয়ের পরও প্রতিপক্ষ দেবকে নিশানা করে ভারতী বললেন, ‘‘ওঁর নাম বদলে এবার ছাপ্পা অধিকারী করা হোক’’।
ঠিক কী বলেছেন ভারতী ঘোষ?
লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘আমি মনে করি আমার নৈতিক জয় হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে জয়টা হচ্ছে না। কারণ, আমি রাষ্ট্রের সন্ত্রাসের শিকার। কেশপুরে কীভাবে সন্ত্রাস চলেছে, সকলে দেখেছেন। বুথ জ্যাম করা হয়েছে, আমাকে বহু বুথে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমি পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলাম কমিশনে। দুর্ভাগ্যবশত আমার কথা কেউ শোনেননি। কমিশন কিছু করেনি’’।
আরও পড়ুন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অশিক্ষিতকে ভয় পাই না: ভারতী ঘোষ
কেন হারলেন ভারতী? কীভাবে হয়েছে ‘ছাপ্পা ভোট’? নিজেই ব্যাখ্যা দিলেন প্রাক্তন আইপিএস। তিনি বলেন, ‘‘ভোটিং শিট দেখলে বোঝা যাবে কীভাবে ছাপ্পা হয়েছে। যেখানে আমার পোলিং এজেন্টকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, সেখানে শুধুমাত্র তৃণমূলের পোলিং এজেন্টই ছিল। আর সেই বুথেই ধরুন তৃণমূলে হাজারের উপর ভোট পড়েছে, আর বিজেপির ভোট ৬টা কি ১৫টা। এই প্যাটার্নটা গণতান্ত্রিক কাঠামোয় বিশ্বাসযোগ্য নয়। এরকম হয় না যে একটা এলাকায় ৬টা লোক একটা দল করে, আর ১১০০ লোক আরেকটা দল করে’’। এরপরই ছাপ্পা ভোটের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন ভারতী। তাঁর দাবি, কার্যত ছাপ্পা ভোটের মাধ্যমেই দেব জিতেছেন। ভারতী বলেন, ‘‘উপর থেকে নীচে ছাপ্পা ভোট করেছে। শুধু কেশপুর নয়, দাসপুরেরও বিভিন্ন এলাকায় ছাপ্পা ভোট করেছে , সন্ত্রাস করেছে, সিআইডি দিয়ে হেনস্থা করেছে। তাও আমি ৬ লক্ষেরও উপর ভোট পেয়েছি (এই প্রতিবেদন যখন লেখা হয়েছে তখন পর্যন্ত যা হিসাব)। এটা আমার নৈতিক জয়’’। দেবকে জেতার জন্য কি শুভেচ্ছা জানাবেন? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভারতী বলেন, ‘‘শুধু ওঁকে কেন জানাব, যাঁরা জিতেছেন, সকলকেই জানাব। ওঁর নৈতিক জয় হবে না, রাজনৈতিক জয় হবে। বাংলার মানুষ জানে ভোট লুঠ হয়েছে। দেব অধিকারীর নাম বদলে এবার ছাপ্পা অধিকারী রাখলে কাজে দেবে। এটা একটা অঘটন’’।
আরও পড়ুন: ‘রক্তাক্ত’ ভারতী ঘোষ, ‘অপহৃত’ বিজেপি এজেন্ট
ভারতী হারলেও, উনিশের ফল নিয়ে খুশি তিনি। ভারতী বলেন, ‘‘যে ধরনের সন্ত্রাস-অত্যাচার করেছে তৃণমূল, জানতাম মানুষ তার জবাব দেবেই। দেখুন, মানুষ জবাব দিয়েছে’’। প্রসঙ্গত, বাংলায় এবার বড়সড় উত্থান ঘটেছে বিজেপির। অন্যদিকে, একদা মমতা ঘনিষ্ঠ ভারতী বলেন, ‘‘মোদীজি সরকারে আসছেন, এটা ভেবে খুশি। দেশকে উনি আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন’’।
তবে হেরে গিয়ে কোনওভাবেই ‘হতাশ’ নন ভারতী। এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন আইপিএস বলেন, ‘‘আমি কখনও হতাশ হই না। এটা আমার চরিত্রের বিরোধী। চাকরিও তো ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি রাজনীতিতে থাকছি, থাকব। দেখতে পাবেন আগামী দিনে’’।