অবিভক্ত দিনাজপুরের মেয়ে বিজেপির রাজ্য নেত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। তার বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে তিনি জয়ী হয়েছেন। পরাজিত করেছেন হেভিওয়েট দুই প্রার্থী, সিপিএমের মহম্মদ সেলিম ও কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সিকে। একই সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের মতন শক্তিশালী দলের প্রার্থীকে কুপোকাত করেছেন বালুরঘাটের এই মেয়ে।
কী বলছেন বিজয়ী এই প্রার্থী?
প্রায় এক বছর আগে উত্তর দিনাজপুরের দাড়িভিট হাইস্কুলে হিংসার বলি হন দুই যুবক। গ্রামবাসীদের অভিযোগ ছিল, পুলিশের গুলিতেই ওই দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। যদিও সেই দাবি নস্যাৎ করে দেয় রাজ্য সরকার। সেসময় ওই ইস্যু নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন করেছিলেন গ্রামবাসীরা। বিজেপি ও তাদের ছাত্রসংগঠন এবিভিপি গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিল। ওই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে বনধ ডেকেছিল পদ্ম শিবির। উত্তপ্ত হয়েছিল ইসলামপুর। এমনকি রাষ্ট্রপতির কাছেও ওই দুই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই থেকেই দাড়িভিট সংলগ্ন গ্রামগুলিতে বিজেপির সংগঠন বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রভাব পড়ে সারা জেলায়। রায়গঞ্জ কেন্দ্রে নির্বাচিত হওয়ার পর দেবশ্রী চৌধুরী স্পষ্ট জানান, তাঁর এই জয়ের মূল কারণ দাড়িভিট ইস্যু।
আরও পড়ুন: ইসলামপুরে শিক্ষক নিয়োগ ও পুলিশি গুলিচালনার পিছনে কী?
দেবশ্রীর কথায়, "সেদিন ভাষা আন্দোলনের জেরে দু'জন এবিভিপি সদস্যের পুলিশের গুলিতে প্রাণ গিয়েছিল। তা মেনে নিতে পারেন নি রায়গঞ্জের মানুষ। এই ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সিবিআই তদন্তের দাবি নিয়ে ফের আন্দোলন চলবে। খুনিদের গ্রেপ্তার করে শান্তি দিতে হবে।"
উল্লেখ্য, এই কেন্দ্রে দীর্ঘদিন সাংসদ ছিলেন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। তারপর আসেন তাঁর স্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। ২০১৪-য় এখানে জয়ী হয়েছিলেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। দীপা দাশমুন্সি ও মহম্মদ সেলিম এবার শুধু পরাজিতই নন, অত্যন্ত কম শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এখানে লড়াই হয়েছে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের। একান্ত আলাপচারিতায় দেবশ্রী বলেন, "শুধু বছরের পর বছর সাংসদ থাকা, মন্ত্রী হওয়া, নিজেদের স্বার্থ পূরণ করা, এটা শেষ কথা নয়। এখানে বিভিন্ন প্রকল্প এক ফোঁটাও এগোয়নি। স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। তা পূরণ হয়নি। তেমনই অত্যন্ত খারাপ যোগাযোগ ব্যবস্থা।"
আরও পড়ুন: সিবিআই তদন্তের দাবি তুলে এবিভিপি-র কর্মসূচিতে দাড়িভিটে নিহতের মা
সাংসদ হিসেবে তাঁর প্রথম কাজ কী? রাজ্য বিজেপির এই নেত্রী বলেন, "এই কেন্দ্রের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা। আমার অন্যতম প্রধান কাজ, সকালের দিকে কলকাতা থেকে একটি নতুন ট্রেন চালু করার উদ্যোগ নেওয়া। পাশাপাশি রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে স্বাস্থ্য পরিষেবা কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সেই দিকেও নজর দেব। নির্বাচনের আগে কোন গালভরা প্রতিশ্রুতি আমি দিই নি।"
তাঁর বিপরীতে ছিলেন দুজন হেভিওয়েট, সিপিএমের মহম্মদ সেলিম ও কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সি, সঙ্গে তৃণমূলের কানহাইয়ালাল আগরওয়াল। তা সত্ত্বেও এই জয় কীভাবে দেখছেন? দেবশ্রীর জবাব, "শুধু নাম দিয়ে কাজ চলে না। মানুষের জন্য কিছু করতে হয়। যেমন মোদিজীর 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ', মানুষ তার সঙ্গে যেতে চেয়েছেন। ভারতীয় জনতা পার্টির উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছেন। এখানে দীর্ঘদিন সাংসদ থাকা, মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অনেক কাজই হয় নি। এমনকি ছোট ছোট দাবিও পূরণ হয়নি। সিপিএমের সাংসদ যিনি ছিলেন, সংসদে তিনি ভাল বিতর্ক করতে পারেন, কিন্তু এটা তো ওঁর পরিচয়। পাঁচ বছরে বিভিন্ন প্রকল্প একটুও এগোয়নি। মানুষ দেখেছেন বাস্তব প্রতিশ্রুতি দেওয়া ও পূরণের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। তাই এখানকার মানুষ নতুনকে বেছে নিয়েছেন।"