লোকসভা নির্বাচন মিটতেই সারা দেশ জুড়ে চর্চা শুরু হয়েছে বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলির ফলাফল নিয়ে। প্রায় সব সমীক্ষাই দেখাচ্ছে সরকার গঠনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৭২টি আসন। সমীক্ষক সংস্থাগুলির দেওয়া জনমতের আভাস অনুযায়ী, গেরুয়া শিবির সহজেই এই ম্যাজিক ফিগার টপকে যাচ্ছে। কিন্তু, দেশের তিনটি রাজ্যের ফলাফলই আসলে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই রাজ্যগুলি হল- উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা। তিন রাজ্যের মোট আসন সংখ্যা ১৪৩। সংখ্যার নিরিখে তাই এই তিন রাজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ, এই তিনটি রাজ্যের ক্ষেত্রে একাধিক সমীক্ষক সংস্থা বিভিন্ন রকম ফলাফলের আভাস দিয়েছে। ফলে, এই তিনটি রাজ্যে বাস্তব ফলাফল কী হতে চলেছে, তার উপরই অনেকাংশে নির্ভর করছে দিল্লির দখলদারি।
দেশের সর্ববৃহৎ রাজ্য উত্তরপ্রদেশে ৮০টি লোকসভা আসন। ২০১৪ সালে এই ৮০টির মধ্যে ৭৩টি আসন পেয়েছিল এনডিএ। এবারের নির্বাচনে রিপাবলিক টিভি-সি ভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী উত্তরপ্রদেশের ৪০টি আসন যেতে পারে মহাজোটর ঝুলিতে। অন্যদিকে, বিজেপি পেতে পারে ৩৮টি এবং কংগ্রেস ২টি। টাইমস নাও-ভিএমআর সমীক্ষা অনুযায়ী, বিজেপি এবং এনডিএ জোট পেতে পারে ৫৮টি আসন এবং মহাজোটের পকেটে যেতে পারে ২০টি আসন। টুডেস চাণক্যর সমীক্ষা বলছে, মহাজোট পাবে ১৩টি আসন এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলিকে ধুয়ে মুছে দিয়ে বিজেপি পাবে ৬৫টি আসন। আজতক-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশে এনডিএ পেতে পারে ৬২-৬৮টি আসন। উল্লেখ্য, কংগ্রেসকে ২টির বেশি আসন দিতে পারেনি কোনও সমীক্ষাই। অর্থাৎ, সবমিলিয়ে জনমতের আভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে সমীক্ষক সংস্থাগুলির সংখ্যার ব্যাপক তারতম্য সামনে আসছে।
এই লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যার বিচারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির জোর লড়াইয়ের সাক্ষী থাকতে চলেছে। বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলি অনুযায়ী, বাংলায় বড়সড় উত্থান হতে চলেছে বিজেপির। আজ-তকের সমীক্ষা বলছে, ৪২টি আসনের মধ্য বিজেপি এবং তৃণমূলকে সম সংখ্যক আসন পেতে পারে। তাদের আভাস অনুযায়ী, তৃণমূল পেতে পারে ১৯-২২টি আসন, আর বিজেপিও পেতে পারে ১৯-২৩টি আসন।
তবে অন্যান্য সমীক্ষায় বিজেপি-তৃণমুলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলই। টুডেস চাণক্যর সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৮টি আসন পেতে পারে বিজেপি এবং ২৩টি আসন পেতে পারে তৃণমূল। কিন্তু টাইমস নাও-ভিএমআর আবার মনে করছে, ১১টি আসন পাবে বিজেপি এবং টিএমসি পাবে ২৯টি আসন। এক্ষেত্রে, রিপাবলিক-সিভোটারের সমীক্ষাতেও একই ফলাফলের ইঙ্গিত মিলেছে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল পেয়েছিল ৩৪টি আসন এবং বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল ২টি আসন।
বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষায় প্রাপ্ত আসনসংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে ওড়িশার ক্ষেত্রেও। বেশিরভাগ সমীক্ষা মনে করছে যে ২০১৪ সালের ফলাফলকে বদলে দিতে পারে এবারের বিজেপির উত্থান। গতবারের লোকসভা নির্বাচনে উপকূলবর্তী রাজ্যটির ২১টি আসনের মধ্যে বিজু জনতা দল (বিজেডি) পেয়েছিল ২০টি আসন এবং বিজেপি জিতেছিল ১টি আসনে। কিন্তু এবার আজ-তকের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ওড়িশার ২১টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেতে পারে ১৫ থেকে ১৯টি আসন। আর নবীন পট্টনায়কের দলকে ফিরতে হতে পারে শূন্য হাতে।
টাইমস নাও-ভিএমআর এবং রিপাবলিক সি-ভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী ওড়িশার ২১টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেতে পারে ১২টি কিংবা ১০টি এবং নিউজ ২৪-টুডেস চাণক্যর সমীক্ষা অনুযায়ী বিজেপি ঝুলিতে যেতে পারে ১৪ টি আসন। অপরদিকে, এই তিনটি সমীক্ষাতেই বিজেডিকে দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে ৮, ১১ এবং ৭টি আসন।
উল্লেখ্য, পড়শি রাজ্যে বিহারে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবছর বিরোধী দলের জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। বেশিরভাগ সমীক্ষাই মনে করছে, বিজেপি-সংযুক্ত জনতা দল-লোক জনশক্তি পার্টি বিহারে ৪০টি আসনের মধ্যে ৩০টি আসনে জয়লাভ করতে পারে।
তবে নির্ণায়ক তিন রাজ্যের ক্ষেত্রে বুথ ফেরত সমীক্ষার হিসাবগুলি নানা রকম হওয়ায়, নিশ্চিতভাবে কিছুই বলে উঠতে পারছে না ওয়াকিবহাল মহল। শুধু এটা স্পষ্ট যে এই তিন রাজ্যই একপ্রকার চূড়ান্ত করবে দিল্লির মসনদের দাবিদারকে। শেষ উত্তর জানা যাবে ২৩ মে।
Read the full story in English