দীর্ঘদিনের কংগ্রেস দুর্গ আমেথি কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর কাছ থেকে ৩৫,০০০ হাজার ভোটের ব্যবধানে ছিনিয়ে নিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। মোট ভোটের ৪৯.০২ শতাংশ পেয়েছেন স্মৃতি, রাহুল পেয়েছেন ৪৪.৪৪ শতাংশ। আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার আগেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে হার স্বীকার করে নিয়ে স্মৃতিকে অভিনন্দন জানান রাহুল।
Advertisment
আমেথিতে জোরদার প্রচার চালিয়েছিলেন স্মৃতি, যে কেন্দ্রে ২০১৪ সালে তিনি পরাজিত হলেও রাহুলের জয়ের ব্যবধান কমে দাঁড়িয়েছিল আন্দাজ এক লক্ষ ভোটে। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, যিনি এবার ভাইয়ের হয়ে প্রচার করেন, গান্ধী পরিবারের উত্তরাধিকার এবং আমেথির সঙ্গে "ব্যক্তিগত" সম্পর্কের কথা বলেছেন। এর আগে আমেথি বরাবরই গান্ধীদের প্রতি একনিষ্ঠ থেকেছে, ২০১৪ সালের ঐতিহাসিক পরাজয়ের সময়েও কংগ্রেসের হাত ছাড়ে নি উত্তর প্রদেশের এই কেন্দ্র।
এক কোটি চার লক্ষের কিছু বেশি ভোটদাতার বাস এই কেন্দ্রে। এবছর নির্বাচনে ভোট পড়ে ৫৩ শতাংশ, যেখানে ২০১৪-য় ভোট পড়েছিল ৫২.৩৮ শতাংশ। গত ১৫ বছরে তিনবার এখান থেকে সংসদে প্রতিনিধি হয়েছেন রাহুল। স্থানীয়দের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় রাহুল, মূলত নেহরু-গান্ধী পরিবারের প্রতি আবেগের কারণেই। যতই প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোট হোক, রাহুল আমেথি থেকে সফল হয়েই ফিরেছেন।
Advertisment
এ সত্ত্বেও ২০১৯-এ বিজেপি আস্থা রাখে স্মৃতির ওপর। ২০১৪ সালের পরাজয়ের পর থেকে অনবরত কেন্দ্রে এসেছেন স্মৃতি, এবং ভোটদানের দিন তিনি একটি টুইট করেন, যার সারমর্ম হলো, "রাহুল গান্ধী হাজির হয়েছেন বুথ ক্যাপচার করতে। রাহুল গান্ধীকে জবাব দিতে হবে, চুরি তো আগেই করেছেন...এবার ভোট চুরি করতে এসেছেন..."
যুযুধান দুই পক্ষকে ময়দান ছেড়ে দিয়ে এই কেন্দ্রে প্রার্থী দেয় নি এসপি-বিএসপি জোট, যাতে "বিজেপির ভোট অস্থিতিশীল হয়ে যায়"। ভোটেদানের কয়েকদিন আগে বিএসপি সুপ্রিমো মায়াবতী বলেন, "আমরা আমেথি এবং রায় বরেলি কেন্দ্রে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই যাতে বিজেপি-আরএসএস এর সঙ্গে যুক্ত শক্তির ক্ষমতা কমে, এবং দুই বর্তমান সাংসদ (সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধী) ফের একবার ভোটে লড়তে পারেন।" প্রত্যুত্তরে কংগ্রেস ঘোষণা করে, বিএসপি-এসপি-আরএলডি মহাগঠবন্ধনের বিরুদ্ধে সাতটি কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে না তারা।
এই নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল, আমেথি তাদের অন্যতম। এতটাই, যে নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হওয়ার আগেই এখানে প্রচার শুরু হয়ে যায়। জয়ের জন্য বিজেপি যে সমস্ত শক্তি দিয়ে ঝাঁপাবে, তা বোঝা গিয়েছিল ৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের সময়। প্রথমবার এই কেন্দ্রে সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেস "রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার সঙ্গে আপোষ করেছে", এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের নানা চাহিদা না মেটা রয়েছে। স্মৃতিকে পাশে নিয়ে মোদী ঘোষণা করেন, কোরওয়া-তে একটি একে-২০৩ রাইফেল বানানোর কারখানা খোলা হবে, এবং সমস্ত প্রতিরক্ষা বাহিনী ব্যবহার করবে 'মেড ইন আমেথি' রাইফেল। এছাড়াও কেন্দ্রে রোড শো এবং জনসভা করেন যোগী আদিত্যনাথ এবং অমিত শাহ।
এমন নয় যে কংগ্রেস সহজে লড়াই ছেড়ে দিয়েছে। বহুবার কেন্দ্রে গেছেন রাহুল, দেখা করেছেন কৃষকদের সঙ্গে, উদ্বোধন করেছেন একাধিক প্রকল্পের, মায় একটি স্কুলেরও। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী যে শুধুমাত্র রাহুলের পাশে থেকে জনসভা করেন তাই নয়, জেতার জন্য স্ট্র্যাটেজি নির্মাণেও সাহায্য করেন তিনি।
তিনি কেরালার ওয়ানাড়ে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর রাহুল আমেথিতে অনুপস্থিত, এই অভিযোগ তুলে তাঁকে নিশানা করে বিজেপি। ওয়ানাড় থেকে লড়ার সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে স্মৃতি বলেন, "অনুপস্থিত সাংসদ কেন্দ্রের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন"। ভোটের দিন কেন্দ্র থেকে অনুপস্থিত ছিলেন রাহুল, কিন্তু স্মৃতি টানা উপস্থিত ছিলেন। কংগ্রেস শিবির অবশ্য এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, রাহুলের ওয়ানাড়ে প্রার্থী হওয়ার কারণ ছিল দক্ষিণের ভোটদাতাদের আস্বস্ত করা, যে তাঁরা দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
আমাদের নিউজলেটার সদস্যতা!
একচেটিয়া অফার এবং সর্বশেষ খবর পেতে প্রথম হন