/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/04/human-chain-7.jpg)
৮৯ বছরের রানির নেতৃত্বে মানব শৃঙ্খল
৮৯ বছরের রানি কর। বয়সের ভারে ঝুঁকে পড়েছেন, কিন্তু মাথা ঝোঁকাননি কারোর কাছেই। পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জের রানি কর এবার দায়িত্ব নিয়ে তদারকি করেছেন, তাঁর অঞ্চলের সমস্ত মানুষ যেন নির্ভয়ে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকারেই ভোট দিতে যান। আগামী বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জে নির্বাচন।
২০১৭ সালে রানি কর নিজে ভোট দিতে পারেন নি বুথে হিংসার জন্য। তাঁর কথায়, "গতবার ২০১৭ সালে আমি ভোট দেওয়ার জন্য সকাল ১০ টার সময় স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে যাই। আমার প্রতিবেশীরাও সেখানে ছিলেন। খুব ভিড়ের মধ্যে আমরা অপেক্ষা করছিলাম। কিছু স্থানীয় গুন্ডা এসে বোম ফেলে দিল। সবাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। আমাকেও ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছিল। খুব হতাশ হয়েছিলাম, রেগেও গেছিলাম। তখনই আমি ঠিক করি, আমায় কিছু একটা করতে হবে।"
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দফার ভোটে বাংলায় নজর কমিশনের
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটেও সারা পশ্চিমবঙ্গেই প্রচুর হিংসার ঘটনা ঘটে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের তরফে অভিযোগ আসে, একাধিক কেন্দ্রে মানুষ ভোট দিতেই পারেন নি।
রানির স্বামীর দান করা জমিতে তৈরি হয়েছে কলেজপাড়া গভর্মেন্ট স্পনসর্ড স্কুল। সেখানেই ২০১৭ সালে নির্বাচন ঘিরে হিংসার ঘটনার সাক্ষী থাকেন রানি। "মানব শৃঙ্খলের চিন্তা মাথায় আসে আমার। প্রথমে খুব চিন্তায় ছিলাম, সবাই আমার কথা শুনবে কি না। প্রথমে নিজের ছেলে আর দু-একজনের সঙ্গে কথা বলি। ওরা আমায় সমর্থন জানিয়েছিল," বললেন রানি।
১৭ তম সাধারণ নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট শুরু হওয়ার আগে ছেলেকে নিয়ে জেলাশসকের সঙ্গে দেখা করতে যান। নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের সমর্থনে মানব শৃঙ্খল গড়ার অনুমতি চেয়ে চিঠি জমা দিয়ে আসেন রানি। পরের দিন রাস্তায় রাস্তায় প্ল্যাকার্ড পড়ল। বড় সংখ্যক মানুষকে নিজেদের সমর্থনে পেয়েও গেলেন রানি এবং তাঁর ছেলে। ফলওয়ালা থেকে দোকান মালিক, বুড়ো থেকে বাচ্চা এসে প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা মানব শৃঙ্খল তৈরি করে ফেললেন।
রানির কথায়, "একসঙ্গে এত মানুষকে আমার পাশে পেয়ে আমি বাক্যহারা। কত মানুষ এসেছেন, যাদের আমি চিনিই না। আমি সবাইকে স্বাধীন এবং অবাধ নির্বাচনের গুরুত্ব বোঝাতে চেয়েছিলাম। গুন্ডারা কীভাবে আমাদের ভোট দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে পারে? আমি আশা করছি, এ বছর প্রশাসন যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। এখানে সবাই শঙ্কিত।"