‘ম্যাচ ফিক্সিং’ না হলে ৪০০ তো দূরের কথা ১৮০ আসন পার করতে পারবে না বিজেপি! গতকাল দিল্লির রামলীলা ময়দান থেকে ভোটের আগেই ঝড় তুলেছেন রাহুল গান্ধী। পাশাপাশি তিনি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মোদীর 'কর সন্ত্রাস'কেও নিশানা করে বলেছেন, 'লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের ফলে আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে দল'। তিনি বলেন, 'এর ফলে ভোটের প্রচারপর্ব পরিচালনার মত পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ নেই দলের হাতে'।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করে "ম্যাচ ফিক্সিং"-য়ের অভিযোগ আনেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। এপ্রসঙ্গে অন্তত তিনজন প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'বিরোধী দল এবং তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে নেওয়া সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি নির্বাচনের জন্য সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ দেওয়ার মত ন্যায্য অধিকারকে ব্যাহত করছে'।
কংগ্রেস শনিবার ঘোষণা করেছে শুক্রবারই প্রায় ১৭০০ কোটি টাকার আয়কর নোটিস পেয়েছে কংগ্রেস। ২০১৪-’১৫ এবং ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের জন্য ১,৭৪৫ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে। এর আগে ১৯৯৪-’৯৫, ২০১৭-’১৮ থেকে ২০২০-’২১ অর্থবর্ষের জন্য আয়কর নোটিস পাঠানো হয়েছিল। সেই অঙ্কটা ছিল প্রায় ১৮০০ কোটি। ফলে সব মিলিয়ে মোট ৩,৫৬৭ কোটি টাকা জরিমানা দিতে বলা হয়েছে কংগ্রেসকে।
প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনের প্রধানদের মতে, 'এই জাতীয় পদক্ষেপগুলি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে হস্তক্ষেপের সামিল'। প্রাক্তন সিইসি এসওয়াই কুরাইশি বলেছেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি কমিশন এই ধরণের পদক্ষেপকে কমিশন আটকাতে পারে। কারণ এই ধরণের পদক্ষেপগুলি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে হস্তক্ষেপের সামিল"। পদক্ষেপ ভোটের তিন মাস পরেও নেওয়া যেতে তাতে বিশেষ ক্ষতি হবে না। তবে ভোটের ঠিক মুখে এমন পদক্ষেপ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যাহত করতে পারে"।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক প্রাক্তন সিইসি বলেন, “আমাদের সময় কমিশনের সামনে এই ধরণের চ্যালেঞ্জ ছিল না। আদর্শ আচরণ বিধি হল নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের জন্য সমান সুবিধা। নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন যদি আই-টি প্রধান বিরোধী দলকে নোটিশ জারি করে, তাদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে, তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে বকেয়া কর বাবদ কোটি কোটি টাকা আদায় করে তবে কমিশনের হস্তক্ষেপ করা উচিত"।
সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, ইডি বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধেও একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছে। কোথাও বিরোধী দলের নেতাদের প্রাঙ্গনে তল্লাশি চালানো, সমন জারি করা, এবং পৃথক মামলায় গ্রেফতার করার মত একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। দিল্লির আবগারি নীতি মামলায় গত সপ্তাহে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং মাসের শুরুতে বিআরএস নেত্রী কে কবিতাকে গ্রেফতার তারই সাম্প্রতিক উদাহরণ।
প্রাক্তন সিইসি বলেন, "ইডি যখন নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাচ্ছে তখন তাতে তাদের নির্বাচনী প্রচার ব্যাহত হচ্ছে। প্রাক্তন সিইসি বলেন, "কমিশন জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে বাধা দিতে পারে না, তবে যদি সেই ধরণের কোন বিষয় না হয় তাহলে আইটি বিভাগ এবং ইডি কি আরও দুই মাস অপেক্ষা করতে পারে না,"?
অপর এক প্রাক্তন সিইসি, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, তিনি বলেছেন, “কোন একটি রাজনৈতিক দলকে যখন নির্বাচনের ঠিক আগে আর্থিক ভাবে পঙ্গু করা হয় তখন কীভাবে আশা করবে যে সেই দল সুষ্ঠভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে'। তিনি বলেছেন, এই ম্যাচে আম্পায়ার হিসাবে, কমিশন সম্পূর্ণরূপে নীরব থাকতে পারে না। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে একটি বৈঠকের মাধ্যমে কিছু ভূমিকা পালন করতে হবে যাতে অভিযান এবং অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ এবং ট্যাক্সের বকেয়া আদায়ের মত বিষয়গুলি পিছিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের রাজি করানো যায়"।