তৃণমূলের স্বৈরতান্ত্রিক নৈরাজ্য ও বিজেপির আগ্রাসন রুখতে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়ার ডাক দিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। গতকালই প্রেস বিবৃতি দিয়ে বুদ্ধবাবুর সেই আবেদন প্রকাশ করে সিপিআইএম। মঙ্গলবার বামফ্রন্টের তরফে একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করা হল। যেখানে অসুস্থ শরীরে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও আইএসএফ-য়ের মোর্চা প্রার্থীদের জিতিয়ে বাংলার রাজনীতিতে ইতিহাস গড়ার আবেদন করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
অসুস্থতার কারণে গত মাসে বামেদের ব্রিগেডে হাজির হতে পারেননি বুদ্ধদেববাবু। তবে শারীরিকভাবে না থাকলেও তাঁর মন যে ব্রিগেডেই ছিল তাও জানিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। আপাত তাঁর শারীরিক অবস্থা আগের তুলনায় কিছুটা ভালো রয়েছে। দলীয় কর্মসূচি, রাজ্যের রাজনৈতিক সহ নানা ব্যাপারে খোঁজখবরও রয়েছে তাঁর কাছে। এবার তাই ভোটের মুখে সরাসরি বদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দিয়ে ভিডিওবার্তা প্রকাশ করে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করল সিপিএম।
প্রায় দেড় দশক আগে নন্দীগ্রামে ভূমি আন্দোলনের সময় পুলিশ প্রবেশ কার অনুমতিতে হয়েছিলো? সম্প্রতি প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। একে অপরের ঘাড়ে দায় ঠেলছেন মমতা ও অধিকারী পরিবার। বুদ্ধবাবুর অডিও বার্তাতেই নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গে উঠে এসেছে। সেখানে শিল্প গঠনের প্রয়াস বাতিলের জন্য তৃণমূলকে দায়ী করা হয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'নন্দীগ্রামে এখন শ্মশানের স্তব্ধতা।'
অডিও বার্তায় কী বলেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য?
বাংলার রাজনীতি এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বলে বক্তব্য়ের শুরুতেই জানিয়েছেন বুদ্ধবাবু। বলেছেন, 'নমস্কার, বাংলার প্রিয় নাগরিকবৃন্দ। বিধানসবা নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। আমরা সকলেই বুধতে পারছি এরাজ্যের রাজনীতি এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। বিগত বামফ্রন্টের আমলে আমরা স্লোগান তুলেছিলাম, কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। সেই চিন্তাধারা নিয়েই আমরা এগিয়েছি। কৃষিতে যেমন সাফল্য এসেছিল, তেমনই শিল্পের প্রসার ঘটতে শুরু করেছিল। বামফ্রন্ট অপসারিত হওয়ার পর তৃণমূলের সরকার রাজ্য জুড়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সমস্ত বিচারেই রাজ্যের অর্থনীতিতে নেমে এসেছে বিপর্যয়, হতাশা। কৃষিতে সঙ্কট, কৃষকের সঙ্কট। কৃষিজাত দ্রব্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে।'
তৃণমূল আমলে শিল্পের হতশ্রী চেহারার কথাও ধরা পড়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। অডিও বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, 'এ রাজ্যে শিল্প, শিল্পায়ন সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। গত ১০ বছরে উল্লেখযোগ্য একটি শিল্পও আসেনি। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে এখন শ্মশানের নীরবতা।'
নাগরিক জীবনের চাওয়াপাওয়াও থমকে গিয়েছে বলে দাবি এই বাম নেতার। একই সঙ্গে মহিলা নিরাপত্তা, যুব সম্প্রদায়ের ভবিষ্যত নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বলেছেন, 'শিক্ষায় নৈরাজ্য, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে, নাগরিক জীবনের চাহিদাগুলি অবহেলিত। সামাজিক জীবনে গণতন্ত্র আক্রান্ত হচ্ছে। স্বৈরাচারী শাসকদল, তাদের কর্মীবাহিনী এবং সমাজবিরোধীরা একজোট হয়েছে। মহিলাদের নিরাপত্তা ভয়ঙ্কর ভাবে বিঘ্নিত। এই পরিস্থিতি চলতে পারে না। বিশেষত যুব সম্প্রদায় যাঁরা দেশের ভবিষ্যৎ, তাঁরা এখন আশাহীন, উদ্যোগহীন, হতাশায় জড়িয়ে পড়ছেন। রাজ্য ছাড়ছেন অনেক যুবক। দেশের অন্যান্য জায়গায় গিয়ে চাকরির সন্ধানে বাঁচার চেষ্টা করছেন।'
তৃণমূলের স্বৈরাচার ও বিজেপির আগ্রাসনে বাংলার পরিবেশ কলুষিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বুদ্ধবাবু। অডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, 'তৃণমূলের স্বৈরাচার, অন্য়দিকে বিজেপির আগ্রাসনে বাংলায় যেমন বিপদের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তেমনই এক সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল মিলে মোর্চা গঠন করেছে। এই নির্বাচনে এই মোর্চা সংগ্রেমের মধ্যে দিয়ে লড়াই করবে। বিপথগামী গণতন্ত্র, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে রক্ষা করবে। মেহনতি মানুষের হয়ে কাজ করবে। ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সরকার গড়ে তুলে পশ্চিমবঙ্গকে বিপদ থেকে রক্ষা করুন। নতুন ইতিহাস তৈরি করুন। এটাই আমার আবেদন।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন