General Election 2019: ‘‘তৃণমূলের নতুন মানে হল, টেরর ম্যানুফ্যাকচরিং কোম্পানি। বাংলাকে কাঙাল বানিয়েছে তৃণমূল। সোনার বাংলা গড়ার কাজ করবে মোদী সরকার’’, তৃতীয় দফার ভোটের আগের দিন সোমবার বাংলার ৪ জায়গায় সভা করে এই ভাষাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন অমিত শাহ। তবে নরেন্দ্র মোদীর প্রধান সেনাপতিকে ছেড়ে দেননি তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিন বর্ধমানের তিনটি সভা থেকেই মাইক হাতে পাল্টা আক্রমণে সোচ্চার হয়েছেন মমতা। শাহকে তৃণমূল নেত্রীর জবাব, ‘‘পচা শামুকের আমদানি হয়েছে। পচা শামুকে পা দিলে কেটে যায়। দিল্লি কা লাড্ডু জানেন, জো খায়া ওভি পস্তায়া, জো নেহি খায়া, ওভি পস্তায়া। একদম ওদের বিশ্বাস করবেন না।’’
লোকসভা নির্বাচনের আরও খবর পড়ুন, এখানে
ভোট বাংলায় সোমবারটা কার্যত মমতা বনাম শাহের বাগযুদ্ধেই সরগরম। তবে এই দুই মহারথীর সঙ্গে এদিন বাংলায় পা রেখেছিলেন মোদীর আরেক সৈনিক তথা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনিও এদিন ৪ জায়গায় সভা করেন। যোগীর কটাক্ষ, ‘‘নেতৃত্বের অভাবে পিছিয়ে পড়ছে বাংলা’’।
আরও পড়ুন: West Bengal Lok Sabha Elections 2019 LIVE Updates: মোদীবাবুর সরকার ঘাড় ধাক্কা দেওয়ার সরকার: মমতা
সোমবার সকাল প্রথমে নিউটাউনের এক হোটেলে সাংবাদিক বৈঠক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন অমিত শাহ। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি বলেন, ‘‘বাংলায় বড় পরিবর্তন হতে চলেছে...গত দু’দফার ভোটে মমতার হার স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। তাই তিনি বিজেপি নেতাদের কপ্টার আটকাচ্ছেন। মমতার সভায় ভিড় হচ্ছে না, তাই ক্যামেরায় শুধু মঞ্চ দেখানো হচ্ছে। গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছেন মমতা। এখন তিনি নিজেই গণতন্ত্রের কথা বলছেন’’। এরপর হাওড়ার উলুবেড়িয়া, নদিয়ার কৃষ্ণনগর, বীরভূমের রামপুরহাটের সভা থেকে চেনা কায়দায় মমতাকে বিঁধে শাহ বলেন, ‘‘বাংলাকে কাঙাল বানিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের নতুন মানে জানেন? টেরর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি।’’
অমিত শাহকে জবাব দিতে এদিন বর্ধমানের সভামঞ্চকে বেছে নেন মমতা। তিনি বলেন,‘‘বিজেপির দুই জগাই-মাধাই বাংলায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে কৈফিয়ৎ চাইছে। আমি কি দিল্লিতে বসে যে কৈফিয়ৎ দেব? দিল্লিতে আপনাদের সরকার ছিল, আপনারা কৈফিয়ৎ দিন। বিজেপি কোনও কাজ করে না। ভোট এলেই বিজেপি শুধু দাঙ্গা বাঁধায়। সারা বছর বাংলায় আসে না। জানে, গোটা দেশে হারবে তাই বাংলায় এসেছে বসন্তের কোকিলের মতো। টাকা দিয়ে ভোট চাইছে। মোদী ৫ বছরে কী করেছেন, সেটা বলছেন না। খালি বলছেন, মমতা কুছ নেহি কিয়া। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু না করলে ২ টাকা কিলো দরে চাল কী করে পায় মানুষ?... জিজ্ঞেস করুন, কৃষকদের জন্য কী করেছেন’’? উল্লেখ্য, এদিন মমতার দিকে তাক করে শাহের কটাক্ষ, ‘‘ বাংলার গরিবদের জন্য কী করেছেন মমতাদি? আপনি জবাব চাইছেন মোদীজি কী করেছেন? আপনাকে সে জবাব দেওয়ার দরকার নেই’’।
আরও পড়ুন: বেশি কথা বললে মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে দেব, মোদীকে হুঙ্কার মমতার
এদিন বাংলার মাটিতে পা রেখেই শাহ জানান, ‘‘সারা দেশে এনআরসি করা হবে’’। এ বিষয়টির জবাবে মমতা বলেন, ‘‘মোদীবাবু, আপনার সরকার ঘাড় ধাক্কা দেওয়ার সরকার, এনআরসির সরকার। আমরা এ সরকারকে মানি না’’। পাশাপাশি বাংলায় দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো করতে না দেওয়া নিয়ে এদিনও বিভিন্ন সভায় সরব হয়েছেন অমিত শাহ। তার পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে নির্বাচনী সভামঞ্চ থেকে মমতা কখনও চণ্ডীপাঠ করেছেন, কখনও আবার সূর্য প্রণাম মন্ত্র আওড়েছেন।
সারদা-নারদ, সিন্ডিকেট রাজের প্রসঙ্গ টেনে সোমবার শাহ বলেছেন, ‘‘চিটফান্ডের তদন্ত হোক, সেটা চান না মমতা। তৃণমূল সরকারের পতন হলেই চিটফান্ডের অভিযুক্তরা শাস্তি পাবেন। বাংলায় বিজেপিকে ২৩টি আসন, দিন বাংলায় সিন্ডিকেট রাজ খতম করবে বিজেপি’’। এরপরই ভোটারদের উদ্দেশে শাহের বার্তা, ‘‘সিপিএম, কংগ্রেস মমতাকে হঠাতে পারবে না। একমাত্র বিজেপিই তা পারবে। বিজেপিকে ভোট দিন। সোনার বাংলা গড়বেন মোদী। মমতা বাংলাকে কাঙাল করেছে। মমতার গুন্ডারা এবার আপনাদের ভোটদানে রুখতে পারবে না। নিরপেক্ষ ব্যবস্থা করেছে কমিশন’’।
অন্যদিকে মোদীকে বিঁধে তৃণমূলনেত্রী বলেছেন, ‘‘মোদীর চেয়ারকে ভাল করে ধুয়ে জনতার চেয়ার করতে হবে’’। এরপরই মোদী-শাহর উদ্দেশে 'বাংলার অগ্নিকন্যা' বলেন, ‘‘সবাইকে ভয় দেখাচ্ছেন মোদী-অমিত শাহ। বন্দুকের সামনে লড়েছি, ভয় পাই না’’।