শঙ্খধ্বনি থেকে উলুধ্বনি, মা দুর্গাকে নিয়ে আসা থেকে বারোয়ারি দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তা ক্লাবগুলিকে করের নোটিস পাঠানো নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ, এবং মন্ত্রোচ্চারণ- গ্রামবাংলায় বিজেপিকে আক্রমণ করতে তাদেরই বয়ানকে বেছে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্তত শেষ দু দফার নির্বাচনের জন্যে এই-ই তাঁর তুরুপের তাস।
দিনে তিনটি করে সভা করছেন মমতা। সে সব সভায় তাঁর সরকারের জনমুখী প্রকল্পের কথা যেমন বলছেন, তেমনই নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করতে ভুলছেন না নোটবন্দি, কৃষক আত্মহত্যা এবং কর্মহীনতার ইস্যু নিয়ে। কিন্তু একই সঙ্গে এখন তাঁর বয়ানে যুক্ত হয়েছে বাংলায় ধর্মাচরণ প্রসঙ্গও, তিনি বলছেন রামকৃষ্ণ পরমহংসের কথা, বলছেন সহনশীলতার কথা। গ্রাম বাংলার মানুষ এসবের সঙ্গে পরিচিত, জানেন তিনি।
ইতিমধ্যে তাঁর নিজস্ব ধর্মনিরপেক্ষ ব্র্যান্ডও বজায় রাখছেন মমতা, গতকাল বাঁকুড়ায় কোরাণ থেকে কয়েকটি পংক্তি পাঠ করেছেন তিনি, রমজানের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন।
মোদি এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ মমতাকে এখন টার্গেট করছেন মুসলিম ভোটারদের তুষ্ট করার অভিযোগ তুলে, এ সম্পর্কে জয় শ্রীরাম ধ্বনি তোলা এক গোষ্ঠীর সঙ্গে মমতার ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করছেন তাঁরা। বাংলার বিজেপি নেতারা রাম নবমী এবং হনুমান জয়ন্তীতে অস্ত্র মিছিল করেছেন আগেই।
বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বড়জোড়ায় এক বিশাল সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে মমতা বলেন. "আমরা যখন বারোয়ারি পুজোয় ক্লাবগুলোকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছিলাম তখন বিজেপি কোর্টে গিয়ে সেটা বন্ধ করে দিয়েছিল। দুর্গা পুজোর উদ্যোক্তা ৪০টা ক্লাবকে আয়করের নোটিস পাঠানো হয়েছিল। মোদী তোমার লজ্জা করে না? প্রধানমন্ত্রী বাংলায় আসার আগে একটুও হোমওয়ার্ক করেন না। উনি বলেছেন এখানে দুর্গাপুজোর অনুমতি দেওয়া হয় না। উনি মিথ্যোবাদী। এখানে আমরা দুর্গাপুজো, কালী পুজো, রাস মেলা, লক্ষ্মীপুজো, সব উৎসব করি। এরপর তিনি জনতাকে জিজ্ঞাসা করেন, 'আপনারা উৎসব করেন না?' সমবেত উত্তর আসে 'হ্যাঁ'।"
মমতার নির্বাচনী ভাষণের অন্তর্নিহিত বক্তব্য় স্পষ্ট- বিজেপি-র হিন্দুত্বর সঙ্গে বাংলার ধর্মাচরণের কোনও মিল নেই।
মমতা বলেন, "আমরা দুর্গাপুজো করি, ছট পুজো করি, হোলি, ক্রিসমাস, ইদ উদযাপন করি। আমরা কলকাতায় দুর্গাপুজো কার্নিভ্যাল করি। এটাই আমাদের কালচার। আমরা রামকৃষ্ণের দেশে বাস করি। বাংলাই হচ্ছে এমন রাজ্য যেখানে এরকম সংস্কৃতি আছে। বিজেপি সারা দেশে ভাগাভাগির রাজনীতি করছে।"
রাম ও হিন্দুত্ব নিয়েও বিজেপি-কে টার্গেট করেছেন তিনি। বলেছেন, "ভোটের সময়ে উনি (মোদী) ভগবান রামকে মনে করেন এবং অন্য সময়ে চুপচাপ থাকেন। শ্রীরামচন্দ্রকে ওঁরা নির্বাচনী এজেন্ট বানিয়েছেন। সীতা মাইয়া রামচন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করছেন, বিজেপি এখন তোমায় ডাকছে কেন? ভগবান রাম উত্তর দিচ্ছেন, ভোট এসেছে বলে।"
"আমি ওঁদের বলছি, তারাপীঠ গিয়ে দেখুন, দক্ষিণেশ্বর গিয়ে দেখুন। দয়া করে গঙ্গসাগর গিয়ে দেখুন আমরা কীরকম সৌন্দর্যায়ন করেছি। ফুরফুরা শরিফে গিয়ে দেখুন। মোদী গত পাঁচ বছরে একটা ছোট রাম মূর্তিও বানাতে পারেনি।" তাঁর কথার মধ্যেই জমায়েতের মধ্যে থেকে বেজে ওঠে উলুধ্বনি, বেজে ওঠে শাঁখ।
তিনি জিজ্ঞাসা করেন, "ওরা মা দুর্গার ব্যাপারে কী জানে! ওরা জানে দুর্গার কতগুলো হাত? কটা অস্ত্র থাকে সে হাতে?"
"আমি ওদের কাছ থেকে জাতীয়তাবাদ শিখব না। মনে রাখুন যখন আমরা স্বাধীন হই তখন মহাত্মা গান্ধী কলকাতায় ছিলেন। বাংলা স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্মদাত্রী। বাংলা সংস্কৃতি ও মানবতার জন্মভূমি। সবাই মোদীকে ভয় পাচ্ছে, আমি ছাড়া। আমি ওঁর বিরুদ্ধে বলব। অন্য কেউ যদি না পারে তাহলে বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাংলাই বাঁধবে।"
জনতাকে মমতা মনে করিয়ে দেন য়ে এ ভোট বিধানসভার কিংবা পঞ্চায়েতের নয়, এ ভোট দিল্লি থেকে মোদীকে সরানোর ভোট।
"ওরা ভাগাভাগির রাজনীতি করছে। ওরা দাঙ্গা বাধাচ্ছে। ওরা হিন্দু মুসলমানে লড়াই বাধিয়ে দিচ্ছে। এখানে ওরা বাইরে থেকে লোক এনে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করছে।"
Read the Full Story in English