Lok Sabha Election: পুরনো ফর্মুলাতেই ফের আস্থা রাখলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। রুপোলি জগতের গ্ল্যামার আর নিজের অনাড়ম্বরতা, এ দুইয়ে ভর করে আরও একবার নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছেন তিনি। এবারের লোকসভা ভোটে সিনেমাজগতের পাঁচজনকে টিকিট দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৪ সালেও সমসংখ্যক সিনে তারকাকে প্রার্থী করা হয়েছিল। পাঁচজনই জিতেছিলেন সেবার।
গতবারের পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে ফের প্রার্থী করা হয়েছে। এদের মধ্যে দেব ওরফে দীপক অধিকারী এবং অভিনেত্রী শতাব্দী রায় তাঁদের পুরনো কেন্দ্র যথাক্রমে ঘাটাল ও বীরভূম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মুনমুন সেনকে বাঁকুড়া থেকে আসানসোলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে বিজেপি সম্ভবত সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে আরও একবার দাঁড় করাচ্ছে। তরুণ দুই অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহানকে যাদবপুর এবং বসিরহাটের মত কঠিন কেন্দ্র থেকে দাঁড় করানো হচ্ছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় ভোটের সব খবর পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে
যে দুজনকে গতবারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন সন্ধ্যা রায় এবং তাপস পাল। সন্ধ্যা রায় ভগ্নস্বাস্থ্যের কারণে বাদ পড়েছেন, তাপস পালের বিরুদ্ধে রোজ ভ্যালি চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত।
পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতিবিদদের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম কংগ্রেস ও সিপিএমের চেনা বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে টলিউডের দিকে নজর ঘোরান। ২০০৯ সালে তিনি প্রথমবার তাপস পাল ও শতাব্দী রায়কে টিকিট দিয়েছিলেন। দুজনেই সেবার জিতে যাওয়ার পর সে কৌশল থেকে আর সরেননি মমতা।
লোকসভা ভোট ছাড়াও বিধানসভা ভোটে দেবশ্রী রায় এবং নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিধানসভায় প্রার্থী করেছিলেন মমতা।
মিমি চক্রবর্তী, বয়স-৩০, যাদবপুর
২০১০-১১ সালে বাংলা মেগা টিভি সিরিয়াল গানের ওপারে থেকে সুখ্যাতি অর্জন করেন মিমি। আর্থিকভাবে তাঁর সাফল্য শুরু হয় ২০১২ সালের ছবি বোঝেনা সে বোঝে না এবং বাপি বাড়ি যা থেকে।
যাদবপুর যাকে বলে হেভিওয়েট আসন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রাজনীতি শুরু করেছিলেন এই কেন্দ্র থেকে, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মত প্রার্থীকে ১৯৮৪ সালে হারিয়েছিলেন তিনি। পরে নেতাজি পরিবারের বধূ কৃষ্ণা বসু, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এবং কৃষ্ণা বসুর পুত্র সুগত বসু এখান থেকে লোকসভা আসনে জিতেছেন। ২০১৪ সালে সুগত বসু তৎকালীন সাংসদ সুজন চক্রবর্তীকে ১.২ লক্ষ ভোটে হারিয়েছিলেন।
যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা ক্ষেত্রের মধ্যে অন্যতম যাদবপুর বিধানসভা। এখান থেকেই পাঁচবার ভোটে জিতেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এ আসনের একটি অংশ কলকাতার মধ্যে পড়ে। এখানে বেশ বড়সংখ্যক কমবয়সী ভোটার রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে মিমি চক্রবর্তীর মত বহিরাগতকে টিকিট দেওয়ার কারণ হল যাদবপুর লোকসভার অন্তর্গত বারুইপুর এ বং ভাঙড় এলাকার অন্তর্দ্বন্দ্ব। এ সুযোগ পেয়ে খুশি মিমি বলেছেন, "আমি নিশ্চিত মানুষ আমার মত একজন কমবয়সীকে সুযোগ দেবেন। আমার ওঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।"
নুসরত জাহান, বয়স ২৯, বসিরহাট
২০১০ সালে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় জেতার পরেই শত্রু ছবিতে ডাক পান নুসরত। কিন্তু ২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্তকে আড়াল করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এক বছর ব্যবধানের পর, ২০১৩ সালে খোকা ৪২০ ও খিলাড়ি ছবিতে কমার্শিয়াল সাফল্যের মুখ দেখেন তিনি। তার পর থেকে তাঁর হাতে ছবির ছড়াছড়ি।
এলাকার ৫৪ শতাংশ মুসলিম ভোটের কথা মাথায় রাখলে নুসরতের প্রার্থী পদ যথেষ্ট কার্যকরী হওয়ার কথা। তবে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা হওয়ায় তৃণমূল প্রার্থীকে এখানে গরু পাচার, অনুপ্রবেশ এবং সাম্প্রদায়িক হিংসার মত ইস্যুর মুখোমুখি হতে হবে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে পয়গম্বর মহম্মদকে নিয়ে সোশাল মিডিয়া পোস্টের জেরে বসিরহাটে দাঙ্গা হয়েছিল।
এদিকে বসিরহাটে বিজেপিও বাড়ছে। ২০১৪ সালের বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে জিতে গিয়েছিলেন, যদিও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে হেরে যান। নুসরত বলেছেন, "আমি এখানে এসেছি মানুষের কথা শুনতে এবং তাঁদের সমস্যা দূর করতে।"
শতাব্দী রায়, বয়স ৪৯, আসানসোল
দুবারের তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ শতাব্দী আবার বীরভূম থেকে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন। সমালোচক মহলে তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন, আবার তাঁর ছবি আর্থিক সাফল্যের মুখও দেখেছে। ২০০৯ সালে তিনি প্রথম রাজনীতিতে পা দিয়েই সিপিএমের ব্রজ মুখোপাধ্যায়কে ৬০ হাজার ভোটে পরাজিত করেন তিনি। ২০১৪ সালে নিজের আসন অনায়াসে দখলে রাখেন তিনি।
মুনমুন সেন, বয়স ৬৪, আসানসোল
২০১৪ সালে মমতা বাঁকুড়া থেকে মুনমুন সেনকে প্রার্থী করেন মমতা। ৯ বারের সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর এই চালকে জুয়া বলেই মনে করা হয়েছিলষ তবে সে জুয়া কাজে দিয়েছিল মমতার। বাসুদেব আচারিয়াকে প্রায় এক লাখ ভোটে হারিয়ে দেন মুনমুন। এবার মুনমুনকে আসানসোল থেকে দাঁড় করানো হচ্ছে।
Dev, 36, Ghatal দেব, বয়স ৩৬, ঘাটাল
২০১৪ সালে এখান থেকেই ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন টলিউডের সুপারস্টার। পার্টির সব প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতেছিলেন তিনি। সিপিআইয়ের সন্তোষ রাণাকে ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি ভোটে হারান তিনি।