রাজ্যে উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন, এবার দলের কাজে আরও মন দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিপুল জয়ের জন্য সাম্প্রদায়িকতার পাশাপাশি ইভিএমে কারচুপিকেও দায়ী করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর বক্তব্য, দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে একটিও আসন বিরোধীরা পায় নি, যা তিনি বিশ্বাস করেন না, মানেন না। এ রাজ্যেও ইভিএমে "প্রোগ্রামিং" করা ছিল বলেই তাঁর অভিযোগ। সাংগঠনিক ক্ষেত্রে তাঁর ভাইপো তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোটার লিস্টের দায়িত্ব দিলেন তিনি। পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে জঙ্গলমহল ছাড়াও সরকারি কর্মচারী সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন।
নির্বাচনের ফল বেরোনোর পর শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠক ডেকেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "যুবশ্রী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী এমনকি মৃত্যুর সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো", সে সব তিনি করেছেন। রাজ্যে প্রভূত উন্নয়নের কাজও করেছেন। তাঁর মন্তব্য, "উন্নয়নের কোনো দাম নেই। এক একটা পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। বেশি কাজ করে ফেলেছি, এবার দলের কাজে মন দেব।" মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে তিনি তাঁর হাতে তৈরি দলের কাজ করতে চেয়েছেন।
তাঁর অভিযোগ, গুজরাট, হরিয়ানা, দিল্লি, রাজস্থান, এসব রাজ্যে বিরোধীরা কোনো আসন পায় নি। তার প্রধান কারণ ইভিএমে কারচুপি। মধ্যপ্রদেশে একটি আসন পেয়েছে বিরোধীরা, যা "না পেলেই চলত"। যেসব রাজ্যে বিজেপি সরকার নেই, সেখানেও কী করে এটা সম্ভব হলো? তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, এ রাজ্যেও ইভিএমে প্রোগ্রামিং করা ছিল। তিনি বলেন, "বিজেপি এরাজ্যে কটা আসনে এক লক্ষের বেশি ভোটে জিতেছে? যেখানে এক লক্ষ ভোটের কম ব্যবধানে জয়ী হয়েছে বিজেপি, সেখানে সন্দেহ রয়েছে। এক লক্ষ প্রোগ্রামিং করে রেখেছিল। আমার ধারণা, একটা প্রোগ্রামিং সেট করা ছিল ইভিএমে। কিনতু আমি তো আর ইভিএম ভেঙে ফেলতে পারি না।"
দলের সংগঠনে আমূল পরিবর্তন এনেছেন মমতা। দলনেত্রী ভাইপো অভিষেকের সমস্ত দায়িত্ব খর্ব করে দিয়েছেন। যদিও যুবর সভাপতি পদ থেকে সরান নি। তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছেন ভোটার লিস্ট ও দলের বিভিন্ন কাজে সমন্বয় সাধন করতে। শুভেন্দু অধিকারীকে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, অর্থাৎ জঙ্গলমহলের পুরো দায়িত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর থাকবে তাঁরই হাতে। সরকারি কর্মচারি সংগঠনও দেখবেন শুভেন্দু। অরূপ বিশ্বাসকে দিয়েছেন উত্তরবঙ্গের দায়িত্ব। ফিরহাদ হাকিম দেখবেন হাওড়া, হুগলি এবং দুই বর্ধমান।
পাশাপাশি, যেসব লোকসভার প্রার্থী এই নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন, তাঁদেরকেও সাংগঠনিক দায়িত্বে নিয়ে এসেছেন। ঝাড়গ্রামের রাজিত প্রার্থীকে ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি করা হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের সভাপতি করা হয়েছে কানহাইয়ালাল আগরওয়ালকে। দক্ষিণ দিনাজপুরের সভাপতি করা হয়েছে অর্পিতা ঘোষকে। হুগলিতে চেয়ারম্যান করা হয়েছে রত্না দে নাগকে।
মমতা বলেন, "আমি চেয়ারের কোন পরোয়া করি না। চেয়ার বা পদের লোভ আমার নেই। আমি আমার দলকে ভালোবাসি। মানুষকে ভালোবাসি। নিজের হাতে তৈরি দলের কাজে মন দিতে চাই। সেজন্যই আমি আজ মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চেয়েছিলাম। গত পাঁচ মাসে আমাকে কোন কাজ করতে দেওয়া হয় নি। একপ্রকার ক্ষমতাহীন মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম আমি।"